পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে সরকারি প্রোগ্রামের ব্যানারে ‘জয় বাংলা’ না লেখাকে কেন্দ্র করে এক আওয়ামী লীগ নেতার হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। গতকাল সোমবার দুপুর দেড়টায় উপজেলার সুন্দরদীঘি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এই ঘটনা ঘটে। অনুষ্ঠানে ইউএনও গোলাম ফেরদৌসের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রেলমন্ত্রী ও পঞ্চগড়-২ আসনের সংসদ সদস্য নূরুল ইসলাম সুজন। ঘটনার একটি ভিডিও গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে আসে।
ভিডিওতে দেখা যায়, আনুষ্ঠানিকভাবে পতাকা উত্তোলনের পর রেলমন্ত্রী উপস্থিত নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। এই সময় হঠাৎ করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাসনাৎ জামান চৌধুরী জর্জ আওয়ামী লীগের বেশ কিছু নেতা-কর্মীকে সাথে নিয়ে রেলমন্ত্রীর সামনে এসে অনুষ্ঠানের ব্যানারে ‘জয় বাংলা’ না লেখায় মন্ত্রীকে উত্তেজিত হয়ে অভিযোগ দিতে থাকেন। এই সময় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক হাসনাৎ জামান চৌধুরী জর্জকে উত্তেজিত হয়ে বলতে শোনা যায়, ইউএনও গ্যাজেট দেখতে চায় আমার কাছে, দেখেন জয় বাংলা লেখেন নাই।
এই সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, সিনিয়র সহ সভাপতি গোলাম রহমান সরকারসহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। যদিও এই সময় আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বিষয়টি নিয়ে কোন কথা বলেননি।
উপস্থিত সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী নেতা-কর্মীদের অনেকে এই সময় ইউএনওকে উদ্দেশ্য করে 'মানি না মানব না', 'জবাব চাই', 'এই সাহসটা কোথায় পায়' বলে স্লোগান দিতে থাকেন।
পরিস্থিতির এক পর্যায়ে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনকে রাগান্বিত হয়ে ইউএনও গোলাম ফেরদৌসের হাত ধরে অনুষ্ঠান স্থল থেকে বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিতে দেখা যায়। পরে ইউএনও ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, মন্ত্রী মহোদয়ের উপস্থিতিতে আমরা অনেক প্রোগ্রাম সম্পন্ন করেছি। তার অনেকগুলোতে ব্যানারে ‘জয় বাংলা’ লেখা ছিল না।
সেই সময় কোন সমস্যা না হলেও আজ একই বিষয়কে কেন্দ্র করে একটি মহল অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটিয়েছে। যা খুবই দুঃখজনক।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাধারণ মানুষের সাথে কথা বললে তারা জানান, প্রশাসনের একজন পদস্থ কর্মকর্তাকে এভাবে দলীয় নেতা-কর্মী জড়ো করে লাঞ্ছিত না করলেও হতো। ইউএনও'র যদি ভুল থাকতো তাহলে বিষয়টি ঠিক ছিল। কিন্তু যেখানে ইউএনও'র ভুল নেই সেখানে এমন পরিবেশ তৈরি করাটা কতটা যুক্তিযুক্ত ছিল তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিকট প্রশ্ন রাখেন সাধারণ মানুষ।
এই বিষয়ে জানতে ইউএনও মো. গোলাম ফেরদৌসকে মুঠোফোনে কল দিলে তিনি এই বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবেরুল ইসলাম বলেন, যদি লোকাল ইস্যু হয় তাহলে আগে ডিসি’র সাথে কথা বলেন। আমি পরে কথা বলব।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২রা মার্চ জারিকৃত গেজেট অনুযায়ী, সাংবিধানিক পদাধিকারীগণ, দেশে ও দেশের বাইরে কর্মরত সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থার কর্মকর্তা/কর্মচারীবৃন্দ সকল জাতীয় দিবস উদযাপন এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় ও সরকারী অনুষ্ঠানে বক্তব্যের শেষে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান উচ্চারণ করবেন।