মধুমতির ভাঙনে বিলীনের শঙ্কায় স্কুল-মাদরাসা-মসজিদ - দৈনিকশিক্ষা

মধুমতির ভাঙনে বিলীনের শঙ্কায় স্কুল-মাদরাসা-মসজিদ

দৈনিক শিক্ষাডটকম, ফরিদপুর |

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় মধুমতি নদীতে সম্প্রতি দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। গত এক মাসে বিলীন হয়েছে দেড় শতাধিক বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট এবং একশো একর ফসলি জমি। সরিয়ে নেওয়া হয়েছে অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি। নদীর দুই পাড়ে ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে মাদরাসা, স্কুল, এতিমখানা, মসজিদসহ বসতঘর ও ফসলি জমি। ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে নদীর পশ্চিম-পূর্ব পাড়ের অনেকেই। তবে ভাঙন রোধে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

সরেজমিনে ভাঙন কবলিত এলাকা ঘুরে জানা যায়, ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের কাতলাসুর, দিকনগর, চরআজমপুর, পাচুড়িয়া ইউনিয়নের বাঁশতলা ও টগরবন্দ ইউনিয়নের চরডাঙ্গা এবং বুড়াইচ ইউনিয়নের চর খোলাবাড়িয়া গ্রামে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। গত এক মাস যাবত মধুমতি নদীর পশ্চিম ও পূর্ব পাড়ে ভাঙনে প্রতিদিনই বিলীন হচ্ছে বসতভিটা, রাস্তাঘাট ও একরের পর একর ফসলি জমি। ইতোমধ্যেই ওই চারটি ইউনিয়নের দেড় শতাধিক বসতবাড়ি এবং ১০০ একরের মত ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অর্ধশতাধিক বসতবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে বুড়াইচ ইউনিয়নের চর খোলাবাড়িয়া এনবিডিসি আল হেরা দাখিল মাদরাসা, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এতিমখানা, মসজিদ, গোরস্তান ও গোপালপুর ইউনিয়নের বাজড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এছাড়া কাতলাসুর ও চরকাতলাসুর গ্রামের ‘স্বপ্ননগর’ ভূমিহীনদের সাড়ে ৩০০ ঘরসহ কয়েকটি গ্রামের ছয় শতাধিক বসতভিটা ভাঙনে ঝুঁকির মুখে রয়েছে।  

এদিকে ঘরবাড়ি হারিয়ে অন্যের জায়গায় কোনোরকমে বসবাস করছেন সব হারানো মানুষগুলো। আবার অনেকেই নদী পাড়ে এবং রাস্তার ধারে তাঁবু টানিয়ে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন। যে সব বসতবাড়ি ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে নদী পাড়ের বাসিন্দাদের।

নদীতে ফসলি জমি বিলীন হওয়া কাতলাসুর গ্রামের কৃষক মোশাররফ হোসেন বলেন, গত কয়েকদিনে এ গ্রামে ঘরবাড়িসহ প্রায় ২০ একর ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আমার নিজের দুই একর ফসলি জমি বিলীন হয়ে আমি অসহায় হয়ে পড়েছি। এখানে কিছু বালির বস্তা দেওয়া হয়েছিল তাও নদীতে চলে গেছে। সরকারের কাছে স্থায়ী বাঁধের দাবি জানাই।

মধুমতি নদীর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত চরখোলাবাড়িয়া গ্রামের মহিতন বেগম বলেন, পর পর আমার বাড়ি চারবার ভেঙে গেছে। ঘরবাড়িসহ গাছপালা নদীতে চলে গেছে। বাড়িঘর নাই রাস্তার পাশে বস্তির মত পড়ে আছি। বলতে বলতে আর বলার জায়গা নেই। নদীর ওপারে বাড়ি হওয়ায় আমাদের মতো বাসিন্দাদের কেউ খোঁজ রাখে না। আপনাদের মাধ্যমে সরকারকে কষ্টের কথা জানালাম। অপর গৃহবধূ রুমা বেগম বলেন, নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। সব সময় আতঙ্কে থাকি কোন সময় ঘর ভেঙে যায়। স্থায়ী বাঁধের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।  

চরখোলাবাড়িয়া গ্রামের কৃষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলফাডাঙ্গা উপজেলার মধুমতি নদীর পশ্চিম পাড়ের মানুষ আমরা। এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভিটেমাটি হারা লোকজন অনেকেই রাস্তার পাশে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। দাখিল মাদরাসা, মসজিদ, প্রাইমারি স্কুল, এতিমখানাসহ অনেক বাড়িঘর হুমকির মুখে রয়েছে। যেকোনো সময় নদীর পানি টান দিলে এসব স্থাপনা ভেঙে যেতে পারে।  

মধুমতির পাড় থেকে ১০০ মিটার দূরে থাকা চরখোলাবাড়িয়া এনবিডিসি আল হেরা দাখিল মাদরাসার সুপার মুফতি মাওলানা আব্দুর রব ফারুকী বলেন, ফরিদপুর জেলার শেষপ্রান্তে অনেক পুরানো মাদরাসাটি। দক্ষিণ পাশে নড়াইলের লোহাগড়া ও পশ্চিম পাশে মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা। মধুমতির পাড়ে চর এলাকায় মাদরাসাটি সুন্দর পরিবেশে পরিচালিত হয়ে আসছে। পাশেই রয়েছে এতিমখানা, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ পাঁচটি মসজিদ।  

সুপার বলেন, ৩০ বছর আগে যা দেখেছি, চরখোলাবাড়িয়া গ্রামে মাধ্যমিক পাশ ছেলে-মেয়ে খুঁজে পাওয়া যেত না। এখন প্রতিটি ঘরে একজন দাখিল পাশ ছেলে-মেয়ে রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা হয়ে অনেকেই সরকারের দায়িত্ব পালন করছেন। নদী থেকে প্রতিষ্ঠানগুলো মাত্র এক-দেড়শো মিটার দূরে রয়েছে। যেকোনো সময় ভাঙনের কবলে পড়তে পারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি নদীতে স্থায়ী বাঁধ দিয়ে এগুলো রক্ষা করতে।  

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন বলেন, মধুমতি নদীতে ভাঙন কবলিত এলাকায় স্থায়ী বাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। নদীতে আলফাডাঙ্গা ও মধুখালী এলাকায় সাড়ে মাত কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। তবে অপরপ্রান্তে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে বিষয়টি জানতে পেরেছি। দ্রুত ওই এলাকাগুলোতে ভাঙনরোধে জরুরিভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আইইউটির ৩ ছাত্রের মৃত্যু - dainik shiksha পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আইইউটির ৩ ছাত্রের মৃত্যু অনার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি বাদ দেয়া উচিত - dainik shiksha অনার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি বাদ দেয়া উচিত ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে - dainik shiksha প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত - dainik shiksha স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত নতুন পাঠ্য বইয়ে থাকছে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের বীরত্বগাথার গল্প - dainik shiksha নতুন পাঠ্য বইয়ে থাকছে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের বীরত্বগাথার গল্প শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি - dainik shiksha শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঞ্চম পর্যায়ের ভর্তি আজকের মধ্যে - dainik shiksha গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঞ্চম পর্যায়ের ভর্তি আজকের মধ্যে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0090460777282715