দাফতরিক কাজ বৃদ্ধি ও নানান ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে বরগুনা সদরঘাট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের নির্বাহী কমিটির সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) হাবিবুর রহমান । এর আগে একই কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন অর্থ সম্পাদক আবুল হোসেন। এদিকে ডিসির পদত্যাগ নিয়ে সাধারণ মুসল্লি ও কমিটির সদস্যদের মধ্যে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে।
জেলা প্রশাসকের সোমবার (২৫ জুন) স্বাক্ষরিত পদত্যাগপত্র মঙ্গলবার প্রকাশ্যে আসে। সেখানে উল্লেখ করেছেন, বরগুনা সদরঘাট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সভাপতির দায়িত্ব পালন করে এসেছেন তিনি। বর্তমানে দাফতরিক কাজের পরিধি বাড়ায় ও বিবিধ কারণে জেলা প্রশাসকের পক্ষে সদরঘাট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই মসজিদের গঠনতন্ত্র পুনঃসংশোধন করে অন্য কোনও উপযুক্ত ব্যক্তির নাম অন্তর্ভুক্ত করে মসজিদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অনুরোধ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরগুনা সদরঘাট মসজিদের নতুন ভবন নির্মাণ নিয়ে মতানৈক্যের কারণে সভাপতি জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়।
মুসল্লিদের অভিযোগ রয়েছে, নির্বাহী কমিটির আলোচনা ছাড়াই সাধারণ সম্পাদক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন চৌধুরী নিজেদের খেয়াল খুশিমতো মসজিদের নকশা পরিবর্তন করে বাণিজ্যিক উদ্দেশে স্টল নির্মাণ করেন। স্টল বরাদ্দ বাবদ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অগ্রিম অর্থও গ্রহণ করেন। এসব বিষয়ে নির্বাহী কমিটি কিংবা সাধারণ পরিষদের কারও সঙ্গেই আলোচনা করা হয়নি।
তাদের অভিযোগ, এ ছাড়াও মসজিদের নতুন ভবন নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের দিকে চলে এলেও অদ্যাবধি ভবন নির্মাণের ব্যয় নিয়ে সভা হয়নি। আয় ও ব্যয়ের কোনও হিসাব এখন পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি। এ সংক্রান্ত কোনও হিসাব না দেওয়ায় ডিসির পদত্যাগের কয়েকদিন আগেই অর্থ সম্পাদক আবুল হোসেনও পদত্যাগ করেন।
১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত বরগুনা সদরঘাট মসজিদ কমিটি মূলত দুই কক্ষ বিশিষ্ট। একটি নির্বাহী পরিষদ ও একটি সাধারণ পরিষদ। এর মধ্যে ২০২১ সালের ২০ নভেম্বর নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান নির্বাহী কমিটি দায়িত্বভার গ্রহণ করে। এতে সভাপতি হিসেবে পদাধিকার বলে জেলা প্রশাসককে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে হুমায়ুন কবির ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন। নির্বাচিত কমিটি কালেভদ্রে নির্বাহী কমিটির সভা করলেও অদ্যাবধি সাধারণ পরিষদের কোনও সভা হয়নি। এ নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
মসজিদের সাধারণ পরিষদ সদস্য মো. হাসানুর রহমান ঝন্টু বলেন, মসজিদ নির্মাণ থেকে শুরু করে আজকে পর্যন্ত আয় ব্যয়ের কোনও হিসাব নিরীক্ষা করা হয়নি। সাধারণ কমিটির সদস্যরা বার্ষিক সাধারণ সভা ডাকার জন্য অনুরোধ করলেও তা হয়নি। সাধারণ সদস্যদের কোনও মূল্যায়নই এই কমিটির কাছে নেই। এ ছাড়াও আলমগীর হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে মসজিদ পরিচালনার ক্ষেত্রে এর আগেও অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
পদত্যাগ করা অর্থ সম্পাদক আবুল হোসেন বলেন, আমি ব্যক্তিগত কারণে অব্যাহতি নিয়েছি। ভবন নির্মাণের অর্থ সংশ্লিষ্ট কোনও বিষয়ে আমার সঙ্গে নির্বাহী কমিটির আলোচনা হয়নি। তাদের আয় কিংবা ব্যয়ের কোনও তথ্যই আমার কাছে নেই।
এ বিষয়ে মসজিদের সম্পাদক হুমায়ুন কবির দাবি করেন, পদাধিকার বলে মসজিদের সভাপতি জেলা প্রশাসক। মসজিদ নির্মাণ শুরু হলে মসজিদের স্বার্থে সেখানে বাণিজ্যিক কিছু স্টল নির্মাণ করি। বিষয়টি জেলা প্রশাসক নিষেধ করলে আমরা সেগুলো ভেঙে ফেলেছি। তারপরও কী কারণে তিনি পদত্যাগ করলেন সে বিষয়ে কিছুই জানি না।
জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, মসজিদ নির্মাণে নকশা পরিবর্তন করে স্টল নির্মাণের বিষয়টি নিয়ে আমার সঙ্গে কমিটির সাথে মতানৈক্যের সৃষ্টি হওয়ায় আমি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যেখানে মতামতের কোনও গুরুত্ব নেই সেখানে দায়িত্ব পালনের প্রশ্নই আসে না। সেই সঙ্গে আমি আমার মতামত কারও ওপর জোর করে চাপিয়েও দিতে পারি না। তাই আমি নিজে থেকেই মসজিদের দায়িত্ব পালন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি।