বিশ্ব পর্যটন দিবস মানেই পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত মানুষদের কাছে এক মহা উৎসবের নাম। বিশ্ব পর্যটন দিবস ২৭ সেপ্টেম্বর সারা বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে থাকে। জাতিসংঘের অধীনস্থ বিশ্ব পর্যটন সংস্থার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে সকল সদস্য দেশে এটি পালিত হয়ে আসছে। দিবসটির প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও পর্যটন কেন্দ্রের সঙ্গে সেতুবন্ধন গড়ে তোলা। এ ছাড়া, পর্যটনের ভূমিকা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক উপযোগিতাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া এ দিবসের অন্যতম লক্ষ্য।
প্রতিবছর পর্যটন দিবস উৎযাপনের জন্য একটি থিম বা প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারিত হয়। সেই থিমকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী দিনটিকে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, সেমিনার, সিম্পোজিয়ামের মাধ্যমে উৎযাপন করা হয়। ২০২8 খ্রিষ্টাব্দে বিশ্ব পর্যটন দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘Tourism and Peace’! আয়োজক দেশ হিসেবে নির্বাচত হয়েছে জর্জিয়া।
বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, প্রচার ও প্রসারের জন্য বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম বিভাগ, আটাব, টোয়াবসহ বিভিন্ন পর্যটন সংগঠন বিভিন্ন র্যালি, অনুষ্ঠান, সেমিনার, সিম্পোজিয়ামের মাধ্যমে বিশ্ব পর্যটন দিবস উদযাপন করে থাকে। এই দিনে উৎসবমুখর ভাব থাকে পর্যটনপ্রেমীদের মাঝে।
এই বছর বিশ্ব-শান্তি প্রতিষ্ঠায় পর্যটনের ওপর ব্যাপক জোড় দেয়া হয়েছে। শুধু বিশ্ব-শান্তি প্রতিষ্ঠা নয় পর্যটন মাধ্যমে জ্ঞান প্রতিপালন, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সীমান্ত সম্প্রীতি বৃদ্ধি বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে আন্তর্জাতিক পর্যটকের সংখ্যা ছিলো ২৫ মিলিয়ন বর্তমানে এর সংখ্যা ১২০ কোটি এবং ২০৩০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ ১৮০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। বিশ্ব-অর্থনীতিতে পর্যটন চোখে পরার মতো অবদান রাখছে। আগামী দিনগুলোতে এই ধারা অব্যাহত থাকবে। বিশ্ব-অর্থনীতিতে ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজমের অবস্থান চতুর্থ স্থানে (WTTC)।
কীভাবে পর্যটনের মাধ্যমে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায় সেই বিষয়গুলো নিয়ে কিছু কথা বলি। বিশ্ব-শান্তি প্রতিষ্ঠায় ট্যুরিজমের চেয়ে শুদ্ধতম উপাদান খুঁজে পাওয়াটা কঠিন এই সময়ে। পৃথিবীতে বহু ইজম শান্তি প্রতিষ্ঠায় ফেল করেছে, এখন একমাত্র যে ইজম বাকি আছে তা হলো ট্যুরিজম। যেখানে কোনো হিংসা বিচ্ছেদ নেই। আছে ভালোবাসা, সম্প্রীতি, সহযোগিতা, জ্ঞান আদান-প্রদান, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিনিময়, সমঝোতা। পর্যটনের সঙ্গে জড়িত মানুষেগুলো কখনোই দাঙ্গা-হাঙ্গামা পছন্দ করে না। কারণ, তারা প্রকৃতিকে ভালোবাসে, প্রকৃতির মাঝে মিশে থাকা মানুষদের জীবনপ্রণালী উপভোগ করতে ছুটে আসেন, সভ্যতার বিকাশ নিয়ে ভাবে বা দেখতে ভালোবাসে, অজানাকে জানতে চায়, এক অবস্থান থেকে অন্য অবস্থানের নতুন প্রকৃতিকে নিজ চোখে দেখতে আনন্দবোধ করেন, প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্রতার স্বাদ নিতে পছন্দ করেন, মানুষকে সেবা দিয়ে থাকে পরম যত্নে। পর্যটন মানুষকে টেনে নিয়ে যায় অন্য এক জগতের দিকে, যে জগতের সৃষ্টি আনন্দ, বিনোদন ও প্রশান্তিকে কেন্দ্র করে।
যে জগতে আছে পরম আনন্দ, ভ্রাতৃত্ববোধ, ভালোবাসা, সহানুভূতি, একে অপরের প্রতি সহযোগী মনোভাব, সম্প্রীতির বন্ধন, অন্যের সঙ্গে নিজেদের সময়গুলোকে মিলিয়ে ভালো কিছু সময় কাটানো, অভিজ্ঞতা আদান-প্রদান, নতুন পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়ানো, হরেক রকমের খাবারের সঙ্গে পরিচয় ও খাবার খাওয়া, নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিতি ও বন্ধুসুলভ সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয়গুলো এজগতের মানুষগুলোকে অন্যদের থেকে আলাদা করে।
পর্যটনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সকলেই মানুষকে হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা দিয়ে সাদরে গ্রহণ করেন। তারা মানুষকে ভালোবাসতে জানে পরম শ্রদ্ধায়। মানুষকে খুশি রাখার জন্য নিজের সুখটুকু বিলিয়ে দিয়ে হাসিমুখে সেবা দিয়ে থাকেন এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত সেবকেরা। যাদের কাছে অতিথি সেবাই পরম ধর্ম। যেখানে অশান্তির কোনো স্থান নেই আছে শুধু প্রশান্তির ছায়া। শান্তির পতাকাবাহী শিল্প যার নাম পর্যটন যেখানে অশান্তির কোনো সু্যোগ নেই। ট্যুরিজম বিকাশের মাধ্যমে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সভ্যতার ইতিবাচক পরিবর্তনের সঙ্গে জ্ঞানের প্রতিপালন হোক এটাই হবে আমাদের প্রত্যাশা। পর্যটনের মাধ্যমে সকল মানুষ হোক শান্তির কান্ডারি।
লেখক: অ্যাসিস্টেন্ট ম্যানেজার, সেবার বাংলাদেশ