দৈনিক শিক্ষাডটকম, গাজীপুর : গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে শুরু হতে যাচ্ছে তাবলীগ জামায়াতের সবচেয়ে বড় জমায়েত বিশ্ব ইজতেমা।
আগামী ২ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে বিশ্ব ইজতেমা। এবারও দুই পর্বে হবে ইজতেমা। ২ থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি– প্রথম পর্বে মাওলানা জুবায়েরপন্থিরা; চার দিন বিরতি দিয়ে ৯ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্বে জড়ো হবেন মাওলানা সা’দের অনুসারীরা। অনুকূল আবহাওয়া থাকায় এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি জমায়েত আশা করছেন আয়োজকরা।
গতকাল বুধবার সরেজমিন দেখা যায়, মাঘের তীব্র শীত উপেক্ষা করে তুরাগ তীরে স্কুল-কলেজ, মাদরাসার শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছেন। তাবলিগের শীর্ষ মুরব্বিদের নির্দেশনায় জামাতভুক্ত মুসল্লিরা ময়দান প্রস্তুতের বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ ময়দানে নামাজ পড়ার জামাতের দাগ টানছেন, কেউ সেলাই করছেন প্যান্ডেলের চট। মাঠের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে প্রস্তুত হচ্ছে চটের কামরা। হচ্ছে মঞ্চ নির্মাণও।
স্বেচ্ছাসেবীরা জানিয়েছেন, ইজতেমা ময়দানে খুঁটি বসানো প্রায় শেষ। বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, সাউন্ড সিস্টেমসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাবলিগ জামাতের লোকজন ও সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সংশ্লিষ্টরা কাজ করছেন। ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকার আনোয়ারুল ইসলাম ১৫০ সঙ্গী নিয়ে কাজ করতে এসেছেন ময়দানে। তিনি বললেন, আল্লাহর মেহমানরা ইবাদত-বন্দেগি করতে আসবেন। তারা যেন সুন্দরভাবে ইবাদত করতে পারেন, সেদিকে খেয়াল রেখে কাজ করা হচ্ছে। বিদেশি মেহমানদের সুন্দর পরিবেশ দিতে কামলা পরিষ্কার করছেন বলে জানান টঙ্গীর দত্তপাড়া এলাকার মাজহারুল ইসলাম।
ইতোমধ্যে ৭৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। ইজতেমা শুরুর আগেই বাকি কাজ শেষ হবে বলে জানালেন মাওলানা জোবায়ের অনুসারী মিডিয়া সমন্বয়কারী মুফতি জহীর ইবনে মুসলিম। তিনি বলেন, এবার মুসল্লিদের উপস্থিতি বেশি হবে ধরে নিয়েই ময়দান প্রস্তুত করা হচ্ছে।
বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে জেলা প্রশাসন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেছেন, দুই পর্বের ইজতেমা সফলে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাকে নিয়ে একাধিক প্রস্তুতিমূলক সভা করা হয়েছে। মুসল্লিদের সার্বিক নিরাপত্তাসহ সব বিষয় সমন্বয় করা হচ্ছে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল বলেছেন, ইজতেমা ময়দানের চারপাশে সরকার তিন তলা বিশিষ্ট ৩১টি টয়লেট ভবন করেছে। অজুখানা পাকা ছাড়াও কয়েক কোটি টাকা খরচ করে ময়দানের নিচু জায়গায় মাটি ফেলা হয়েছে। মুসল্লিদের ভোগান্তি এড়াতে ময়দানে নানা উন্নয়নমূলক কাজ অব্যাহত রয়েছে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জায়েদা খাতুনের উপদেষ্টা সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, ময়দানে প্রয়োজন অনুযায়ী ব্লিচিং পাউডার ও ফগার মেশিনে মশক নিধন কার্যক্রম চলছে। নিয়মিত পানি ছিটানো হচ্ছে। মুসল্লিদের যে কোনো সমস্যা সমাধানে সিটি করপোরেশনের টিম কাজ করবে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, এবার ইজতেমার নিরাপত্তায় সাড়ে সাত হাজার পুলিশ মোতায়েন থাকবে। সিসিটিভি ক্যামেরা, ওয়াচ টাওয়ার ও রুফটপ থেকে পুরো ইজতেমা ময়দানে নজরদারি করা হবে। এ ছাড়া স্পেশালাইজড টিমসহ প্রতিটি খিত্তায় সাদা পোশাকে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য দায়িত্বে থাকবেন। প্রতি খিত্তায় দুটি করে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র রাখা হবে। তুরাগ নদে থাকবে নৌ টহলও।