পিকনিক বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে গাজীপুরের শ্রীপুরে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির তিন ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনার দুই দিনের মাথায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন তিনটি তদন্ত কমিটির সদস্যরা। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, বিদ্যুৎ বিভাগ, বিআরটিসি বাস এবং রিসোর্ট কর্তৃপক্ষসহ সবার দায় আছে বলে প্রাথমিকভাবে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশলী ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক জিয়াউর রহমান খান।
সোমবার শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের উদয়খালী এলাকায় সকাল ৯টা থেকে দুপুর পর্যন্ত ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি), বুয়েট এবং পল্লী বিদ্যুতের তদন্ত দলের প্রতিনিধিরা অবস্থান করেন।
আইইউটির পক্ষে অধ্যাপক রাকিব হাসান, বুয়েটের পক্ষে অধ্যাপক জিয়াউর রহমান খান এবং বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষে ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর মহাব্যবস্থাপক (জিএম) আকমল হোসেন তদন্ত দলের নেতৃত্ব দেন।
বুয়েট অধ্যাপক জিয়াউর রহমান বলেন, “আমরা জাস্ট দেখতে আসলাম। ঘটনাস্থলে এসে যা দেখলাম ভুলটা কোথায় ছিল। মাটির মায়া রিসোর্টের ব্যবস্থাপক মাসুদ ইউসুফসহ স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেছি। এ বিষয়ে তদন্ত শেষ হওয়ার পর মন্তব্য করতে পারব।”
তিনি বলেন, “সরেজমিনে গ্রামের সরু সড়ক বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ঘুরে দেখে মনে হয়েছে, গত কয়েক বছরে মাটির মায়া রিসোর্টের সড়কটি কমপক্ষে তিন ফুট উঁচু হওয়াতে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নীচু হয়ে গেছে। সড়কের সঙ্গে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন উঁচু না হওয়ায় বিআরটিসির দ্বিতল বাসটির ছাদ উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের সঙ্গে লেগে যায়।
“একটি বিষয় লক্ষ্য করেছি, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন অনেক স্থানে ঝুলে রয়েছে। আর যে স্থানে দুর্ঘটনা ঘটেছে সেখানে বিদ্যুৎ লাইন অনেকটাই ঝুলন্ত অবস্থায় দেখা গেছে। গ্রামের এই সরু সড়ক দিয়ে কীভাবে দোতলা বাসে এতগুলো শিক্ষার্থীকে নেওয়া হচ্ছিল, এটিও একটি প্রশ্ন।
“বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের উচ্চতা ১৬ ফুট হয়ে থাকলে সড়ক তিন ফুট উঁচু হয়। সড়ক তিন ফুট উঁচু হওয়ার কারণে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নীচু হয়েছে। বিষয়গুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন করা হবে।”
তবে তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পেছনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, বিদ্যুৎ বিভাগ, বিআরটিসি বাস কর্তৃপক্ষ এবং রিসোর্ট কর্তৃপক্ষসহ সবার দায় আছে বলে জানিয়েছেন বুয়েটের স্বাধীন কমিটির তদন্ত দলের প্রধান অধ্যাপক জিয়াউর রহমান।
স্থানীয় বাসিন্দা শফিক আহমেদ জানান, ঘটনার দিন ডাবল ডেকারের তিনটা বাস একসঙ্গে দাঁড়িয়েছিল। এ সময় সামনে থেকে একটি ইজিবাইক আসছিল। শেষের বাসের শিক্ষার্থী অথবা বাস চালকের সহকারী একজন লাঠি নিয়ে ইজিবাইকের দিকে এগিয়ে যান।
“ওই ব্যক্তি লাঠি নিয়ে এগিয়ে যাওয়ায় আমার আগ্রহ হয়, কোনও ঝামেলা হয়েছে কি-না? পরে সামনের গিয়ে দেখি, তিনি ইজিবাইক চালকের সঙ্গে কথা বলছেন। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। তখন পেছনের বাসের চালক হয়ত মনে করেছে, ইজিবাইকে সাইড দিতে হবে।
“পরে চালক বাস নিয়ে এগিয়ে যেতে চাইলে, পেছনের অংশ বিদ্যুতের তারের সঙ্গে লেগে স্পৃষ্ট হয়। তখন একজন ছাত্রকে পড়ে যেতে দেখা যায়। এ সময় একজন বাস থেকে তার আলাদা করে বিদ্যুৎ অফিসে কল দিলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।”
ঘটনার পরদিন রোববার পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা দুর্ঘটনাস্থলে বিপজ্জনক এরিয়া হিসেবে লাল নিশান টানিয়ে দেন। এ ছাড়া সড়কের পাশে সাতটি স্থানে লাল কাপড়ের বড় বড় নিশান টানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
শনিবার সকালে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির ৪৬০ শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকদেরকে নিয়ে বিআরটিসির ছয়টি দ্বিতল বাস এবং তিনটি মাইক্রোবাস শ্রীপুরের তেলিহাটি ইউনিয়নের উদয়খালী এলাকার মাটির মায়া রিসোর্টে বনভোজনে যায়।
পথে তাদের একটি বাস সড়কের পাশ দিয়ে যাওয়া ১১ হাজার ভোল্টের লাইনে বিদ্যুতায়িত হয়ে তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়।
নিহত শিক্ষার্থী হলেন- ফেনীর মাস্টারপাড়া এলাকার মোতাহার হোসেনের ছেলে মীর মোজাম্মেল (২৩), রাজশাহীর রাজপাড়া ডিঙ্গাবো এলাকার জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে জোবায়ের আলম (২২) এবং রংপুর সদরের ইমতিয়াজুর রহমানের ছেলে মুবতাছিন রহমান (২২)। তারা মেকানিক্যাল অ্যান্ড প্রডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।