বাগেরহাটের কচুয়ায় বিসি ভাষা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের ১৯টি ল্যাপটপ চুরির ঘটনায় অবশেষে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
চুরির যাওয়ার তিন মাস পরে সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভুপতি রঞ্জন রায় বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে কচুয়া থানায় এই মামলা দায়ের করেন।
তবে শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বিষয়টি স্থানীয়দের মাধ্যমে গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে আসে।
কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহসিন হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ল্যাপটপ চুরির ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমরা তদন্ত শুরু করেছি। আশা করি চুরির ঘটনা উদ্ঘাটন করতে পারব।
প্রধান শিক্ষক মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, গত ২৫ জুন রাতের কোনো এক সময় ভবনের আটটি তালা ভেঙে অজ্ঞাত চোরেরা ১৯টি ল্যাপটপ নিয়ে যায়। এর মধ্যে ল্যাবের ১৭টি এবং শিক্ষকদের ব্যবহৃত ২টি ল্যাপটপ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অন্যান্য দিনের মতো ২৫ জুন রাতে বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী ফয়জুল হক বিদ্যালয় পাহারার দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু ওই রাতের কোনো এক সময় আটটি তালা ভেঙে চোরেরা কৌশলে ল্যাবের ১৯টি ল্যাপটপ নিয়ে যায়। পরদিন ২৬ জুন সকালে নৈশপ্রহরী ল্যাব এবং ভবনের তালা ভাঙা দেখে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানায়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভুপতি রঞ্জন রায় কচুয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। কিন্তু আইনি পদক্ষেপ না নিয়ে ২৬ জুন রাতে থানায় বসে নৈশপ্রহরীকে আটটি ল্যাপটপ ও ল্যাব সহকারীকে ৫টি ল্যাপটপ কিনে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিষয়টির সমাধান করার চেষ্টা করেন প্রধান শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা কমিটির লোকজন। নৈশপ্রহরী বাধ্য হয়ে জমি এবং গরু বিক্রি করে ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে ৮টি ল্যাপটপ কিনে দেন বিদ্যালয়কে।
ল্যাপটপ চুরির বিষয়টি জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, জেলা প্রশাসনের শিক্ষা ও আইসিটি বিভাগ এবং কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউকেই জানায়নি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে ঘটনার ২ মাস ২০ মাস পরে বিষয়টি জানাজানি হলে সংশ্লিষ্টদের টনক নড়ে।
এ ঘটনায় ১৬ সেপ্টেম্বর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদফতর, বাগেরহাট কার্যালয়ের প্রোগ্রামার মো. শরিফুল ইসলাম বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়।
এদিকে দায়িত্বে অবহেলা ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি গোপন রাখার অপরাধে বিসি ভাষা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ও কচুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম সাইফুল ইসলাম এবং প্রধান শিক্ষক ভুপতি রঞ্জন রায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে সুপারিশ করেছেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম ছায়েদুর রহমান।
তিনি বলেন, চুরির বিষয়টি গোপন রেখে কর্তৃপক্ষকে না জানানোয় প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি খুবই গুরুত্ব সহকারে দেখছেন। এ ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে।
ভাষা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী ফয়জুল হক বলেন, আমি ঘুমে ছিলাম এটা সত্য। কিন্তু এই চুরির সঙ্গে আমি জড়িত না। শুধু চাকরি টিকিয়ে রাখতে শেষ সম্বল জমি এবং গরু বিক্রি করে ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে ৮টি ল্যাপটপ কিনে দিতে বাধ্য হয়েছি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভুপতি রঞ্জন রায় বলেন, পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সাইফুল ইসলামের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নৈশপ্রহরী ও ল্যাব সহকারীর কাছ থেকে ল্যাপটপ কেনার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি গোপন রাখা কেন হয়েছিল এমন প্রশ্নে কোনো উত্তর দিতে রাজি হননি প্রধান শিক্ষক।
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি চুরির বিষয়টি গোপন রাখতে বলিনি। মামলা হয়েছে। মামলায় চুরির ঘটনা উদ্ঘাটন হবে।