মঙ্গল শোভাযাত্রায় তারুণ্যের উচ্ছ্বাস, শান্তি ফেরানোর প্রত্যাশা - দৈনিকশিক্ষা

মঙ্গল শোভাযাত্রায় তারুণ্যের উচ্ছ্বাস, শান্তি ফেরানোর প্রত্যাশা

ঢাবি প্রতিনিধি |

‘পৃথিবীতে যুদ্ধ নয় শান্তি ফিরুক’- এ আহ্বান জানিয়ে পহেলা বৈশাখে ১৪৩০ বঙ্গাব্দের মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা ইনস্টিটিউটের আয়োজনে শিল্পীদের তৈরি বিভিন্ন মুখোশ, প্রতীক, চিত্র, প্রতিকৃতি নিয়ে রবি ঠাকুরের কবিতার পঙিক্তি ‘বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি’-কে সামনে রেখে এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।

শুক্রবার সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়। মঙ্গল শোভাযাত্রা শাহবাগ মোড় হয়ে পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হয়। 

প্রতিবারের মতো মঙ্গল শোভাযাত্রায় নিরাপত্তার কড়াকড়ি থাকলেও তারুণ্যের উচ্ছ্বাসের কমতি ছিলো না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের প্রতিটি প্রবেশ মুখে ছিল পুলিশের চেকপোস্ট। এছাড়া পুরো বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে ছিলো পুলিশ, র‍্যাব, সোয়াটসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল।

ঢাকঢোলের বাদ্যের তালে তালে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের ছন্দোবদ্ধ নৃত্যে আনন্দ-উৎসবমুখর হয়ে ওঠে শোভাযাত্রা। বাংলাদেশে কাজ করেন এমন অনেক বিদেশি বর্ণিল পোশাকে শোভাযাত্রায় অংশ নেন।

গেলো বছরগুলোর মতই বিভিন্ন মোটিভে সজ্জিত ছিলো এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রায় দেশের বিলুপ্ত বা বিলুপ্তির ঝুঁকিতে থাকা প্রাণীগুলোকে প্রধান চরিত্র হিসেবে তুলে ধরা হয়। এক সময় এ দেশে থাকা নীলগাই ও ময়ূর দুটোই বিলুপ্ত। বেদিসহ ১৬ ফুট উঁচু একটি নীলগাই ছিলো। এছাড়া ১৭ ফুট আকৃতির একটি ময়ূর ছিলো। এ ছাড়া একটি বাঘ ও একটি হাতি ছিলো ১৫ ফুট আকারের। গবাদিপশু ভেড়াও বেশ দুর্লভ হয়ে ভেড়ার প্রতীকও ছিলো শোভাযাত্রায়। এছাড়া মায়ের কোলে সন্তান, রাজা-রানি, প্যাঁচা, পাখি ও বাঘের ছোট-বড় মুখোশ এবং নানা রঙের ও আকৃতির কৃত্রিম ফুলে সজ্জিত ছিল শোভাযাত্রা। 

অনুষদের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে কর্মশালায় আঁকা ছবি ও বিভিন্ন শিল্পকর্ম বিক্রি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে আর্থিক অনুদানের টাকা থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। প্রতিবছর শোভাযাত্রার আয়োজনের দায়িত্বে থাকে চারুকলা অনুষদের দুটি ব্যাচ। এ বছর দায়িত্বে আছে অনুষদের ২৪ ও ২৫তম ব্যাচ। 

দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যাচ দুটির একাধিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা হলে, তারা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান বাঙালি ও বাঙালিয়ানার সত্ত্বার পরিচয় পহেলা বৈশাখের মধ্যে নিহিত। আর পহেলা বৈশাখের পরিপূর্ণতা পায় এ মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে। আয়োজন থেকে অংশগ্রহণ করতে পেরে আমাদের বেশ ভালো লাগছে। 

পুরান ঢাকা থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রায় পরিবার নিয়ে অংশ নেয়া তপন কুমার বর্মন। তপন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, আমার ছোট্ট মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে এসেছি। রমনার বটমূলে বর্ষবরণ শেষে এখানে এসেছি। বেশ ভালো লাগছে, পরিবারসহ পহেলা বৈশাখ উদযাপন করতে পেরে।

চারুকলার এবারের বর্ষবরণের আয়োজনে মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ তিন দিনের কর্মসূচি রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বছরের শেষ দিনে অনুষ্ঠিত হয় চৈত্র সংক্রান্তির অনুষ্ঠান। শুক্রবার পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রা এবং শনিবার সন্ধ্যায় বকুলতলায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে যাত্রাপালা ‘নাচমহল’ অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নববর্ষ উদযাপন কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক ও উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এবার প্রতিপাদ্য হলো ‘বরিষ ধরার মাঝে শান্তির বারি’। অর্থাৎ সুষ্ঠু পৃথিবীর জন্য তুমি পানি বর্ষণ করো। যাতে এই উত্তপ্ত বসুন্ধরা স্নিগ্ধ হয়, শান্ত হয়, মনোরম হয়, সুন্দর হয় এবং ফুলে ফলে ভরে উঠে। 

শোভাযাত্রা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সবাইকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, মঙ্গল শোভাযাত্রা ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃত, এটির ইতিহাস ঐতিহ্য সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়া আমাদের দায়িত্ব। তাছাড়া সবকিছু উপেক্ষা করে সব মানুষের মঙ্গল শোভাযাত্রাতে উৎসবমুখর পরিবেশে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছে। সেই সঙ্গে সবার প্রতি আহ্বান থাকবে সব ধরনের উগ্রতা, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে এগিয়ে এসে মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক আহ্বানে সাড়া দিয়ে একটি সমৃদ্ধশালী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। 

এসময় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, আমরা দেখেছি জোট সরকারের সময় রমনার বটমূলে বোমা হামলা হয়েছে। বোমা হামলা তাদের সরকারের একটি অংশ ছিলো। একসঙ্গে ৬৪ জেলায় বোমা হামলা হয়েছিলো। সেই জায়গাটি থেকে নিরাপত্তার জন্য হুমকিওে এসেছে। একজন আইনজীবী হাইকোর্টে মামলা পর্যন্ত করেছেন, মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধ করার জন্য। নিরাপত্তা যেটা দেখছেন, আগেও এটা ছিলো। 

তিনি আরো বলেন, প্রত্যাশা ও সফলতার বার্তা নিয়ে হাজির হয়েছে বাংলা নববর্ষ ১৪৩০। মঙ্গল শোভাযাত্রা আমাদের সাংষ্কৃতিক ঐতিহ্য। ইউনেস্কোর ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত হয়েছে। সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনা হয়েছে। জাতির পিতার যে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছেন। 

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল  SUBSCRIBE   করতে ক্লিক করুন।

সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার - dainik shiksha সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছার আগে নোট-গাইড ছাপা বন্ধের নির্দেশ - dainik shiksha পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছার আগে নোট-গাইড ছাপা বন্ধের নির্দেশ ৭৫ হাজার শিক্ষার্থীর অভিভাবককে ইউএনওর খোলা চিঠি - dainik shiksha ৭৫ হাজার শিক্ষার্থীর অভিভাবককে ইউএনওর খোলা চিঠি শিক্ষকদের সতর্ক করে বদলি আবেদনের তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha শিক্ষকদের সতর্ক করে বদলি আবেদনের তারিখ ঘোষণা ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন - dainik shiksha ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বাকৃবিতে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি শুরু ৯ ডিসেম্বর - dainik shiksha বাকৃবিতে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি শুরু ৯ ডিসেম্বর কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে জুলাই আন্দোলনকে ভারতের স্বীকৃতি দেয়া উচিত - dainik shiksha জুলাই আন্দোলনকে ভারতের স্বীকৃতি দেয়া উচিত please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0074100494384766