শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষা হচ্ছে আলো, মুক্তির দিশারী। শিক্ষাবিহীন মানুষের জীবন অন্ধকারে ঢিল মারা এই জাতীয় কথাগুলো আমার জন্মাবধি থেকে শুনে আসছি। শিক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে বিশ্বের সবকটি দেশ উন্নতির শিখরে আরোহণ করছে আর অন্যদিকে আমাদের দেশে শিক্ষাকে পুঁজি করে একশ্রেণির মানুষের আঙুল ফুলে কলাগাছে রূপান্তরিত হচ্ছে। শিক্ষা থেকে সেবার মানসিকতা উবে গিয়ে ব্যবসায়িক মনোবৃত্তিতে এই সেক্টরের পরিধি দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে। আমাদের মতো অনুন্নয়নশীল দেশে শিক্ষার বিষয়টিকে যেখানে অধিকতর প্রাধান্য দেয়ার কথা, সেখানে শিক্ষা সেক্টর পুরোদমে অবহেলিত।
দেশকে সুশিক্ষার মধ্যে দিয়ে উন্নত করতে চাইলে প্রয়োজনে ভর্তুকি দিতে হবে। মনে রাখতে হবে শিক্ষা ছাড়া কোনো দেশ-জাতি-সম্প্রদায় এগিয়ে যেতে পারে না। আজকে আমরা দেখতে পাচ্ছি দেশের সবকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যবসায়িক মনেবৃত্তি ধারণ করছে। উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর স্নাতক-স্নাতকোত্তর শিক্ষা গ্রহণ করতে গিয়ে পরিবার থেকে যেভাবে টাকার শ্রাদ্ধ করা হয় তা খুবই মর্মান্তিক। এ থেকে অবশ্যই অন্তর্বর্তী সরকারকে পরিবর্তন আনতে হবে। ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক শ্রেণির ভর্তির নির্দেশিকা জারি করেছে যেখানে ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করেছে।
অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও জারি করবে। তাদেরকে মনে রাখতে হবে এটি একটি রাষ্ট্রিয় দায়িত্ব। শিক্ষা হচ্ছে সবার অধিকার। ভর্তি ফরম বিতরণে কেনো এতো এতো টাকা নেয়া হবে। কেনো সেশন ওয়ারি বিশাল অংকের টাকা গুনতে হবে। এটি কি শিক্ষার সঙ্গে প্রতারণা নয়? বৈষম্য নয় কি? সরকারি-বেসরকারি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিক্যালে ভর্তি ফি, সেশন ফি একটি সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা উচিত। বিগত রাজনৈতিক সরকারের সময় ইচ্ছেমতো করলেও আমি মনে করি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের এই সময়ে ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে নয়ছয় করতে দেয়া উচিত হবে না।
বিগত অনেক বছর থেকে দেখে আসছি দেশের ৪/৫ টি বিশ্ববিদ্যালয় অভিন্ন পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের ক্ষেত্রে শুধু সময়ক্ষেপণ করছে। এবারো তারা এক হতে পারলো না। এই ব্যাপারটি দেশের উচ্চশিক্ষা প্রত্যাশীদের জন্য বড় একটি দুঃসংবাদ।
বিষয়টি শিক্ষার্থি ও অভিভাবকবৃন্দ কেউ ভালো চোখে দেখছে না। দীর্ঘ সময়ক্ষেপণ করা অনেকে দুরভিসন্ধি-অবহেলা মনে করেছেন। পরীক্ষা পদ্ধতিকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার যে অপচয় হয়, এই অপচয় রোধে আর কত বছর অপেক্ষা করতে হবে। আমরা প্রত্যেকে জানি, দেশকে এগিয়ে নিতে হলে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। সমগ্র বিশ্বব্যাপী শিক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে সময়োপযুগী কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়। অন্যান্য দেশের শিক্ষাদান পদ্ধতির সঙ্গে আমাদের দেশের শিক্ষা পদ্ধতিতে আছে বিস্তর ফারাক। পরিচালনা পদ্ধতিতে আছে বড় ধরনের গাফিলতি। আছে ভর্তি ফি, সেশন ফি, সেমিস্টার ফি নেয়ার ক্ষেত্রে হযবরলতা।
সঠিক তদারকি না থাকার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খেয়ালখুশি মতো প্রতিবছর যথেচ্ছভাবে বিভিন্ন রকমের ফি আদায় করছে। সরকার মাধ্যমিক ও কলেজ শাখায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক-স্নাতকোত্তর পর্যায়ের বেসরকারি উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিরাজ করছে চরম বিশৃঙ্খলা। বেসরকারি মেডিক্যাল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার কর্তৃক সহনীয় পর্যায়ে সেমিস্টার ফি নির্ধারণ করে দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থায় নৈরাজ্যতা দূর করতে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সেবার মানসিকতার পরিবর্তে ব্যবসায়িক মনেবৃত্তি বাড়তে দিলে অদূর ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার ঝুঁকি বাড়তে থাকবে। আজকের লেখাটি মূলত উচ্চশিক্ষা গ্রহণ প্রত্যাশী শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের দুশ্চিন্তাকে কেন্দ্র করে। একজন শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর বিভিন্ন মেডিক্যাল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষার আবেদন করতে গিয়েই অনেকটা ঝরে পড়ে। তার কারণ, সরকারি/বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে হারে ভর্তির আবেদন ফি ধার্য করা হয়, ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বহু অসচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীরা অংশ গ্রহণ করতে পারছেনা। বর্তমানে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় মারাত্মক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থনৈতিক সংকটের সময় দেশের গুটিকয়েক বিশ্ববিদ্যালয় আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করা কোনোভাবে সমীচীন নয় ।
এইচএসসি শেষ করে শিক্ষার্থীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তির জন্য। বাংলাদেশে এই ভর্তিযুদ্ধ একটি জটিল প্রকৃতির। তার ওপর আছে আসন সংকট। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগে শিক্ষার্থির অভিভাবকরা অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত হয় পড়েন আবেদন ফরমের ফি জমা দিতে দিতে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষগুলো আলাদা আলাদাভাবে বড় অঙ্কের ফি নিয়ে থাকে।
পরীক্ষার ফলাফল যাই হোক না কেনো, আমি মনে করি ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা একজন শিক্ষার্থীর নৈতিক অধিকার। অথচ যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অর্থনৈতিক দুরাবস্থার কারণে প্রতিবছর অনেক শিক্ষার্থীকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা থেকে দূরে থাকতে হয়। তাই সঙ্গত কারণে ভর্তি পরীক্ষা ফি মুক্ত করা দরকার। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের একজন শিক্ষার্থী দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে গিয়ে আসা-যাওয়া, থাকাতেই যেখানে হাজার হাজার টাকা টাকা অপচয় করতে হয় সেখানে অতিরিক্ত ভর্তি ফি একজন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের জন্য বিশাল বোঝা নয় কি?
মেডিক্যাল, বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং লেভেলে পড়ার ক্ষেত্রে যোগ্যত্য থাকা স্বত্ত্বেও অসচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীরা অতিরিক্ত ফি পরিশোধের কারণে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি থেকে ছিটকে পড়ছে। এ বিষয়ে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিবেচনা আশা করছি।
দেশের স্বনামধন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনেকের পড়ার ইচ্ছা থাকে কিন্তু অর্থনৈতিক দীনতায় তারা সে আশা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ জাতীয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু সরকার নিয়ন্ত্রণ করে, শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত সবক’টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি গুচ্ছতে রূপান্তর করে সব শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয়া। সেই সঙ্গে ভর্তির আবেদন ফি তুলে নেয়া, নয়তো একটি সহনীয় পর্যায়ে নির্ধারণ করা। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃপক্ষ বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বেশ ক’বছর ধরে একটি গুচ্ছতে একত্রিভূত করে পরীক্ষা নেয়ার জন্য অনুরোধ জানালেও সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের একগুয়েমী অবস্থার কারণে তা কার্যকর করতে পারেনি।
যেখানে ডিজিটাল পদ্ধতির সহায়তায় অনেক কঠিন কাজকে সহজ করে দিচ্ছে সেখানে এ দুরাবস্থা থেকে শিক্ষার্থি ও অভিভাবকরা উত্তরণ চায়। দেশে মেডিক্যালের ভর্তি পরীক্ষা একসঙ্গে হতে পারলে এই গুটি কয়েক বিশ্ববিদ্যালয়ে একসঙ্গে ভর্তি পরীক্ষা হতে বাঁধা কোথায়? এভাবে বছরের পর বছর কেনো শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দুশ্চিন্তায় থাকতে হবে।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন অনুমোদিত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫৪ টি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত সংখ্যা ১১২ টি। এছাড়া ৩টি আছে আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়। বেশ কয়েক বছর ধরে দেশে মেডিক্যাল কলেজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে অভিন্ন পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন করার ফলে অল্প খরচে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা যোগ্যতার ভিত্তিতে যে যেখানে পড়ার সুবিধা পাচ্ছেন। দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যেখানে একসঙ্গে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বছরের পর বছর কালক্ষেপণ কিসের আলামত! এ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে একেক ইউনিটে ভর্তি ফরম পুরণ আবেদনে এক থেকে দেড় হাজার টাকা ফি ধার্য করা হয়েছে এটি শুধু অযোক্তিক নয় অনৈতিকও বটে।
এর একটা অবশ্যই বিহিত ব্যবস্থা করা জরুরি। শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই অবগত আছেন শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা যাচাই করে নিতে একজন শিক্ষার্থীকে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অংশগ্রহণ করতে হয়। পছন্দের বিষয় ও প্রতিষ্ঠান খুঁজে পেতে একজন শিক্ষার্থীকে কম করে হলেও ৮ থেকে ১০ টি প্রতিষ্ঠানের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। উদাহরণ স্বরূপ, কক্সবাজার-টেকনাফ কিংবা পঞ্চগড়-তেঁতুলিয়া থেকে একজন ছেলে বা মেয়ে শিক্ষার্থী ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী গিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে হলে কতটাকা রাস্তায় ফেলে দিতে হয়। এই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যদি একজন করে অভিভাবক থাকেন তাহলে কী পরিমাণ খরচ পরে। যদি একেকটি পরীক্ষায় আট থেকে দশ হাজার টাকা খরচ হয় তাহলে আট/দশটি ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে খরচ গুণতে হয় ৮০/৯০ হাজার টাকা। প্রতি বছর ভর্তি পরীক্ষা ঘনিয়ে আসলে দেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থী-অভিভাবক এক ঘোর অমানিশায় দিন কাটান। ভর্তি পরীক্ষা সহজীকরণ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় শোরগোল পড়ে যায়। কোনোরকমে পরীক্ষাটা নিয়ে ফেলতে পারলে আলোচনাও শেষ, জোর তদবিরও শেষ হয়ে যায়। আবার পুরো একটি বছর আলোচনা নিশ্চুপ হয়ে পড়ে।
এভাবে বছরের পর বছর আর কতো শিক্ষার্থী তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন কেউ কী বলতে পারেন? বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও শিক্ষকদের উদ্দেশে বলতে চাই শিক্ষার্থী/অভিভাবকদের এই অভিযোগটি আমলে নেয়ার কী কোনোরকম সুযোগ নেই? আপনারা কী পারেন না, একটু সদয় হয়ে সব শিক্ষার্থীর জন্য এই সুযোগটি করে দিতে? এবছর আমার সন্তান উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, আগামী বছর আপনার সন্তান কিংবা কাছের দূরের অনেক নিকট আত্মীয়ের সন্তানও অর্থনৈতিক কারণে ভর্তি পরীক্ষা দেয়া থেকে বঞ্চিত হতে পারে।
অতএব শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি কর্তৃপক্ষ ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের সম্মিলিত উদ্যোগে এই বিষয়ে যদি একটি সমাধানে আসা যায়, তাহলে অনেক শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়া থেকে ঘুরে দাঁড়াবে। আর দেরি না করে সরকার, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির উচিত এই বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণে কঠোর হওয়া। যেকোনো উপায়ে ভর্তি প্রক্রিয়া শিথিল, সেমিষ্টার ফি, ভর্তি ফি আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্ধারণ করে দিলে শিক্ষাক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আসবে বলে অনেকের ধারণা। এর ফলে দেশের শিক্ষাপদ্ধতি নতুন গতি ফিরে পাবে বলে আমার দৃঢ় প্রত্যাশা।
লেখক: সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক