আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের এক মাস পূর্তিতে ‘শহীদি মার্চ’ কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এই পদযাত্রা থেকে ছাত্র-জনতার মুখ থেকে ফের উচ্চারিত হয়েছে বৈষম্যবিরোধী নতুন বাংলাদেশ গড়ার শপথ।
লাখো ছাত্র-জনতার এই শহীদি পদযাত্রায় প্রতিধ্বনিত হয়েছে মু্ক্তির শ্লোগান, মুক্ত বাংলাদেশের শ্লোগান। মুখে মুখে উচ্চারিত হয়েছে শহীদ আবু সাঈদ, মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধসহ গণআন্দোলনে নিহত অনেকের নাম।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকার রাজপথে এ পদযাত্রায় অংশ নেয় লাখো জনতা। এতে পতাকা উড়িয়ে মিছিল নিয়ে এগিয়ে যান তারা। শহীদদের ছবিযুক্ত প্ল্যাকার্ড নিয়ে যুক্ত হয়েছে বহু মানুষ। একটি প্ল্যাকার্ডে দেখা যায়, ‘একজন রিকশা চালকের সন্তানও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখেবে’-লেখা রয়েছে।
এসময় ছাত্র-জনতা শ্লোগান দেয়, ‘তুমি কে আমি কে/ বাঙালি, বাঙালি’, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধর রক্ত/ বৃথা যেতে দেব না’, ‘আমার ভাই কবরে/ খুনি কেন বাহিরে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে/রক্তে আগুন লেগেছ ‘, ‘বিচার চাই, বিচার চাই/খুনি হাসিনার বিচার চাই।'
এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে পদযাত্রাটি শুরু হয়। পরে নীলক্ষেত, সায়েন্স ল্যাব, কলাবাগান, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, সংসদ ভবনের সামনে দিয়ে, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার ও শাহবাগ হয়ে আবার রাজু ভাস্কর্য দিয়ে শহীদ মিনারে এসে শেষ হয়।
পদযাত্রায় অংশ নেন তেজগাঁও কলেজ, মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, নূরজাহান বেগম উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি কমার্স কলেজ, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা ইমপেরিয়াল কলেজ, অতীশ দীপঙ্কর বিশ্ববিদ্যালয়, খিলগাঁও মাকজালুল উলুম মাদরাসাসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়।
কর্মসূচি শুরুর আগে রাজু ভাস্কর্যে এক বক্তব্যে সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, আজ থেকে এক মাস আগে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে যে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি, সেই বাংলাদেশ পাওয়ার এক মাস পূর্ণ হয়েছে আজ। কিন্তু এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আমরা আমাদের হাজারেরও বেশি ভাইকে হারিয়েছি, যারা শহীদ হয়েছেন। নিহতদের স্মরণে এই ‘শহীদী মার্চ’ কর্মসূচি পালন করছি আমরা।
সারজিস আরো বলেন, আমরা অসংখ্য ভাইকে আহত অবস্থায় এখনো হাসপাতালে দেখতে পাই। অনেকের হাত নেই, অনেকে তাদের পা হারিয়েছেন। অনেকে চোখ হারিয়েছেন। যে ক্ষতি তাদের পরিবারের হয়ে গেল, এই পার্থিব দুনিয়াতে সেটি পূরণ করা সম্ভব নয়। কিন্তু আমাদের মনে হয়েছে আমরা আমাদের অবস্থান থেকে দাঁড়িয়ে ন্যূনতম শ্রদ্ধা জানাতে পারি। দোয়া করতে পারি। সে জায়গা থেকে আজকে আমরা এই শহীদি মার্চের আয়োজন করেছি।
প্রসঙ্গত, ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেশত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। একাধিক গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায় আন্দোলনের মধ্যে ১৬ জুলাই থেকে ১১ আগস্টের মধ্যে সাড়ে ছয়শ মানুষের প্রাণ হারিয়েছে।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস আওয়ামী লীগ সরকার পতনের এক মাস পূর্তিতে একটি বার্তা দিয়েছেন।
বার্তায় তিনি বলেছেন, আমাদের তরুণ বিপ্লবীরা দেশের মানুষের মনে নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন জাগিয়ে দিয়েছে তা পূরণে আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। শহীদদের আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তন করতে চাই। এক নতুন যুগের সূচনা করতে চাই।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা সবাই প্রতিজ্ঞা নিলাম-শহীদদের রক্ত এবং আহত ভাইবোনদের আত্মত্যাগকে জাতি হিসেবে আমরা কিছুতেই ব্যর্থ হতে দেবো না। যে সুযোগ তারা আমাদের জন্য তৈরি করে দিয়েছেন, সে সুযোগকে আমরা কখনো হাতছাড়া হতে দেবো না। তাদের স্মৃতিময় দিনে আবারো প্রতিজ্ঞা করলাম তাদের স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ আমরা গড়বোই।