বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার : ধারা সংশোধনীর নির্দেশনা স্থগিত করেননি আপিল বিভাগ - দৈনিকশিক্ষা

বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার : ধারা সংশোধনীর নির্দেশনা স্থগিত করেননি আপিল বিভাগ

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার সংক্রান্ত ৫৪ ধারা সংশোধন বিষয়ে দেয়া রায় স্থগিত করেনি আপিল বিভাগ। এর ফলে আইন সংশোধনের আগ পর্যন্ত কাউকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করলে তার নিকটাত্মীয় বা তার আইনজীবীকে জানানোসহ হাইকোর্টের দেয়া বেশ কয়েটি নির্দেশনা মেনে চলতে হবে পুলিশকে। 

বৃহস্পতিবার বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার সংক্রান্ত ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা ও রিমান্ড সংক্রান্ত ১৬৭ ধারা সংশোধনের নির্দেশনার বিষয়ে আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ শুনানি হয়। এদিন রাষ্ট্রপক্ষ রায়টি স্থগিতের আবেদন করলেও তা করা হয়নি। তবে, অধিকতর শুনানির জন্য রাষ্ট্রপক্ষকে অনুমতি দিয়েছে আদালত।

এর আগে, ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে ৫৪ ধারা সংশোধনের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। আইনটি সংশোধন না‌ হওয়া পর্যন্ত বেশ কয়েকটি নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয়। 

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি শুরু করেন এটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন। বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী অনীক আর হক।

নির্দেশনা‌সমূহ

ক. আটকাদেশ (ডিটেনশন) দেয়ার জন্য পুলিশ কাউকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করতে পারবে না।

খ. কাউকে গ্রেফতার করার সময় পুলিশ তার পরিচয়পত্র দেখাতে বাধ্য থাকবে।

গ. গ্রেফতারের তিন ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার ব্যক্তিকে কারণ জানাতে হবে।

ঘ. বাসা বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য স্থান থেকে গ্রেফতার ব্যক্তির নিকট আত্মীয়কে এক ঘণ্টার মধ্যে টেলিফোন বা বিশেষ বার্তাবাহকের মাধ্যমে বিষয়টি জানাতে হবে।

ঙ. গ্রেফতার ব্যক্তিকে তার পছন্দ অনুযায়ী আইনজীবী ও আত্মীয়দের সঙ্গে পরামর্শ করতে দিতে হবে।

চ. গ্রেফতার ব্যক্তিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হলে ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে কারাগারের ভেতরে কাচের তৈরি বিশেষ কক্ষে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দিতে হবে। ওই কক্ষের বাইরে তার আইনজীবী ও নিকট আত্মীয় থাকতে পারবেন।

ছ. জিজ্ঞাসাবাদের আগে ও পরে ওই ব্যক্তির মেডিকেল পরীক্ষা করাতে হবে। 

ট. পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ উঠলে ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গে সঙ্গে মেডিকেল বোর্ড গঠন করবেন। বোর্ড যদি বলে ওই ব্যক্তির ওপর নির্যাতন করা হয়েছে তাহলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ম্যাজিস্ট্রেট ব্যবস্থা নেবেন এবং তাকে দণ্ডবিধির ৩৩০ ধারায় অভিযুক্ত করা হবে।  

উল্লেখ্য, ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী এলাকা থেকে বেসরকারি ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র শামীম রেজা রুবেলকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করা হয়। ওই বছরের ২৩ জুলাই মিন্টো রোডের গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে মারা যান রুবেল।

প্রায় একই সময়ে সীমা চৌধুরী নামের এক তরুণী চট্টগ্রামের রাউজানে পুলিশ হেফাজতে ধর্ষণের শিকার হন ও মারা যান। অরুণ চৌধুরী নামের এক যুবক রাজধানীর মালিবাগ থানায় পুলিশ হেফাজতে মারা যান।

এরপর তৎকালীন সরকার রুবেল হত্যা তদন্তের জন্য বিচারপতি হাবিবুর রহমান খানের সমন্বয়ে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত শেষে কমিটি ৫৪ ও ১৬৭ ধারা সংশোধনের পক্ষে কয়েকটি সুপারিশ করে। 

এ সুপারিশ বাস্তবায়িত না হওয়ার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) হাইকোর্টে রিট করে। ওই রিট মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দের ৭ এপ্রিল এ ব্যাপারে কয়েক দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেন হাইকোর্ট।

রায়ে ছয় মাসের মধ্যে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার ও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রচলিত বিধান সংশোধন করতে নির্দেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি ওই ধারাগুলো সংশোধনের আগে কয়েক দফা নির্দেশনা মেনে চলার জন্য সরকারকে বলা হয়।

এর বিরুদ্ধে আপিলে যান রাষ্ট্রপক্ষ। আপিল আবেদনে বলা হয়, এ দুটি ধারা সংশ্লিষ্ট যে আইন রয়েছে, তা যথেষ্ট ও সঠিক। এজন্য আইন প্রণয়ন বা সংশোধনের কোনো প্রয়োজন নেই।

২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে আপিল বিভাগ সরকারের লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) মঞ্জুর করেন। তবে হাইকোর্টের ওই নির্দেশনাগুলো স্থগিত করেননি। দীর্ঘদিন পরে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ মে আপিল শুনানি শেষে ২৪ মে রায় ঘোষণা করেন আপিল বিভাগ। 

এরপর একই বছরের ১০ নভেম্বর সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটে ৩৯৬ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশিত হয়। রায়ে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার (৫৪ ধারা) নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য ১০ দফা নীতিমালা করে দেয় সুপ্রিমকোর্ট। পরে এ রায়ের পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। সে বিষয়টি আদালতে আজ শুনানি হয়।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পদত্যাগের জন্য বল প্রয়োগ করা যাবে না: শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পদত্যাগের জন্য বল প্রয়োগ করা যাবে না: শিক্ষা উপদেষ্টা গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের - dainik shiksha গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের শিক্ষায় আমূল সংস্কারের উদ্যোগ নেবো: ড. ইউনূস - dainik shiksha শিক্ষায় আমূল সংস্কারের উদ্যোগ নেবো: ড. ইউনূস মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্বে রেজাউল করীম - dainik shiksha মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্বে রেজাউল করীম শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর একদিনের বেতন ত্রাণ তহবিলে - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর একদিনের বেতন ত্রাণ তহবিলে অধ্যাপকদের অনলাইনে বদলির আবেদন শুরু ১ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha অধ্যাপকদের অনলাইনে বদলির আবেদন শুরু ১ সেপ্টেম্বর সব মাদরাসায় ওয়েবসাইট হালনাগাদের নির্দেশ - dainik shiksha সব মাদরাসায় ওয়েবসাইট হালনাগাদের নির্দেশ ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা স্থগিত শিক্ষাঙ্গনের ভদ্রতার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষাঙ্গনের ভদ্রতার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0073630809783936