বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও বাংলা ভাষা আন্দোলনের অন্যতম নেতা শওকত আলীর আজ জন্মদিন। তিনি পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী মুসলিম লীগের একজন প্রতিষ্ঠাতা - যা পরে আওয়ামী লীগ এবং বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নামে পরিচিত। তিনি তিনটি রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদেরই সদস্য ছিলেন। এছাড়াও ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ঢাকা নগর আওয়ামী লীগের মূখ্য সংগঠক ছিলেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তার ১৫০ মোগলটুলির বাসস্থানটি ছিলো ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার ও স্বাধীনতা আন্দোলনের কর্মীবাহিনীর মিলনক্ষেত্র।
শওকত আলী ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে ঢাকার গেন্ডারিয়ার একটি বিশিষ্ট সুন্নি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা শমসের আলী ছিলেন এলাকায় একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং মা মেহেরুননেসা খাতুন ছিলেন একজন গৃহিনী। পিতা ও মামা মামীর সান্নিধ্যে তার বেড়ে ওঠা। তিনি মুসলিম হাই স্কুল থেকে লেখাপড়া করেন। তার উচ্চ বিদ্যালয় শেষ করার পর তিনি জগন্নাথ কলেজে যোগ দেন এবং বিকম পাস করেন। তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন কিন্তু রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার কারণে তা সম্পন্ন করতে পারেননি।
শওকত আলী তমদ্দুন মজলিশের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত ছিলন। ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলীর কেএম দাস লেন রোডের রোজ গার্ডেন প্যালেসে 'পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ' প্রতিষ্ঠিত হয়। ২৩ জুনের সম্মেলনের আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন শওকত আলী। তার উদ্যোগে ১৫০ নং মোগলটুলিস্থ শওকত আলীর বাসভবন এবং কর্মী শিবির অফিসকে ঘিরে বেশ কয়েক মাসের প্রস্তুতিমূলক তৎপরতার পর ২৩ জুনের কর্মী সম্মেলনে দলের ঘোষণা দেয়া হয়। শওকত আলীর অনুরোধে কলকাতা থেকে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী একটি মামলা পরিচালনার কাজে ঢাকায় এলে তিনি শওকত আলীকে মুসলিম লীগ ছেড়ে ভিন্ন একটি রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলার পরামর্শ দেন। শওকত আলী এ পরামর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে পূর্ববঙ্গ কর্মী শিবিরের নেতৃবৃন্দকে নতুন সংগঠন গড়ে তুলতে উদ্বুদ্ধ করেন। এসময় কর্মী শিবিরের প্রধান নেতা ছিলেন শামসুল হক। কামরুদ্দীন আহমদ, শেখ মুজিবুর রহমান, মো. তোয়াহা, অলি আহাদ, তাজউদ্দীন আহমদ, আতাউর রহমান খান, আবদুল আউয়াল, মুহম্মদ আলমাস, শামসুজ্জোহা প্রমুখ কর্মী শিবির কেন্দ্রিক রাজনৈতিক কর্মতৎপরতায় বিশেষভাবে যুক্ত ছিলেন।
মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে আসামের ধুবড়ী জেলখানা থেকে ছাড়া পেয়ে ঢাকা এলে তার সঙ্গে শওকত আলীর আলোচনা হয়। শওকত আলী মওলানাকে পূর্ববঙ্গ কর্মী শিবিরকেন্দ্রিক রাজনৈতিক তৎপরতার কথা জানান। এসময় মওলানা ভাসানী আলী আমজাদ খানের বাসায় অবস্থান করছিলেন। শওকত আলীর সঙ্গে তার প্রাথমিক আলোচনা সেখানেই হয়। এই আলোচনার সূত্র ধরে নতুন দল গঠনের জন্য একটি সাংগঠনিক কমিটি গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন শওকত আলী। সেজন্যে ১৫০ নম্বর মোগলটুলিতে একটি বৈঠকের আয়োজন করা হয়। মওলানা ভাসানী সেই বৈঠকে যোগদান করেন। এসময় খোন্দকার আবদুল হামিদের সঙ্গে পরামর্শ করে শওকত আলীর উদ্যোগে ও প্রচেষ্টায় মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে সভাপতি, ইয়ার মুহম্মদ খানকে সম্পাদক করে অন্যদেরসহ একটি সাংগঠনিক কমিটি গঠিত হয়।
১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশ্বাসঘাতকতামূলক হত্যা সংবাদ শুনে শওকত আলী স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। ১৮ আগস্ট তিনি ঢাকার হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে মারা যান। জুরাইন কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে শওকত আলীকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক দেয়া হয়।