দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: শিক্ষা মন্ত্রণালয় ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা কোর্সকে বিএসসি (পাস) সমমান মর্যাদা প্রদানের যে উদ্যোগে নিয়েছে সেটিকে স্বাগত জানিয়ে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি) এই সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়নে মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
শনিবার (৪ মে) ঢাকার কাকরাইলে আইডিইবি ভবনে সংবাদ সম্মেলনে আইডিইবি নেতারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগকে সময়োপযোগী আখ্যায়িত করে এর দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানান।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ থেকে ১৫ এপ্রিল এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের মধ্যে যারা দুই বছর বা অধিক সময়ে কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন বা কর্মের অভিজ্ঞতা আছে, তাদের বিএসসি (পাস) সমমান মর্যাদা দেওয়ার বিষয়ে সরকার একটি কমিটি গঠন করেছে। কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভারে অতিরিক্ত সচিবকে (কারিগরি) আহ্বায়ক করে ১০ সদস্যের কমিটিতে কারিগরি অধিশাখার দুইজন যুগ্মসচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের একজন যুগ্মসচিব, ইউজিসি প্রতিনিধি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স (আইইবি) প্রেসিডেন্ট, ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি) প্রেসিডেন্ট এবং উপসচিবকে (কারিগরি শাখা) সদস্য সচিব করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অপার সম্ভাবনার স্মার্ট সমৃদ্ধ বাংলাদেশের রূপকল্প বাস্তবায়নে জনশক্তির দক্ষতা উন্নয়নে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসারে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগান্তকারী উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে প্রতিক্রিয়াশীল ডিগ্রি ইঞ্জিনিয়ার ও তাদের সংগঠন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশের (আইইবি) পক্ষে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখানো হচ্ছে, সেটি অনভিপ্রেত ও অগ্রহণযোগ্য। এ ধরনের জাতি বিনাশী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার জন্য আইডিইবি সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
আইডিইবি নেতারা বলেন, ডেস্ক ও ফিল্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এ বিভক্ত দেশের প্রকৌশল কর্মাঙ্গনের সুষ্ঠু ধারাবাহিকতা বজায় রাখার স্বার্থে রাষ্ট্রীয় ব্যাপক অর্থে শিক্ষিত ডিগ্রি প্রকৌশলীদের প্রকৌশল গবেষণা, উদ্ভাবনী ও পরিকল্পনায় মনোযোগ বাড়াতে হবে। পাশাপাশি ডেস্ক ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়োজিত ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের দক্ষতা উন্নয়নে এই শিক্ষা আধুনিকায়ন করা প্রয়োজন।
সংবাদ সম্মেলন থেকে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে জনপ্রিয় করার স্বার্থে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মান ও মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিএসসি (পাস) কোর্সের সমমান মর্যাদা প্রদানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ অবিলম্বে বাস্তবায়ন, জাতীয় মেধার অপচয় রোধ ও প্রশাসনে শ্রেণি স্বার্থ দ্বন্দ্ব নিরসনে এবং রাষ্ট্রের অর্থ অপচয় রোধে প্রশাসনিক ক্যাডারে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং সনদধারীদের প্রবেশরোধে পেশা পরিবর্তনের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রীয় আইনি কাঠামোর মাধ্যমে বন্ধ করা, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের পদোন্নতির কোটা ৫০ শতাংশে উন্নীতকরণ, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের প্রাথমিক নিযুক্তিতে অন্যান্য পেশাজীবীদের ন্যায় একটি স্পেশাল ইনক্রিমেন্ট এবং পরিকল্পনা ও নকশা বিভাগে কর্মরত ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার উপ-সহকারী প্রকৌশলীদেরকে সহকারী প্রকৌশলীদের ন্যায় তিনটি স্পেশাল ইনক্রিমেন্ট প্রদান এবং ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং উত্তীর্ণদের ক্রেডিট ওয়েভার দিয়ে দুই বছরে ডিগ্রি ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করার সুযোগ প্রদানের দাবি জানানো হয়।
ঘোষিত দাবি বাস্তবায়নে সংবাদ সম্মেলন থেকে মাসব্যাপী আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচির মধ্যে ৭-১১ মে সব জেলা শাখার উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলন, ১২-১৮ মে আইডিইবি জেলা নির্বাহী কমিটির উদ্যোগে সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের বাংলাদেশ কারিগরি ছাত্র পরিষদ (বাকাছাপ), বাংলাদেশ পলিটেকনিক শিক্ষক সমিতি, পেশাজীবী অন্যান্য সংগঠন, রাজনৈতিক নেতারা ও সাংবাদিক সংগঠনসহ সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় ও জনগণকে অবহিতকরণ, ১৯-২৩ মে ঢাকায় সব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে স্ব স্ব প্রধান দপ্তরে প্রতিবাদ সভা ও শিক্ষামন্ত্রীকে স্মারকলিপি প্রদান, ২৬ মে কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় আইডিইবি ঢাকা জেলা, বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা প্রকৌশলী পরিষদ, বাকাছাপ ও সব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিল শেষে শিক্ষামন্ত্রীকে স্মারকলিপি প্রদান এবং ২৭-৩০ মে পর্যন্ত সব জেলা ও সাংগঠনিক জেলা শাখার উদ্যোগে ছাত্র শিক্ষক ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের সমন্বয়ে প্রতিবাদ সভা এবং সভা শেষে বিক্ষোভ মিছিল ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রীকে স্মারকলিপি প্রদান।
সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. শামসুর রহমান। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সভাপতি এ কে এম এ হামিদ।
এ সময় অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম আব্দুল মোতালেব, মো. আব্দুল কুদ্দুছ, মো. সিরাজুল ইসলাম, মো. ইদরীস আলী, সৈয়দ মুন্তাসীর হাফিজ, মো. গিয়াস উদ্দিন, মো. শাহজাহান কবির, মো. নাজমুল হাসান, মির্জা এটিএম গোলাম মোস্তফা প্রমুখ।