দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আজিমপুর শাখায় প্রথম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর ভর্তিতে ভুয়া জন্মসনদ ব্যবহার করা হয়েছে। ভর্তির সময় বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের নজর এড়িয়ে গেলেও পুন:যাচাইয়ে ধরা পড়ে। এরপর ওই শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করা হয়।
ভিকারুননিসা সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির আজিমপুর শাখায় একজন শিক্ষার্থীর প্রথম শ্রেণিতে ভর্তিতে বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠে। এরপর ওই শিক্ষার্থীর মা ভর্তি বাতিলের আবেদন জানান।
আবেদনের প্রেক্ষিতে ভারপ্রাপ্ত শাখা প্রধান সাবনাজ সোনিয়া কামালের কাছে যাচাই-বাছাইয়ের পরও কিভাবে ভুয়া জন্মসনদে শিক্ষার্থী ভর্তি হল তার কারণ জানতে চান ভিকারুননিসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী। এর জবাব দেন ভারপ্রাপ্ত শাখা প্রধান। সেখানে তিনি প্রথম শ্রেণিতে ভর্তিতে একজন শিক্ষার্থীর জন্মসনদে ভুল থাকায় অধ্যক্ষের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
সাবনাজ সোনিয়া কামালের সেই লিখিত জবাব থেকে জানা গেছে, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি তাকে সাতটি আবেদনপত্রের জন্ম নিবন্ধন সনদ আবার যাচাইয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পুনঃযাচাইয়ে ছয়টি জন্ম নিবন্ধন সনদে কোনো ভুল তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে একটি জন্ম সনদে গরমিল খুঁজে পাওয়া যায়। ওই জন্মসনদে উল্লেখ করা সংখ্যা ব্যবহার করে অনলাইনে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় নি। এরপর ওই শিক্ষার্থীর অভিভাবককে ডেকে পাঠানো হয়। তিনি জন্মসনদ যে দোকান থেকে প্রিন্ট করে বের করেছেন, সেই দোকান থেকে অনলাইন কপি দুই দিনের মধ্যে দিয়ে যাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। সে অনুযায়ী দুই দিন পর একটি জন্মসনদ জমা দিয়ে ভারপ্রাপ্ত শাখা প্রধানকে সেটির অনলাইন কপি যাচাই করতে বলেন। কিন্তু আগে ও পরে জমা দেওয়া জন্মসনদের কপিতে সবকিছু মিল থাকলেও জন্মসাল মিল ছিল না।
এরপর শাখা প্রধান ওই অভিভাবকের কাছে প্রতারণা করার কারণ জানতে চান। ওই অভিভাবক তাকে জানান, কম্পিউটার অপারেটর জন্মসনদে ভিন্ন একটি তারিখ বসিয়ে নতুন একটি সনদ তাকে দেয়। কিন্তু তিনি এটি পরে বুঝতে পারেন। এই টেম্পারিংয়ের বিষয়ে তার কোনো পূর্বধারণা ছিল না। তারপর ওই অভিভাবক ভর্তি বাতিলের আবেদন জানান।
লিখিত জবাবে সাবনাজ সোনিয়া কামাল আরও জানান, ভর্তির জন্য কাগজপত্র জমা নেওয়ার সময় তাদের অসাবধানতার কারণে বিষয়টি নজর এড়িয়ে যায়। ছাত্রীটি ভর্তির জন্য মনোনীত হয় এবং ভর্তিও হয়। পুনঃযাচাইয়ের জন্য সাতটি আবেদনপত্র যাচাইয়ে ভুলটি ধরা পড়ে। তাই যাচাই কমিটি এই ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থণা করেন।
জানতে চাইলে ভিকারুননিসার আজিমপুর শাখার ভারপ্রাপ্ত শাখা প্রধান সাবনাজ সোনিয়া কামাল বলেন, পুন:যাচাইয়ের মাধ্যমে প্রথম শ্রেণির একজন ছাত্রীর ভর্তিতে ভুয়া জন্মসনদ ব্যবহারের তথ্য পাওয়া গেছে। ওই ছাত্রীর মাকে আমরা ডেকেছি। তিনি জানিয়েছেন, কম্পিউটার অপারেটর এই টেম্পারিং করেছেন। পরবর্তীতে তিনিই ভর্তি বাতিলের আবেদন করেছেন। সে প্রেক্ষিতে ভর্তি বাতিল করা হয়েছে।
জানতে চাইলে ভিকারুননিসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী বলেন, প্রথম শ্রেণির একজন ছাত্রীর ভর্তিতে ব্যবহৃত কাগজ যাচাই-বাছাই করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরে যাচাই করে আজিমপুর শাখা দেখেছে, সনদটি ভুয়া। ফটোশপ দিয়ে এটি বানানো হয়েছে।
এর আগে চলতি শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে ১৬৯ জন ছাত্রীকে বিধিবহির্ভূতভাবে ভর্তি করানোর পর তাদের ভর্তি বাতিল করা হয়। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই প্রথম শ্রেণিতে জালিয়াতি করে আরও ৩৬ ছাত্রী ভর্তির তথ্য ফাঁস হয়। এসব শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে জাল সনদ ব্যবহার করা হয়।