ভিকারুননিসার সব অপকর্মের হোতা শিক্ষা ক্যাডারের অধ্যক্ষ! - দৈনিকশিক্ষা

ভিকারুননিসার সব অপকর্মের হোতা শিক্ষা ক্যাডারের অধ্যক্ষ!

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

নানা অনিয়মের জর্জরিত এক সময়কার নামকরা ভিকারুননিসা নূন স্কুলে বিভিন্ন উন্নয়নকাজে  সব বড় ঘাপলার মূলে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের অধ্যক্ষ কামরুন নাহার। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরে (ডিআইএ) কর্মরত চারজন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তার তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। তদন্ত কমিটি বলেছে, উন্নয়নকাজের প্রকল্পে প্রাক্কলন সঠিকভাবে হয়নি। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটির সদস্যদের মাধ্যমে  প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে এবং এ কাজে অর্থের নয়ছয় হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দরপত্র আহ্বান ছাড়াই লাখ লাখ টাকার কাজ হয়েছে।

ডিআইএর তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন শিক্ষা পরিদর্শক স্বপন কুমার কাহালি। সদস্য ছিলেন সহকারী শিক্ষা পরিদর্শক মনিরুজ্জামান, সহকারী শিক্ষা পরিদর্শক সাদিয়া সুলতানা ও অডিট অফিসার চন্দন কুমার দেব। শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রতিবেদনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে বলে জানা গেছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে পরিচালনা কমিটি অধ্যক্ষসহ শিক্ষকমণ্ডলীর মধ্যে দূরত্ব রয়েছে এবং পরস্পরের বিরুদ্ধে শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ বা পাল্টা অভিযোগ করেন। ফলে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে” ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অনুরোধে অভিযোগ তদন্ত করে এ কমিটি। একেএম রেজাউল মান্নান নামে এক অভিভাবক অভিযোগটি দিয়েছিলেন। তাঁর অভিযোগ, উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষের পর ১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ভিকারুননিসার ফান্ডে জমা না দিয়ে ওই দুই অভিভাবক সদস্য আত্মসাৎ করেছেন। উন্নয়ন কাজের সময় ভিকারুননিসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন ওই সময় ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার (বর্তমানে জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব) মো. মোস্তাফিজুর রহমান এবং অধ্যক্ষ ছিলেন নাহার মুকুল। অধ্যক্ষ প্রকল্পের কাজ তদন্তে কমিটি গঠনের জন্য ঢাকা বোর্ডে চিঠি  দিয়েছিলেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ভিকারুননিসার গেট সংস্কার, সৌন্দর্যবর্ধনসহ বেশ কিছু কাজ করার ব্যাপারে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ২০ অক্টোবর পরিচালনা পর্যদের সভায় সিদ্ধান্ত হয়। সভায় ৯ সদস্যের প্রজেক্ট কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির আহ্বায়ক ও যুগ্মা আহবায়ক ছিলেন যথাক্রমে কমিটির অভিভাবক সদস্য সিদ্দিকী নাসির উদ্দিন এবং ওহেদুজ জামান (মন্টু)। বাকি সদস্যরা  হলেন মুর্শিদা আক্তার, অ্যাডভোকেট রীনা পারভীন, জান্নাতুল ফেরদৌস, ফাতেমা জোহরা হক, মো. শাহ আলম খান, ওয়াহিদা জাফর ও মো. মোহসিন তালুকদার। একই বছরের ৯ নভেম্বর সভায় গভর্নিং বডির সভাপতি ও সদস্য সচিবকে প্রজেক্ট কমিটির উপদেষ্টা রেখে কমিটি ১২ সদস্যে উন্নীত করা হয়।

এতে আরও বলা হয়, প্রকল্প বাস্তবায়নে ২ কোটি ৬ লাখ ৫৩ হাজার ৮৪৪ টাকার প্রাক্কলন অনুমোদিত হয়। তবে প্রজেক্ট কমিটি টেন্ডার আহ্বান না করেই সংস্কার ও সৌনদর্যবর্ধনের কাজ করে। নির্মাণসামগ্রী সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে চেকের মাধ্যমে ৭৮ লাখ ৮৫ হাজার ২৯৭ টাকা পরিশোধ করার কথা দাবি করা হলেও প্রাপ্ত রেকর্ডে দেখা যায়, ৫৮ লাখ ৯ হাজার ৯৯৫ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।

উন্নয়ন কাজের মধ্যে ছিল, মূল শাখার ওয়াকওয়েসহ অন্যান্য স্থানের পেভমেন্ট টাইলস সরবরাহ, মূল শাখায় শিক্ষকদের কক্ষ ও অন্যান্য কক্ষের টাইলস সরবরাহ, ইংরেজি ভার্সন শাখার সিঁড়ি ও অন্যান্য স্থানের জন্য টালি সরবরাহ, আসবাব সরবরাহ, টিভি ক্রয়, ফটোকপি মেশিন ক্রয় ইত্যাদি।

তদন্ত কমিটি বলেছে, নগদ ও চেকের মাধ্যমে অগ্রিম দুই দফায় নেওয়া মোট ১ কোটি ৩৮ লাখ ৫৯ হাজার ৯৯৫ টাকা এবং অপ্রদর্শিত ২০ লাখ ৭৫ হাজার ২৪২ টাকাসহ মোট ১ কোটি ৫৯ লাখ ৩৫ হাজার ২৩৭ টাকার বিল ভাউচারের মাধ্যমে সমন্বয় করার কোনো রেকর্ড তদন্তকালে উপস্থাপন করা হয়নি। এর আগে প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ কমিটির প্রতিবেদনে (সহকারী অধ্যাপক হাসিনা বেগম, শাহনাজ রেগম এবং প্রভাষক মো. সুমন ফকিরকে নিয়ে কমিটি গঠিত) বলা হয়, প্রজেক্ট কমিটি টেন্ডার ছাড়াই সংস্কার ও কাজ করে। এজন্য নগদ এবং চেকের মাধ্যমে ১ কোটি ৫৯ লাখ ৩৫ হাজার ২৩৭ টাকা অগ্রিম গ্রহণ করে। প্রজেক্ট কমিটির আহ্বায়ক সিদ্দিকী নাসির উদ্দিন বিভিন্ন তারিখে প্রতিষ্ঠান থেকে নগদে ৮০ লাখ ৫০ হাজার টাকা গ্রহণ করেন এবং নির্মাণসামগ্রী সরবরাহকারীকে চেকের মাধ্যমে ৭৮ লাখ ৮৫ হাজার ২৩৭ টাকা পরিশোধ করেন। সরকারি বিধি অনুযায়ী অগ্রিম অর্থ গ্রহণের পর পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে অথবা ৩০ জুনের মধ্যে তা সমন্বয় করতে হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ওই বিধি লঙ্ঘন করা হয়েছে। পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আগের অগ্রিমের হিসাব প্রদানের নির্দেশ দিলেও তা সমন্বয় না করে উল্টো ২৩ বার অগ্রিম অর্থ নেওয়া হয়েছে।

ডিআইএর তদন্ত বলেছে, প্রকল্পের টাকা যার মাধ্যমেই ব্যয় হোক না কেন, প্রতিষ্ঠানপ্রধান তার জন্য দায়ী থাকবেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানপ্রধান ও কমিটির সভাপতি/দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যের যুগ্ম স্বাক্ষরে ব্যাংক হিসাব পরিচালিত হয়। সুতরাং প্রতিষ্ঠানের সব আয়-ব্যয়ের দায়-দায়িত্ব তাদের ওপর বর্তাবে।

প্রতিষ্ঠানটির সাবেক অধ্যক্ষ কামরুন নাহার যিনি প্রেষণে এসেছিলেন তিনি বর্তমানে অবসরে। তদন্ত প্রতিবেদনে আর্থিক অনিয়মে তাঁকেই মূলত দায়ী করা হয়েছে। তিনি এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। 

ভিকারুননিসার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী বলেন, বিষয়গুলো তিনি দায়িত্ব নেওয়ার আগের। তখন কী হয়েছে, তা বলতে পারছেন না। ডিআইএর তদন্ত বিষয়েও তিনি অবহিত নন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিদ্দিকী নাসির উদ্দিন ও ওহেদুজ জামান (মন্টু) আদালতে মামলার কারণে বর্তমানে কমিটির বাইরে আছেন। তাদের নিয়ে কিছু বলতে চাই না।

ওহেদুজ জামান বলেন, লেবার বিল এখনও ২৮ লাখ টাকা বাকি। তৎকালীন অধ্যক্ষ ও সভাপতির সরাসরি তত্থাবধানে সব কাজ হয়েছে।

‘২৬ লাখ টাকা’র প্রধান শিক্ষক নাজমার শাস্তি দাবি আনন্দময়ী স্কুল ছাত্রীদের - dainik shiksha ‘২৬ লাখ টাকা’র প্রধান শিক্ষক নাজমার শাস্তি দাবি আনন্দময়ী স্কুল ছাত্রীদের জানুয়ারিতেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া হবে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha জানুয়ারিতেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া হবে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা ইএফটিতে বেতন: ব্যাংক হিসাব নিয়ে এমপিও শিক্ষকদের অসন্তোষ - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন: ব্যাংক হিসাব নিয়ে এমপিও শিক্ষকদের অসন্তোষ পবিপ্রবিতে গাঁজাসহ ৫ মাদকসেবী আটক - dainik shiksha পবিপ্রবিতে গাঁজাসহ ৫ মাদকসেবী আটক ভর্তিতে লটারি বাতিলের দাবিতে সড়ক আটকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ - dainik shiksha ভর্তিতে লটারি বাতিলের দাবিতে সড়ক আটকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ প্রাথমিকের ১০ম গ্রেডের দাবি সর্বজনীন - dainik shiksha প্রাথমিকের ১০ম গ্রেডের দাবি সর্বজনীন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034940242767334