ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বাংলা বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, বিশিষ্ট সাংবাদিক, লেখক, প্রাবন্ধিক, বঙ্গবন্ধু বিষয়ক গবেষক ও সাবেক সংসদ সদস্য এ এন মাহফুজা খাতুন বেবী মওদুদকে ‘বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদক’ (মরণোত্তর) প্রদান করেছে ঢাবি।
বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন মিলনায়তনে 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্বর্ণপদক-২০২৩’ এক অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর পিস অ্যান্ড লিবার্টির উদ্যোগে ওই পুরস্কার প্রদান করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে বেবী মওদুদের জ্যেষ্ঠ পুত্র রবিউল হাসান অভি’র হাতে স্বর্ণপদক ও সনদ তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি এবং ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি বলেন, শোষণ-নিপীড়ন ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে শাস্তি প্রতিষ্ঠা ও স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধু সারাজীবন লড়াই-সংগ্রাম করেছেন। পিতার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার পথ চলায় বঙ্গবন্ধু কন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে ছায়ার মতো কাজ করেছেন বেবী মওদুদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই বেবী মওদুদকে মরণোত্তর ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্বর্ণপদক’ প্রদান করায়। তাঁকে এমন পুরস্কার প্রদান করা যথার্থ হয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত প্রয়াত বেবী মওদুদের অমর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, দর্শন ও মূল্যবোধ লেখনীর মাধ্যমে সকলের কাছে তুলে ধরতে অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন। এই ধরণের আয়োজনের মাধ্যমে নতুন প্রজন্য অনুপ্রাণিত হয়ে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে গবেষণায় উদ্বুদ্ধ হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা অব্যাহত এবং সাংবিধানিক বিধি- বিধান সমুন্নত রাখতে যথাযথ ভূমিকা পালন করার জন্য নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে।
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর পিস এন্ড লিবার্টি'র পরিচালক অধ্যাপক ড. ফকরুল আলম এবং স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত (মরণোত্তর) বেবী মওদুদের জ্যেষ্ঠ পুত্র রবিউল হাসান অভিসহ আরো অনেকেই বক্তব্য রাখেন।
উল্লেখ্য, প্রয়াত বেবী মওদুদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগ থেকে ১৯৭০ খ্রিষ্টব্দে অনার্স ও ১৯৭১ খ্রিষ্টব্দে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ নারী অধিকার আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক। কমনওয়েলথ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের ইন্টারন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট ইমেরিটাস হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি অসামান্য অবদান রাখেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ওষুধপত্র সংগ্রহ, নির্যাতিত নারীদের আশ্রয় ও বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। দেশের প্রগতিশীল রাজনীতিতেও তিনি সক্রিয় ছিলেন। নবম জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। গবেষণা গ্রন্থ, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, শিশু সাহিত্য ও জীবনী গ্রন্থসহ সাহিত্যের নানা অঙ্গনে তিনি সফলভাবে বিচরণ করেন।
বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ শীর্ষক গ্রন্থসহ বিভিন্ন গ্রন্থ প্রকাশের ক্ষেত্রে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। বেবী মওদুদ ১৯৪৮ খ্রিষ্টব্দে ২৩ জুন জন্মগ্রহণ করেন। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১৪ খ্রিষ্টব্দে ২৫ জুলাই তিনি মারা যান।