বিশেষ কৌশলে কারসাজি করে পাশাপাশি আসন ফেলে পরীক্ষার হলে যাতে চাকরিপ্রার্থীরা দেখাদেখি করে পরীক্ষা দিতে না পারেন, সে বিষয়ে আরও কঠোর হয়েছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রতিটি পরীক্ষাতেই এ জন্য বিশেষ কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পিএসসি। পিএসসি বলছে, বিসিএস পরীক্ষায় প্রার্থীদের পাশাপাশি আসন না পড়ার বিষয়টি তারা শতভাগ নিশ্চিত করেছে। মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন মোছাব্বের হোসেন।
প্রতিবেদনে আরো জানা যায়, পিএসসি সূত্র জানায়, একটা সময় ছিল যখন কিছু চাকরিপ্রার্থীরা প্রিলিমিনারির আবেদনের পর গভীর রাতে একই সঙ্গে টাকা জমা দিতেন। এতে তাঁদের রেজিস্ট্রেশন নম্বর পাশাপাশি হতো। ফলে দেখা যেত প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় তাঁদের সিট একই রুমে পড়ত। এই সুযোগে চাকরিপ্রার্থীরা দেখাদেখি বা কথা বলে বিশেষ সুবিধা নিতে পারতেন। এই অবস্থার অবসান ঘটেছে বলে জানিয়েছে পিএসসি।
পিএসসি জানায়, পিএসসির অনুসন্ধান দল পাশাপাশি বসা ও দেখাদেখিকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেছে। এরপর পিএসসির অনুসন্ধান দল পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশনের পার্টনার টেলিটকের সঙ্গে দফায় দফায় মিটিং করেছে। পরে একটি বিশেষ কৌশল নিয়েছে পিএসসি। এই কৌশল অনুসারে কেউ আর চাইলেও পাশাপাশি সিট বসাতে পারবেন না।
বিসিএসের ফরম পূরণের পর দলবেঁধে টাকা জমা দিলেও কোনো প্রার্থীর সিট আরেকজনের পাশেই পড়বে—এই নিশ্চয়তা নেই। কেননা টাকা জমা দেয়ার পর তা কয়েক দফা উলটপালট করে পিএসসি। পিএসসি জানায়, অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে পিএসসি জিকজ্যাক পদ্ধতি চালু করেছে। তাতে এমনভাবে রেজিস্ট্রেশন ওলটপালট করা হয়, তাতে পাশাপাশি সিট আর পড়বে না। এটি শতভাগ নিশ্চিত করা হয়েছে।
পিএসসির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘একজন পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দেবেন, মেধার স্বাক্ষর রেখে চাকরি নেবেন। কিন্তু তা না করে কিছু অসাধু প্রার্থী গভীর রাতে একসঙ্গে টাকা জমা দিয়ে একসঙ্গে এক হলে সিট ফেলে অনৈতিক সুবিধা নিয়েছে। আমরা সেটি চিহ্নিত করেছি ও ব্যবস্থা নিয়েছি। এখন এমনভাবে সফটওয়্যারের সাহায্যে সিটপ্ল্যান করা হয়, তাতে পাশাপাশি বসে কথা বলার সুযোগ নেই।’
পিএসসি একজন সদস্য আরও জানান, ‘অনেকে লিখিত পরীক্ষার হলে এসে পাশের সিটের প্রার্থীর সঙ্গে বন্ধুত্ব করেন। একে অপরকে সাহায্য করার পরিকল্পনা করেন। দেখাদেখির চেষ্টা করেন। আমরা তাতেও ব্যবস্থা নিয়েছি। পরীক্ষা মাসে পরীক্ষা এই নীতিতে আমরা কাজ করি। পরীক্ষার হলে ঘাড় ঘুরালে বা দেখাদেখি করলে সঙ্গে সঙ্গে খাতা নিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা দেয়া আছে। এটি ইতিমধ্যে প্রয়োগ করা হচ্ছে। এ ছাড়া পরীক্ষকদের আরও কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেয়া আছে। পরীক্ষার সময়টিতে তাঁরা যেন এক পরীক্ষক ও আরেক পরীক্ষক কথা না বলেন, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া আছে। সব মিলে পিএসসি কঠোর হয়েছে এসব বিষয়ে।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসির চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, ‘বিসিএসে এমন ব্যবস্থা চালু হয়েছে চালাকি করে পাশাপাশি সিট ফেলানোর দিন শেষ। এ ছাড়া পরীক্ষা মানে পরীক্ষা এই নীতিতে দেখাদেখি কথা বলা সম্পূর্ণ নিষেধ। ঘাড় ঘুরালেই খাতা নিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আমরা চাই সিভিল সার্ভিসে মেধাবীরা আসুক।
সেটি নিশ্চিত করার কাজ করছি। যে প্রার্থী অপ কৌশল অবলম্বন করবে, দেখাদেখি করে চাকরি নিতে চায় তিনি চাকরি জীবনেও কতটা সৎ থাকতে পারবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকে। তাই যাঁরা পরীক্ষায় অংশ নেবেন, তাঁরা এসব বিষয়ে সতর্ক থাকবেন বলে আশা করছি।’