দৈনিকশিক্ষাডটকম, মোরেলগঞ্জ : বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভুয়া ভোট কেন্দ্র দেখিয়ে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অর্থ বিভাগ থেকে গত ২০ নভেম্বর সংসদ নির্বাচনের কেন্দ্র হিসেবে দেশের ৪ হাজার ১৭৭ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মেরামতের জন্য কয়েক কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। মোরেলগঞ্জে ৬ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ পায়। এর মধ্যে মোরেলগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২ লাখ, পশ্চিম খাওলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১ লাখ, এস পি রাশিদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১ লাখ ৫০ হাজার, ছোলম বাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১ লাখ, পশ্চিম বহরবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ লাখ, মুজিবুল হক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
কিন্তু নির্বাচন অফিসের তথ্য মতে, ভোটকেন্দ্রের তালিকায় দেখা যায় শুধুমাত্র পশ্চিম খাওলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯৫ নং ভোটকেন্দ্র রয়েছে এবং ২৬৬ নং পশ্চিম বহরবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬১ নং ভোটকেন্দ্র রয়েছে। তবে নির্বাচন অফিসের দেয়া ভোটকেন্দ্রের নাম ও প্রাথমিক অধিদপ্তরের ৮৯৬ নং ক্রমিকের নামের মিল পাওয়া যায়নি। বাস্তবতা হলো বাকি যে চারটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটকেন্দ্র সংস্কারের জন্য টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে নির্বাচন অফিসের তালিকায় ৪ টি বিদ্যালয়ই ভোটকেন্দ্র নেই।
এদিকে মোরেলগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভোটকেন্দ্র না হলেও সংস্কারের ২ লাখ টাকা দিয়ে বিদ্যালয়ের দেয়ালে রঙ করার কাজ করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকা শিরিন আক্তার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমরা শিক্ষা অফিসারের নির্দেশে এই রঙের কাজ করিয়েছি।
এ বিষয়ে ওই বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের সহকারী শিক্ষা অফিসার রিপন চন্দ্র মন্ডল দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র না, কিন্তু কিভাবে কাজ হলো, ককো টাকার কাজ হলো এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না।
বারইখালী ইউনিয়নের ১৬৫ নং মজিবুল হক রেজিস্ট্রার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্র নেই। তবে বিদ্যালয়ের জন্য সরকারি বরাদ্দ ১ লাখ টাকা এসেছে। কিন্তু টাকার কোন সংস্কার কাজ অবদি হয়নি। ওই বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রুবিয়া বেগম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমার বিদ্যালয়ে কোনো ভোটকেন্দ্র নেই, এই বিদ্যালয় সংস্কারের জন্য কোনো টাকা বরাদ্দ আছে কি-না আমার জানা নেই।
বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা অসিত বর্মন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন ওই বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র না,ওই বিদ্যালয়ের জন্য কোনো টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে কি-না আমার জানা নেই।
অপরদিকে এস পি রাশিদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মানজারুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, আমার বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র না, ভোটকেন্দ্র হিসেবে বিদ্যালয় সংস্কারের যে টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে টিইও স্যারের নির্দেশে সেই টাকার কাজ চলছে।
বিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ওটা ভোট কেন্দ্র না তবে পাশ্ববর্তী মাধ্যমিক বিদ্যালয় নির্বাচনের তালিকায় ৯৭ নং ভোটকেন্দ্র। ভোটকেন্দ্র সংস্কারের জন্য যে টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে আমার জানা নেই।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ভোটকেন্দ্র সংস্কারের জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসা অর্থের কাজের কোন অনুমতি আমি দেইনি।
জানতে চাইলে মোরেলগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন,বিদ্যালয় সংস্কারের কাজ চলছে,কাজ শুরুর আগে উপজেলা প্রকৌশলীর প্রক্কলন লাগবে কি-না জিজ্ঞেস করলে এ প্রশ্নের উত্তর তিনি এড়িয়ে যান। রাগ করে ফোন কেটে দেন।