মাদরাসার অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, সুপার ও সহকারী সুপারের মতো প্রশাসনিক পদগুলোতে জেনারেল শিক্ষকদের নিয়োগ পাওয়ার সুযোগ দেয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মাদরাসা জেনারেল টিচার্স এসোসিয়েশন। মাদরাসার এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো সংশোধন করে এ সুযোগ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা। তারা বলছেন, জেনারেল শিক্ষকদের এ সুযোগ দেয়া না হলে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি হবে এবং জেনারেল শিক্ষকরা রাজপথে নামতে বাধ্য হবেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে দৈনিক শিক্ষাডটকমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানিয়েছেন নেতারা।
এসোশিয়েশনের সভাপতি জহির উদ্দিন হাওলাদার ও মহাসচিব মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে নেতারা বলেন, মাদরাসার এমপিও নীতিমালার বিভিন্ন ধারা, উপধারার ব্যাখ্যা অস্পষ্ট এবং স্কুল-কলেজের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালার সঙ্গে বেশ কিছু বৈষম্য তৈরি হওয়ায় মাদরাসার জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা প্রকাশের পর থেকেই বাংলাদেশ মাদরাসা জেনারেল টিচার্স এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে তা সংশোধনের জোর দাবি জানানো হয় এবং সম্প্রতি কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ এবং মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর মাদরাসার জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
নেতারা আরো বলেন, দেশের একমাত্র শিক্ষা বিষয়ক ডিজিটাল পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাডটকমের গতকাল বুধবার প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানা যায়, সংশোধনীতে জেনারেল শিক্ষকদের মাদরাসার প্রশাসনিক পদে নিয়োগের সুযোগ রাখা হচ্ছে না। মাদরাসায় কর্মরত জেনারেল শিক্ষকদেরকে বঞ্চিত করে মাদরাসার জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালার সংশোধনী প্রকাশ করা হলে জোনরেল শিক্ষকদের মাঝে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি হবে এবং জেনারেল শিক্ষকরা রাজপথে নামতে বাধ্য হবে।
নেতাদের ভাষ্য, মাদরাসা মানেই বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান এই ধারণা সঠিক বলে মনে হয় না। কারণ বিশেষায়িত বলতে জ্ঞানের একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে মনোনিবেশ করা বুঝায়, কিন্তু আলিয়া ধারার মাদরাসা সাধারণ ধারার শিক্ষার মতোই পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে যা জ্ঞানের একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে মনোনিবেশ করে না, যেমনটা করে থাকে কওমি মাদরাসা। এজন্য কওমি মাদরাসাকে বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান বলা হলেও আলিয়া ধারার মাদরাসাকে বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান বলার সুযোগ নেই। তাই আলিয়া ধারার মাদরাসার প্রশাসনিক পদে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন যেকোনো শিক্ষক নিয়োগ দেয়া যেতে পারে কারন সহ-সুপার, সুপার, উপাধ্যক্ষ ও অধ্যক্ষ এসব প্রশাসনিক পদে কোনো আরবি বিষয়ের বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে জারি কার পরিপত্রে নন অ্যারাবিক সহকারী শিক্ষকদের দাখিল মাদরাসার সুপার ও সহকারী সুপার পদে এবং নন অ্যারাবিক প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপকদের আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ ও ফাজিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেয়ার বিধান রাখা হয়েছিলো। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের জারিকৃত সংশোধিত পরিপত্রে প্রশাসনিক সুপার, সহকারী সুপার, অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ পদের জন্য আরবি বিষয়ের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা চাওয়া হয় ও এসব পদে জেনারেল বা নন-অ্যারাবিক শিক্ষকদের নিয়োগের বিধান স্থগিত হয়ে যায়। এরপর থেকে এসোসিয়েশন মাদরাসায় প্রশাসনিক পদে শিক্ষক নিয়োগে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে জারি করা পরিপত্র মোতাবেক প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা পুণর্বহালের দাবি জানিয়ে আসছে এবং দাবি আদায়ে নানা কর্মসূচি পালন করে। এতোকিছুর পরেও মাদরাসার জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা সংশোধন প্রক্রিয়াতেও জেনারেল শিক্ষকদেরকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
নেতারা আরো বলেন, আলিয়া মাদরাসার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ১৭৮০ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায় মাদরাসা-ই-আলিয়া প্রতিষ্ঠার পর ১৭৮০ খ্রিষ্টাব্দে থেকে ১৮১৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ব্রিটিশ খ্রিষ্টান অফিসারদের একটি বিশেষ টিম মাদরাসা তত্ত্বাবধান করতেন। অতঃপর ১৮১৯ খ্রিষ্টাব্দের পরিচালনা কাঠামোতে কিছুটা পরিবর্তন এনে বিশেষ টিমের পরিবর্তে একজন সেক্রেটারি ও একজন সহকারী সেক্রেটারী নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর ১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দে পরিচালনা কাঠামোতো আবারও পরিবর্তন এনে অধ্যক্ষের পদ সৃষ্টি করা হয়। ১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত দীর্ঘ ৭৭ বছরে পযার্য়ক্রমে ২৬ জন ব্রিটিশ অফিসার অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন কিন্তু ওই সময়ে মাদরাসার স্বকীয়তা নষ্ট হয়নি এবং অনেক মনীষি, আলেম-ওলামা তৈরি হয়েছেন। তাই মাদরাসার প্রশাসনিক পদে জেনারেল শিক্ষক নিয়োগ হলে মাদরাসার স্বকীয়তা নষ্ট হবে, এই কথা ভিত্তিহীন বরং অ্যারাবিক ও নন-অ্যারাবিক শিক্ষকদের সমন্বয়ে মাদ্রাসার প্রশাসনিক কাঠামো নিশ্চিত করতে পারলে মাদরাসা শিক্ষার আধুনিকায়ন ও মানোন্নয়ন সম্ভব হবে।
তাই নেতারা মাদরাসার প্রশাসনিক পদে জেনারেল শিক্ষকদের নিয়োগের সুযোগ রেখে মাদরাসার জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা সংশোধন করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব (লিংক যাবে) করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।