শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য যেসব উপজেলায় সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় বা কলেজ নেই সেখানে একটি করে মাধ্যমিক বিদ্যালয় বা কলেজ জাতীয়করণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। তারই প্রেক্ষিতে আজ পর্যন্ত ৩৭৪ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে জাতীয়করণের জন্য জিও হয়। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে আত্তীকরণ বিধিমালার খসড়া মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন ও পিএসসি হয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে গেলে কোনো এক অদৃশ্য থাবায় তা আর এগুতে পারেনি। দীর্ঘ কালক্ষেপণের পর ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ জানুয়ারি আত্তীকৃত বিধিমালাটি গেজেট প্রকাশ করা হয় যাতে নানাবিধ অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয়। উক্ত বিধিমালায় বেসরকারি আমলের যোগ্যতাকেই কাম্য যোগ্যতা হিসাবে বিবেচনা করলেও এডহক নিয়োগে নিয়োগকালীন স্কেল কে প্রারম্ভিক স্কেল হিসাবে মেনে যোগদান করতে বলা হয়।
ইতোমধ্যে অনেক সিনিয়র শিক্ষক ২৮০০০/২৯০০০ টাকা মূল বেতন প্রাপ্ত হলেও তা অবনমিত হয়ে ১৬০০০ এ রূপান্তর হয় যা চরম বৈষম্যের স্বীকার বলে সিনিয়র শিক্ষকরা মনে করেন। সহকারী প্রধান শিক্ষকের গ্রেড ৮ম হলেও তা অবনমন করে ৯ম গ্রেড করা হয়। আত্তীকরণ বিধিমালার ১২ অনুচ্ছেদে বলা হয় আত্তীকৃত বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক, কর্মচারী বদলিযোগ্য নহে যাহা পুরাতন স্কুলের সঙ্গে স্পষ্ট বৈষম্যের লক্ষণ। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে জিও প্রাপ্ত স্কুলের এডহক নিয়োগ হয়েছে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে। এরমধ্যে অনেক শিক্ষক বিদায় নিয়েছেন। বকেয়ার ক্ষেত্রেও বৈষম্য লক্ষ করা গেছে। কোনো কোনো বিদ্যালয়ে ২ বছরের বকেয়া পেলেও বেশিরভাগ স্কুলই জিও প্রাপ্ত অর্থবছর (এমনও আছে ১ মাস ২৫ দিন) আর যেদিন থেকে এমপিও বন্ধ হয়েছে সেই অর্থবছরের বকেয়া পেয়েছে, বাকি রয়েছে আরো চার বছরের বকেয়া।
তাছাড়া স্থায়ীকরণ ও নিয়মিতকরণের বিলম্বের জন্য অনেক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও পেনশন পাচ্ছেন না, যেখানে পুরাতন সরকারি স্কুলে এমন বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়না। নতুন সরকারি স্কুলে শিক্ষক অবসরে গেলেও শিক্ষক সংকটের জন্য পাঠদানে বিঘ্ন ঘটছে। ৩১৭টি পুরাতন সরকারি স্কুলের মধ্যে ১০০টির ওপরে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সিনিয়র শিক্ষককে সহকারী প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব দেয়া আছে যাতে প্রশাসনিক সংকট তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সরকারি বিধি মোতাবেক একজন সহকারী প্রধান শিক্ষকের তিন বছরের অভিজ্ঞতা থাকলে তিনি পদোন্নতি পেতে পারেন। ইতোমধ্যে আত্তীকৃত শিক্ষকদের প্রায় সব সহকারী প্রধান শিক্ষকই প্রধান শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। কিন্ত স্থায়ীকরণ ও নিয়মিতকরণের দীর্ঘসূত্রিতার জন্য আমরা পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। তাছাড়া এখনো জিওকৃত অধিকাংশ স্কুলে এডহক নিয়োগ হয়নি। একটি মহল আত্তীকৃত স্কুলের শিক্ষকদের পদোন্নতি ও বদলি ঠেকাতে বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ অব্যাহত রাখছে। ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার বৈষম্যবিরোধী গণ আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের সার্বিক প্রেক্ষাপটে পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগে। উক্ত আন্দোলনে সব শহীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করছি এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের চাকরি দিয়ে মানবিক উদ্যোগের বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করায় সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। নোবেল বিজয়ী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে আমাদের আকুল আবেদন, আমাদের স্থায়ীকরণ ও নিয়মিতকরণের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়ে আমাদের প্রাপ্য সকল বকেয়ার ব্যবস্থা করতে এবং আমাদের পদোন্নতির ব্যবস্থা করে আমাদেরকে বঞ্চনা ও বৈষম্যমুক্ত চাকরির সুযোগ করে দিন। এসব বিষয়গুলোর প্রতি সদয় দৃষ্টি দেয়ার জন্য সরকারের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছি।
লেখক: সহকারী প্রধান শিক্ষক, নবীনগর সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, ব্রাহ্মনবাড়িয়া।