গাজীপুরে এক মাদরাসা থেকে ছাত্রর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার গাজীপুর মহানগরের দক্ষিণ ছায়াবিথী এলাকার ইশায়াতুল কোরআন মাদরাসা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই ছাত্রের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে বুধবার দুপুরে মাদরাসার এক শিক্ষককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদিন বিকেলে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে ছাত্রের লাশ তার স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
গ্রেফতার শিক্ষক মো. আসাদুজ্জামান ইশায়াতুল কোরআন মাদরাসার (আবাসিক) শিক্ষক। নিহত ছাত্র মো. সাব্বির রহমান (১২), কিশোরগঞ্জের ইটনা থানার পাতারকান্দি এলাকার আবু বকরের ছেলে। দক্ষিণ ছায়াবিথী আবাসিক এলাকায় ভাড়া বাসায় স্ত্রী সন্তানসহ থাকেন আবু বকর। বাবা দিনমজুর এবং মা গৃহপরিচারিকার কাজ করে সংসার চালান।
নিহতের বোন স্মৃতি আক্তার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, প্রতিদিন সাব্বির দুপুরে বাসায় গোসল ও খাবার খেতে বাসায় আসতো। পরে আবার মাদরাসায় চলে যেতো। রাতে সেখানেই থাকতো। সকালে ও রাতে আমরা বাসা থেকে খাবার দিয়ে আসতাম। অন্যদিনের মতো মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে তাকে মাদেোসায় খাবার দিয়ে বাসায় আসি। আসার সময় সাব্বিরকে বেশ হাসিখুসি দেখে আসি। পরে দুপুরে খবর আসে সাব্বিরের সতীর্থ আলিফকে শিক্ষক আসাদুজ্জামান সকালে বেশ মারধর করে। প্রতিবেশী আলিফের ভাগ্নে সানিও একই মাদরাসায় পড়ে। তারা সাব্বিরের মৃত্যুর খবর পায়।
স্মৃতি আরো জানান, অন্যদের মতো মামা-ভাগ্নেও সেদিন দুপুরে বাসায় গোসলে ও খেতে যায়। বাসায় যাওয়ার সময় মাদরাসার শিক্ষকরা সাব্বিরের মৃত্যুর খবর কাউকে বলতে না করে দেন। কিন্তু সানি বিষয়টি তার মায়ের কাছে বলে দিলে তার মা সাব্বিরের মাকে তা জানান। পরে স্মৃতি তার এক প্রতিবেশীকে নিয়ে মাদরাসায় গিয়ে দেখেন মাদরাসার কক্ষে সাব্বিরের লাশটি গলায় গামছা বাধা অবস্থায় পড়ে আছে। তার লাশটি কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। মাদরাসা শিক্ষকের মৃত্যুর কারণ জানতে চাইলে জানান, সাব্বির না-কি গলায় গামছা বেধে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে এবং তার হাতে একটি চিরকুট ছিলো। বিষয়টি ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে জানানো হয়।
সদর থানার এসআই মো. মনিরুজ্জামান তার সহকর্মীদের নিয়ে মঙ্গলবার বিকেলে সাব্বিরের লাশ উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠান।
বুধবার দুপুরে সাব্বিরের বাবা আবু বকর বাদি হয়ে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এদিন দুপুরে সাব্বিরের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন চিকিৎসক রোমান আল মামুন। ঘটনার পর থেকেই তার বাবা ও মা পুত্রশোকে কান্না করতে করতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। তারা বলছেন, ঘটনার পর মাদরাসা থেকে সাব্বির মৃত্যুর কোন সংবাদ জানায়নি এবং শিক্ষক আসাদুজ্জামান তার মোবিাইল ফোনটি বন্ধ করে রাখেন।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক রোমান আল মামুন জানান, নিহত সাব্বিরের মাথায় আঘাতের চিহ্ন আছে। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট হাতে না আসা পর্যন্ত এখনই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বলা সম্ভব নয়।
সাব্বিরের ভগ্নিপতি মো. আলমগীর জানান, সাব্বির আত্মহত্যা করেনি। তার মাথায় ফুলা জখম রয়েছে। আর চিরকুটের লেখাও তার হাতের নয়। এটি তদন্ত করলেই আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে। মামলায় মাদরাসা শিক্ষক আসাদুজ্জামানকে আসামি করা হয়েছে।
জিএমপির সদর থানার ওসি জিয়াউল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, মঙ্গলবার দুপুরে ৯৯৯ নম্বরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সাব্বিরের লাশ উদ্ধার করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। ময়না তদন্তের রিপোর্ট পেলেই শিশুটির মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। এ ব্যাপারে বুধবার নিহতের বাবা মামলা দায়ের করার পরে এদিন দুপুরে মাদারাসা শিক্ষক আসাদুজ্জামানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।