ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ মেডিক্যাল পরীক্ষায় হাজার হাজার পরীক্ষার্থীর অস্বাভাবিকভাবে বেশি নম্বর পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আর এতেই অন্যান্য পরীক্ষার্থীরা ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন; শুরু হয়েছে প্রতিবাদ।
সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, মূলত স্নাতক পর্যায়ে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির জন্য দ্য ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি কাম এনট্রেন্স টেস্ট (এনইইটি) পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হয়। এটি পরিচালনার দায়িত্বে থাকে দেশটির ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি (এনটিএ) নামের একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। যারা ভারতের অন্যান্য আরো বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার দায়িত্বেও থাকে।
লাখ লাখ শিক্ষার্থী মেডিক্যাল পরীক্ষাটিতে অংশ নেন। কিন্তু মাত্র অল্প সংখ্যকই কলেজে ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় নম্বর তুলতে পারেন। কিন্তু এই বছর চ্যালেঞ্জ যেনো আরো বেশি। কেনোনা চলতি বছরের পরীক্ষায় অনেক প্রার্থীই বেশ ভালো নম্বর পেয়েছেন। এতে করে কাট মার্কস বেশি হয়ে গিয়েছে। যার ফলে ভালো নম্বর পাওয়া অনেকেরই ভর্তি প্রায় অনিশ্চিত হয়ে গিয়েছে।
এক্ষেত্রে গত ৪ জুন ফলাফল প্রকাশের পর প্রশ্নপত্রে ভুল থেকে শুরু করে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। তাই বহু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা পুনরায় পরীক্ষার দাবি করেছেন। এজন্য আদালতে কয়েক ডজন পিটিশনও দাখিল করা হয়েছে।
যদিও এনটিএ কর্মকর্তারা প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে গত রোববার ফেডারেল শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান অভিযোগ স্বীকার করে জানান, কোনো কোনো পরীক্ষা কেন্দ্রের ‘কিছু অনিয়ম’ সামনে এসেছে। এক্ষেত্রে মন্ত্রী বলেন, ‘অনিয়ম পাওয়া গেলে এনটিএ কর্মকর্তাসহ কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।’
এদিকে গত মঙ্গলবার ভারতের শীর্ষ আদালত এনটিএ-কে একটি নোটিশ জারি করে। সেখানে বলা হয়, যদিও কারো পক্ষ থেকে ০.০০১ ভাগও অবহেলা হয়ে থাকে তবে এটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করা উচিত।
কিন্তু ভুক্তভোগী পরীক্ষার্থীর জন্য এসব কথা সান্ত্বনা ছাড়া আর কিছুই না। কেনোনা অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক এই পরীক্ষাটির জন্য তারা কয়েক মাস বা এমনকি কয়েক বছর পর্যন্ত সময় ব্যয় করেছে।
চলতি বছর এনইইটি পরীক্ষায় ১ লাখ ১০ হাজার আসনের জন্য প্রতিযোগিতা করেছিলেন প্রায় ২৪ লাখ শিক্ষার্থী। এটি থেকেই বোঝা যায়, পরীক্ষাটি কতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক। এক্ষেত্রে মোট আসনের মধ্যে ৫৫ থেকে ৬০ হাজার আসন সরকার পরিচালিত কলেজগুলোর জন্য। আর বাকিগুলো বেসরকারি কলেজের অন্তর্ভুক্ত।
এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা সরকারি কলেজে পড়ার জন্যই হুমড়ি খেয়ে পরে। একটি সরকারি কলেজে পাঁচ বছরের এমবিবিএস কোর্সের জন্য প্রায় ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ রুপির প্রয়োজন হয়। যেখানে বেসরকারি কলেজগুলোতে এই খরচ দশ গুণেরও বেশি।
তবে চলতি বছরের ফলাফল প্রকাশের পর দেখা যায়, সবাইকে অবাক করে ৬৭ জন পরীক্ষার্থী শতভাগ (৭২০ নম্বরের মধ্যে ৭২০ নম্বর) নম্বর পেয়েছে। যদিও ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে পরীক্ষাটি শুরু হওয়ার পর প্রতিবছর গড়ে এক থেকে তিনজন করে শিক্ষার্থী শতভাগ নম্বর পেয়ে আসছিলেন। এমনকি কোনো কোনো বছর স্বাভাবিকভাবেই কেউই তা তুলতে পারে না।
শুধু তাই নয়; চলতি বছরের পরীক্ষায় ৬৫০-৬৮০ নম্বর পাওয়া পরীক্ষার্থীর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। যা ভারতের শীর্ষ মেডিক্যাল কলেজগুলোতে আসন পাওয়ার প্রতিযোগিতাকে আরো তীব্র করেছে।
অস্বাভাবিক এই ফলাফল অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এক্ষেত্রে পরীক্ষার পরিচালনা ও গ্রেডিংয়ে অনিয়মের অভিযোগ এনে তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে।
কিন্তু এনটিএ অনিয়মের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের দাবি, পরীক্ষার নিয়মাবলির সঙ্গে আপস করা হয়নি। বরং চলতি বছর বেশি নম্বর পাওয়ার কারণ বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছে৷
এদিকে পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হওয়ার পরপরই বিহার পুলিশ প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে তদন্ত শুরু করে। এক্ষেত্রে গত ১০ মে চার শিক্ষার্থীসহ মোট ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর ১৫ জুন পুলিশ মামলায় জড়িত সন্দেহে আরো নয়জন পরীক্ষার্থীকে নোটিশ পাঠায়।
এদিকে পরীক্ষাটি নিয়ে চলমান অভিযোগকে সামনে এনে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের ওপর লাখ লাখ শিক্ষার্থীর ‘স্বপ্নের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা’ করার অভিযোগ এনেছে বিরোধীরা।
কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খড়গে পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং তার সরকারের ওপর কেলেঙ্কারি ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগ করেন। একইসঙ্গে অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে তিনি দলের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টের সম্পৃক্ততায় তদন্তেরও দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে সুপ্রিম কোর্ট আগামী ৮ জুলাই পরীক্ষা সংক্রান্ত ইস্যুতে শুনানি করতে যাচ্ছে। যার মধ্যে পরীক্ষা বাতিলের অনুরোধও রয়েছে।