সারি সারি ১৩ জেলার বইয়ের স্টল। কোনোটি প্রদর্শনী, কোনোটি বিক্রি আবার কোনোটি শুধু প্রদর্শনীর জন্য। সচরাচর মেলার স্টলে বিভিন্ন ধরনের বই থাকলেও, ঢাকা বিভাগীয় বই মেলার ঢাকার ১৩ জেলার ১৩ স্টলে শুধু জেলা কেন্দ্রিক ও সেই জেলার লেখকের বইতে ঠাসা। অন্য স্টলগুলোর তুলনায় পাঠক-দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ছিলো এসব স্টলে।
জানা গেছে, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আট দিনব্যাপী শুরু হওয়া ঢাকা বিভাগীয় বইমেলাতে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের ২৫টি প্রতিষ্ঠানসহ বাংলাদেশের স্বনামধন্য ৬৫টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। অন্যান্য স্টলগুলো পাঠক-দর্শনার্থীদের উপস্থিতি সেই অর্থে না থাকলেও ১৩ জেলার স্টলে পাঠক-দর্শনার্থীদের উপস্থিতি কিছুটা ছিলো। সবারই আগ্রহের কেন্দ্র বিন্দুতে ছিলো জেলার ইতিহাস-ঐহিহ্য ও সেই এলাকার লেখকদের বই।
নরসিংদী জেলার বইয়ের স্টলের বইগুলো নেড়ে-চেড়ে দেখছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম। রবিউল দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমার বাসা নরসিংদী হওয়াতেই বই দেখছি। ইচ্ছে আছে কিছু বইকেনারও। সাধারণ বইমেলাতে জেলার লেখক এবং জেলা কেন্দ্রিক বই এক স্টলে থাকে না। একুশে বই মেলাতে স্টল ভেদে আলাদা বই পাওয়া যায় কিন্তু এ মেলায় সবগুলো বই এক সঙ্গে এক স্টলে একেবারে বেশ ভালোই লাগছে।
মাদারীপুর জেলা স্টলে কথা হয় আরেক দর্শনার্থী গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে। ঢাবির এই শিক্ষার্থী জানান, গতকাল সোমবার জানতে পারলাম যে বাংলা একাডেমিতে বই মেলা চলছে। সচারাচর ফেব্রুয়ারিতে একুশে বই মেলাতে আসা হয়। তবে বই তুলনামূলক কম এনেছে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানরা। তবে ঢাকা বিভাগের যে ১৩টি জেলার ১৩টি স্টল এটি মেলাতে এক নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। যারা আমরা ঢাকা বিভাগের, তারা বিভাগের ১৩ জেলার সম্পর্কে হলেও একটা ধারণা পাওয়া যাবে।
তিনি আরো বলেন, আমার কাছে বাংলা একাডেমির এই বইমেলা অনেকটা পুরো জুড়ে ঢাকা বিভাগ মনে হয়েছে৷ যেখানে বইগুলোতে বিভিন্ন জেলার ইতিহাস-ঐহিত্য-সংস্কৃতি বোঝার জন্য পর্যাপ্ত। তবে মেলা কর্তৃপক্ষ নিকট আবদেন থাকবে বইয়ের প্রদর্শনীর তুলনায় যেনো বই বিক্রি বাড়ানো উদ্যোগ গ্রহণ করা। কারণ অনেক বই পছন্দ হয়ে গেলে, বই কেনার সুযোগ থাকছে না। বলা হচ্ছে, এসব বই শুধু প্রদর্শনীর জন্য।
এদিকে বইমেলার মানিকগঞ্জ জেলার স্টলের দায়িত্বে জেলা প্রশাসনের সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা মামুন রেজা বলেন, আমরা মেলাতে ১০০ এর মতো বই এনেছি। এর মধ্যে কোনোটি বিক্রির এবং কোনোটি আবার শুধু প্রদর্শনীর জন্য।
নরসিংদী জেলা স্টলের দায়িত্বে থাকা জেলার গিরিশ চন্দ্র সেন পাঠাগারের সভাপতি শাহিনুর মিয়া বলেন, আমরা মেলাতে আমাদের জেলা ও জেলার লেখকদের নিয়ে ১ হাজারের মতো বই এনেছি। এর মধ্যে ৪২ জনের লেখকের বই রয়েছে। আমাদের এখানে সব বই বিক্রির জন্য। শুধু প্রদর্শনীর জন্য কোনো বই রাখা হয়নি। আমরা মেলা শুরু আগে থেকে জেলার লেখকের কাছ থেকে বই সংগ্রহের জন্য আহ্বান করেছিলাম। আবার অনেক লেখক নিজ দায়িত্বে তাদের বই মেলাতে দিয়ে গেছেন।
এদিকে ঢাকা জেলা বই স্টলের দায়িত্বে ছিলেন ক্যান্টনমেন্ট ভূমি অফিসের অফিস সহকারী সালাউদ্দিন নাজের বলেন, মেলাতে বিক্রির জন্য ১৬৪ এবং প্রদর্শনীর জন্য ৬০টিসহ মোট ২২৪টি বই আনা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, দর্শনার্থী-পাঠক মেলার উপস্থিতি অনেক কম। তবে আশা করছি বন্ধের দিনগুলোতে জনসমাগম বাড়বে।
প্রসঙ্গত, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহযোগিতায় এবং ঢাকা বিভাগীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র আয়োজিত গত শনিবার থেকে ঢাকা বিভাগীয় বইমেলা শুরু হয়েছে আট দিনব্যাপী এই মেলা। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বাংলা একাডেমি চত্বরে এ মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।