বিমা ছাড়া আর সড়কে কোনো ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারবে না । বিমা ছাড়া চললে মোটরসাইকেল, বাস, ব্যক্তিগত ও অফিশিয়াল গাড়ি, ট্রাকসহ যেকোন ধরণের যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে পুলিশ। জরিমানা গুনতে হবে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত।
গত সোমবার এমন সব ধারা যুক্ত করে আইন সংশোধনের জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে চিঠি পাঠিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। সূত্রগুলো জানায়, আইন সংশোধন হতে তিন থেকে চার মাস সময় লাগতে পারে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী গতকাল মঙ্গলবার রাতে মুঠোফোনে বলেন, ‘চিঠি পেয়েছি। আজ আমি বিষয়টি নিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে কথা বলব। এরপর বাকি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
সড়কে যান চলাচলে আগেও বিমা করা বাধ্যতামূলক ছিল। তবে ২০১৮ খিষ্টাব্দে আইন করে তা তুলে দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১ মার্চ অনুষ্ঠিত জাতীয় বিমা দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিমা ছাড়া যাতে কোনো যানবাহন চলাচল করতে না পারে, সে জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী ওই দিন বলেছেন, ‘আমরা এ ব্যাপারে দেখব যে যথাযথ বিমা ছাড়া সড়কে কোনো যানবাহন যেন না চলে। এ ব্যাপারে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যকেই আইন সংশোধনের ভিত্তি হিসেবে নেওয়া হয়েছে বলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সূত্রগুলো জানায়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ ব্যাপারে আইন সংশোধনের প্রস্তাব দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি সারসংক্ষেপ পাঠালে প্রধানমন্ত্রী তাতে হুবহু অনুমোদন করেন বলে সূত্রগুলো জানায়। সারসংক্ষেপে সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮–এর ধারা সংশোধনের যুক্তি হিসেবে বলা হয়, বিশ্বের কোনো দেশই বিমা ছাড়া সড়কে কোনো যানবাহন চলাচল করে না।
বিদ্যমান সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮–এর ৬০ ধারার অধীনে যাত্রী বা মোটরযানের বিমা নিয়ে চারটি উপধারা আছে। একটি উপধারায় বলা আছে, কোনো মোটরযানের মালিক বা প্রতিষ্ঠান ইচ্ছা করলে তাঁর মালিকানাধীন যেকোনো মোটরযানের জন্য যে সংখ্যক যাত্রী পরিবহনের জন্য নির্দিষ্টকৃত, তাঁদের জীবন ও সম্পদের বিমা করতে পারবে।
বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সভাপতি শেখ কবির হোসেন বিদেশে থাকায় এ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে সংগঠনটির প্রথম সহসভাপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিমা ছাড়া রাস্তায় গাড়ি চলাচলের সুযোগ বিশ্বের কোথাও নেই। ২০১৮ সালে সড়ক পরিবহন আইনটি পাস হওয়ার পর থেকেই বিআইএর পক্ষ থেকে আমরা সরকারকে এ কথা বলে আসছিলাম। আইনটি শিথিল হওয়ার কারণে একদিকে যান ব্যবহারকারী মানুষ ও বিমা খাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলার পর এখন আইন সংশোধন হচ্ছে জেনে ভালো লাগছে।’
দেশের সড়ক ও মহাসড়কে চলাচলকারী বিভিন্ন ধরনের মোট যানবাহন ৫৬ লাখ ৬১ হাজার ৪১৮টি। এ হিসাব ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে জানিয়েছে, বিমা করা বাধ্যতামূলক না থাকায় এগুলো থেকে প্রতিবছর কর ও মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বাবদ ৮৪৯ কোটি টাকা ও স্ট্যাম্প ডিউটি বাবদ ২৮ কোটি টাকা অর্থাৎ ৮৭৭ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।