নিজেদের মধ্যে মতানৈক্যের কারণে ছাত্র–জনতার অর্জন যেন হাতছাড়া হয়ে যায় তা নিশ্চিত করতে দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রোববার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান।
ড. ইউনূস বলেন, ‘আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আমরা আমাদের পক্ষ থেকে (অন্তর্বর্তী সরকারের) মেয়াদ বৃদ্ধির কোনো প্রশ্ন তুলব না। যে ক’দিন আছি সে সময়টুকু উপদেষ্টামণ্ডলীর প্রত্যেকে নিজ নিজ সাধ্যমতো দেশের এই সংকটকালে, সংকট উত্তরণে যেন নিজ নিজ মেধা ও সাধ্যমতো কাজে লাগাতে পারি। নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে সুযোগ ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে আমরা অর্জন করলাম, আমরা আমাদের মতানৈক্যের কারণে সেটা যেন হাতছাড়া না করে ফেলি। এটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। এ সুযোগ এবার হারিয়ে ফেললে আমরা জাতি হিসেবে পরাজিত হয়ে যাব। শহিদ, আহত ও জীবিত ছাত্র-জনতার কাছে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকতে চাই যে, এই অর্জনকে কিছুতেই হারিয়ে যেতে দেব না।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘একটা বিষয়ে সবাই জানতে আগ্রহী, কখন আমাদের সরকার বিদায় নেবে। এটার জবাব আপনাদের হাতে, কখন আপনারা আমাদেরকে বিদায় দেবেন। আমরা কেউ দেশ শাসনের মানুষ নই। আমাদের নিজ নিজ পেশায় আমরা আনন্দ পাই। দেশের সংকটকালে ছাত্রদের আহ্বানে আমরা এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। আমরা সমস্ত শক্তি দিয়ে এই দায়িত্ব পালন করব। আমাদের উপদেষ্টামণ্ডলীও এই লক্ষ্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে সবাই মিলে একটা টিম হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। কখন নির্বাচন হবে, সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আমাদের সিদ্ধান্ত নয়।’
অন্তর্বর্তী সরকার কখন দায়িত্বমুক্ত করা হবে তা জনগণের ওপর ছেড়ে দিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা ছাত্রদের আহ্বানে এসেছি। তারা আমাদের প্রাথমিক নিয়োগকর্তা। দেশের আপামর জনসাধারণ আমাদের নিয়োগ সমর্থন করেছে। আমরা ক্রমাগতভাবে সবাইকে বিষয়টি স্মরণ করিয়ে যাব, যাতে হঠাৎ করে এই প্রশ্ন উত্থাপিত না হয় যে, আমরা কখন যাব? তারা যখন বলবে আমরা চলে যাব। আমরা সংস্কারের অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশনকেও সংস্কার করব। কমিশনকে যে কোনো সময় আদর্শ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রাখব।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সংস্কারের কাজ শুরু করেছি। দেশবাসীকে অনুরোধ করব, একটা আলোচনা শুরু করতে আমরা সর্বনিম্ন কী কী কাজ সম্পূর্ণ করে যাব, কী কী কাজ মোটামুটি করে গেলে হবে। এই আলোচনার মাধ্যমে আমরা একটা দিকনির্দেশনা পেতে পারি। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক আলোচনা থেকেই আসবে। এই দিকনির্দেশনা না-পেলে আমরা দাতা সরকার এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সঙ্গে আলোচনায় দৃঢ়তার সঙ্গে অগ্রসর হতে পারছি না।’