ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে একটি বাস ভাঙচুরের পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে তিন দিন ধরে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে। গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যলয়ের বিশমাইল ফটকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ঢাকা থেকে শেরপুরগামী এম ডি সুপার নামে একটি বাস ভাঙচুর করেন। পরে ওই বাস বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন অফিসের পাশে রাঙামাটি এলাকায় আটকে রাখা হয়।
গতকাল রোববার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন কার্যালয়ের পাশে রাঙামাটি এলাকায় এম ডি সুপার নামের (নম্বর-ঢাকা মেট্রো-ব ১৪-৯৩১৬) একটি বাস রাখা আছে। বাসটির সামনের কাচ ও জানালা ভাঙা। বাসটি সম্পর্কে জানেন কি না, জানতে চাইলে পরিবহন কার্যালয়ের পরিচালক অধ্যাপক ছায়েদুর রহমান বলেন, ‘বাসটি পরিবহন অফিসের সীমানার বাইরে রাখা। কে বা কারা রেখেছে, আমরা কিছুই জানি না।’
বাসটির চালক কামাল উদ্দিন বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশমাইল ফটকে আমাদের এম ডি সুপার বাস থামিয়ে ভাঙচুর করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী। পরে বাসটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে নিয়ে আসতে বাধ্য করেন তাঁরা। বাস বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করিয়ে দিয়ে তাঁরা আমাদের চলে যেতে বলেন, আমরা চলে আসি। তখন আমাদের সঙ্গে তাঁরা মারমুখী আচরণ করেন।’
বাসটির মালিক রফিকুল ইসলামের দাবি, কোনো কারণ ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বাসটি ভাঙচুর করেছেন। এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে বাস আটকে আছে। বাস আনতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান ওরফে লিটন বাধা দিচ্ছেন। তিনি এ বিষয়ে শেরপুরের মুরশিদুর রহমান আকন্দের (সাবেক জাবি ছাত্রলীগ নেতা) সঙ্গে কথা বলতে বলেন। রফিকুল মুরশিদুরের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ঢাকায় গিয়ে বিষয়টি দেখবেন।
বাসটির বিষয়ে হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমি শুনেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছোট ভাই মোটরসাইকেল নিয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় বাংলা ফটক থেকে বিশমাইল ফটকে যাচ্ছিল। পরে একটা বাস তাকে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে মেরে ফেলার মতো অবস্থা হয়েছিল; অল্পের জন্য বেঁচে গেছে সে। এ কারণে কয়েকজন বাসটাকে আটকে রেখেছে। এটার সঙ্গে আমার সম্পর্ক কী? আমি তো বাসমালিক বা কাউকে চিনিই না। আমি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বাস আটকে রাখার কে?’
মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেওয়ার বিষয়টি নাকচ করেন বাসমালিক রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘যদি এ রকম কোনো ঘটনা ঘটে থাকে, আমরা জরিমানা দেব। সত্যি বলতে, তেমন কিছুই ঘটেনি। জাবি ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মুরশিদের একটা বাস রাস্তায় চালানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু শেরপুর বাস মালিক সমিতি অনুমতি দিচ্ছে না। মুরশিদ সেই জেরে ছাত্রলীগ দিয়ে আমাদের বাস ভাঙচুর করে আটকে রেখেছেন।’
বিষয়টিকে ষড়যন্ত্র বলে দাবি করে মুরশিদ বলেন, ‘শেরপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে আমি নৌকার প্রার্থীর পক্ষ নেওয়ায় আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী গ্রুপ ষড়যন্ত্র করছে। ওই বাস ভাঙচুর বা আটকে রাখার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর একটি অভিযোগ করেছেন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সহসম্পাদক শেখ রাজু। অভিযোগটি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘অভিযোগে বলা হয়েছে, মোটরসাইকেলে যাওয়ার সময় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী শেখ রাজুকে একটি বাস ধাক্কা দিয়েছে। আজ শুনেছি, ক্যাম্পাসের ভেতরে একটি বাইরের বাস আছে, সম্ভবত ওই বাসই হবে।’
অভিযোগ দেওয়ার বিষয়ে শেখ রাজু বলেন, ‘গত বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ওই বাস আমার বাইকে ধাক্কা দেয়। ধাক্কা দেওয়ার পর আমার বাইকে বান্ধবী ছিল, তাকে গালিগালাজ করে। পরে বৃহস্পতিবার রাতে আমার ছাত্রলীগের কয়েকজন ছোট ভাই বাসটিকে আটকায়। আমার বাইকের ক্ষতি হয়েছে, তাই আমি প্রক্টর বরাবর অভিযোগ দিয়েছি।’
ঘটনার পরদিন যে বাস আটকানো হয়েছে, সেটিই ওই বাস কি না, জানতে চাইলে রাজু বলেন, ‘আগের দিন যখন বাস আমাকে ধাক্কা দেয়, তখন আমি বাসের নম্বর দেখে রাখি। ওই নম্বর অনুযায়ী পরদিন কয়েকজন ছোট ভাই ওই বাস আটকায়।’