বিএনপির বেশিরভাগ নেতাই নির্বাচন করতে চায়। অথচ বিএনপি এমন একটি দল কাউকে ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার পদেও নির্বাচন করতে দিচ্ছে না।
আগামী নির্বাচনে বিএনপি যদি অংশগ্রহণ না করেন, তাহলে বহু উকিল আব্দুস সাত্তার দলটি থেকে বেরিয়ে আসবে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
সোমবার (৩১ জুলাই) দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিজ দপ্তরে বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে করিডোরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
পর্যবেক্ষকদলের মধ্যে ছিলেন ইউএসএর টেনিস ফাইন্যান্স ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান টেরি এস ইসলে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রিপোর্টার, আয়ারল্যান্ডের সিনিয়র সাংবাদিক নিক পউল, জাপানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সমাজ কর্মী ইউসুকি সুগু এবং চীনের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সমাজ কর্মী এনডি লিন।
পর্যবেক্ষকদল বলেছে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও তাদের কিছু নেতা নির্বাচনে অংশ নিতে চায় এ বিষয়ে আপনার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপির বেশিরভাগ নেতাই নির্বাচন করতে চায়, বিএনপি এমন একটি দল কাউকে ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার পদেও নির্বাচন করতে দিচ্ছে না। সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দিচ্ছে না। তাদের সবাই নির্বাচন করতে চায় সেটির বহিঃপ্রকাশ আমরা সিটি করপোরেশনে নির্বাচনে দেখেছি। উকিল আব্দুল ছাত্তারকে দেখেছি। এরকম বহু উকিল আব্দুল ছাত্তার আমাদের নির্বাচনে বেরিয়ে আসবে।
পর্যবেক্ষক দল জানতে চেয়েছেন আগামী নির্বাচন করার লক্ষ্যে সরকার কি পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং নির্বাচন কমিশনের কি পরিস্থিতি সেগিলো নিয়ে তারা আলোচনা করেছেন জানিয়ে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, আমি তাদের জানিয়েছি নির্বাচন হবে নির্বাচন কমিশনের অধিনে। নির্বাচনকালীন সময়ে বর্তমান সরকার শুধু মাত্র ফ্যাসিলেটরের (সাহায্যকারী) ভূমিকা পালন করবেন।
নির্বাচনকালীন সময়ে অর্থ্যাৎ নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণার পর সরকারের আসলে মাঠ প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও জনপ্রশাসন এবং অন্যান্য প্রতিতিষ্ঠান যেগুলো নির্বাচন কাজে ব্যবহৃত হয় তাদের ওপরে সরকারের কোনো কর্তৃত্ব থাকবে না। সরকার কোনো কর্মকর্তাকে ট্রান্সফার করতে পারে না, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে না নির্বাচন কমিশনের অনুমতি ছাড়া।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমি তাদের এগুলো বলেছি। তারা বুঝতে পেড়েছে সরকারের ভূমিকা গৌণ। তখন নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা হচ্ছে মূখ্য। নির্বাচন কমিশনে সাম্প্রতিক সময়ে দেখাতে সামর্থ হয়েছে যে তারা শক্তিশালী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। যেমন গাইবান্ধার নির্বাচন সরকারি দলের আপত্তি থাকা শর্তেও নির্বাচন বাতিল করেছে। আপনারা জানেন যে, আমাদের দেশে যে সিটি করপোরেশনের নির্বাচনগুলো হয়েছিলো সেগুলো অত্যন্ত সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ হয়েছে এবং ভোটারদের অংশগ্রহণও ৫০ শতাংশের বেশি হয়েছে। সেখানে একটি প্রার্থীর গায়ে ঘুষি লেগেছিলো,সেটি সমীচীন হয়নি। ঘুষি লাগার পর যে ঘুষি দিয়েছে তাকে এবং তার আশপাশে যারা ছিলো তাদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকা- ১৭ আসনে একজন প্রার্থীকে হেনস্তা করা হয়েছিলো। সেটি নির্বাচন কেন্দ্রের বাইরে বরিশালে ঘটনাটিও নির্বাচন কেন্দ্রের বাইরে।
তিনি বলেন, তাদের সঙ্গে আলোচনায় যে বিষয়টি উঠে এসেছে এগুলো ছোট ঘটনা, এত বড় নির্বাচনের ক্ষেত্রে খুবই কম। ফ্রান্সে ভায়োলেন্স প্রোটেস হয়, ইউরোপে প্রোটেস হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন হওয়ার পড় সেই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠে। সে তুলনায় আমাদের দেশে দুইটি ঘটনা, যেগুলো গণমাধ্যমে অনেক ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে কেউ কেউ দেখিয়েছেন। আমাদের বিরোধীদল সেগুলো নিয়ে অনেক সোচ্চার হয়েছে। একটি ঘুষিকে কেন্দ্র করে বলেছেন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে কিনা? এ বিষয়ে আমরা কথা বলেছি।
মন্ত্রী বলেন, আমার ধারণা তারা বুঝতে পেরেছে যে, বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশনের অধীনে বর্তমান সংবিধানের আলোকে একটি অবাধ সুষ্ঠু, সুন্দর, নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব। যারা এসেছিলেন তারা বিস্তৃতভাবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন।
ঢাকা-১৭ আসনে একজনকে মারধর পর ১৩ জন বিবৃতি দিয়েছিল কিন্তু শনিবারের ঘটনা নিয়ে কোনো বিবৃতি নেই এ বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখছেন জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এটি ভালো তো। দেশে কোনো কিছু ঘটলে সেটি নিয়ে বিবৃতি দেওয়া সেটি সমীচীন নয়। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে সবার সঙ্গে আলোচনা করেছেন। আমি ভারতের কথা বলি, ভারতের মনিপুরে গোলমাল হচ্ছে সেটির পর ভারতের মার্কিন রাষ্ট্রদূত শুধু একটি মন্তব্য করেছিলো এরপর ভারতের রাহুল গান্ধীসহ সব দল বলেছে, এটি তুমি বলতে পারো না, কারণ এটি আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আর আমাদের দেশে বিরোধী দল গিয়ে তাদের হাতে পায়ে ধরে কিছু একটা বলতে বলে। এটিই হচ্ছে ওদের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য।