রাজধানীর খ্যাতনামা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে প্রধান শিক্ষক হিসেবে জাকির হোসেন দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানিয়েছেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী ও ঢাকা-১৫ আসনের এমপি কামাল আহমেদ মজুমদার। গতকাল শনিবার বিকেলে প্রতিষ্ঠানের মূল শাখায় সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘অধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেন এবং শিক্ষক জাকির হোসেনের বিষয়ে আদালতের কিছু নির্দেশনা রয়েছে। আমি নিজ হাতে তিল তিল করে গড়া এই প্রতিষ্ঠান রক্ষার জন্য আদালত যে সিদ্ধান্ত নেবে, সে মতে কাজ করার অঙ্গীকার করছি।’
এর আগে মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ ১৫ মার্চ পর্যন্ত আকস্মিক ছুটি ঘোষণা করায় বিস্ময় প্রকাশ করে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ। কোনো কারণ ছাড়াই এভাবে প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখায় পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয়ার উদ্যোগ নেয় বোর্ড কর্তৃপক্ষ। তবে অধ্যক্ষ দাবিদার ফরহাদ হোসেনকে স্বপদে বহাল রাখার জন্য হাইকোর্টে রিট করেছেন পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি।
গত বৃহস্পতিবার বিচারপতি খসরুজ্জামান ও বিচারপতি ইকবাল কবিরের বেঞ্চে রিটের শুনানি হয়। রিটকারীর আইনজীবী দাবি করেন, মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় একটি নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া এটির কলেজ শাখা থাকায় অধ্যক্ষ হবেন প্রতিষ্ঠান প্রধান, প্রধান শিক্ষক নন। তাছাড়া জাকির হোসেন বরখাস্ত শিক্ষক। তাই তাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেয়াও আইনানুগ হয়নি।
বিবাদীদের আইনজীবী বলেন, সরকারি নথিপত্রে এ প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত। জাকিরকে যখন বরখাস্ত দেখানো হয়েছে তখন কমিটির মেয়াদ ছিলো না। তাই এই বরখাস্ত আদেশই অবৈধ। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানের কলেজ শাখার পাঠদানের অনুমতি ও সরকারি স্বীকৃতি নেই। এমপিও নেই। তাই সরকারি দৃষ্টিতে এটির প্রতিষ্ঠান প্রধান হবেন প্রধান শিক্ষক। আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে কোনো আদেশ না দিয়ে আগামী সোমবার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন।
জানা গেছে, ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে মাউশি তদন্ত শেষে বলেছিলো অধ্যক্ষ পদে ফরহাদের নিয়োগ অবৈধ। এরপর ঢাকা বোর্ডের আরেক তদন্তেও বেরিয়ে আসে অধ্যক্ষ পদে তার চুক্তিভিত্তিক চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধিও আইনসম্মতভাবে হয়নি।
এ অবস্থায় আদালতের নির্দেশে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠতম শিক্ষক জাকিরকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেয় মাউশি। পরিচালনা কমিটির সভাপতির কাছে লেখা পত্রে তিন কর্মদিবসের মধ্যে এই ব্যবস্থা নিতে বলেছিল মাউশি। তবে পরিচালনা কমিটি তাতে কর্ণপাত করেনি।
বিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, এ প্রতিষ্ঠানটি মূলত শিল্প প্রতিমন্ত্রী ও ঢাকা-১৫ আসনের এমপি কামাল আহমেদ মজুমদারের নিয়ন্ত্রণে। তিনি নিজেই এক সময় এ প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ছিলেন। উচ্চ আদালতের নির্দেশে সংসদ সদস্যরা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি পদ থেকে বাদ গেলে তিনি তার কন্যাকে সভাপতির দায়িত্ব দেন। পরে তার কন্যা পদত্যাগ করলে কামাল আহমেদ মজুমদার তার অনুগত দলীয় নেতা ও সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর দেলোয়ারকে সভাপতি করেন।