মাদরাসায় চলে যায় প্রাথমিকের ২৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ শিক্ষার্থী - দৈনিকশিক্ষা

মাদরাসায় চলে যায় প্রাথমিকের ২৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ শিক্ষার্থী

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

সাধারণ স্কুল ছেড়ে অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলে যাওয়ার হার ৩৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এটা প্রাথমিক স্তরের হিসেব। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্থানান্তর হয় মাদরাসায়। এই হার ২৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ। অন্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংযুক্ত সরকারি প্রাথমিকে ৩ দশমিক  ০৪ শতাংশ, কিন্ডারগার্টেনে ২ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং এনজিও বিদ্যালয়ে ১ দশমিক ২২ শতাংশ। জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ) ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) পরিচালিত এক গবেষণা সমীক্ষায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। শিক্ষার্থীদের মাদরাসায় চলে যাওয়ার কারণ হিসেবে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, অভিভাবকদের ধর্মীয় অনুভূতি, করোনার সময় স্কুল বন্ধ থাকলেও মাদরাসা চালু থাকা, মাদরাসায় সন্তান নিরাপদ থাকবে বলে মনে করা।

বুধবার (১৩ নভেম্বর) রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিবর্তন ও ঝরে পড়ার অবস্থান বিশ্লেষণ : ময়মনসিংহ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। গবেষণায় ১৮৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে নমুনায়নের মাধ্যমে ৪৪টি থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দর জুলাই থেকে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দর জুন পর্যন্ত এই গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। নেপ-এর মহাপরিচালক ফরিদ আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহাম্মদ, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আব্দুল হাকিম, ইউরোপীয় ইউনিয়নের হেড অব ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন মাইকেল ক্রেজজা প্রমুখ।

গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের কনসালট্যান্ট দেবরাহ ওয়েবার্ন, নেপ-এর সহকারী বিশেষজ্ঞ মাহবুবুর রহমান ও এ টি এম রাফেজ আলম।

কোনো কোনো উত্তরদাতা বলেন, শিক্ষকদের আন্তরিকতার অভাব বা স্কুলে লেখাপড়া না হওয়ায় সন্তানকে মাদরাসায় নিয়ে গেছেন। আবার অনেক অভিভাবক মনে করেন, বর্তমানে বাংলা মাধ্যমে লেখাপড়ায় চাকরির অভাব। কিছু অভিভাবক বলেন, সরকারি প্রাথমিকে পরীক্ষার সংখ্যা কম। এ জন্য তাঁদের সন্তানদের মাদরাসায় ভর্তি করেছেন। 

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, গবেষণা এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঝরে পড়ার হার ১০ দশমিক ৯৭ শতাংশ।

এর মধ্যে ১৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ বালক এবং ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ বালিকা। সবচেয়ে বেশি ঝরে পড়ে জাতীয় করা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, ১২ দশমিক ৯১ শতাংশ। শহর এলাকার সরকারি প্রাথমিকে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ, গ্রামীণ এলাকার প্রাথমিকে ১১ দশমিক ০১ শতাংশ, পুরনো সরকারি প্রাথমিকে ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ, এ গ্রেডভুক্ত সরকারি প্রাথমিকে ৯ দশমিক  ৯৫ শতাংশ এবং বি গ্রেডভুক্ত সরকারি প্রাথমিকে ঝরে পড়ে ১২ দশমিক  ২৪ শতাংশ শিক্ষার্থী।

ঝরে পড়ার কারণ হিসেবে বলা হয়, দারিদ্র্য, অভিভাবকদের অসচেতনতা, শিশুশ্রম, পড়াশোনায় অমনোযোগিতা, পারিবারিক সমস্যা, অভিভাবকদের বাসস্থান পরিবর্তন, করোনায় বিদ্যালয় বন্ধ থাকা, শিক্ষকদের অবহেলা ও অদক্ষতা, অনিয়মিত উপস্থিতি, বাল্যবিবাহ, খেলাধুলার প্রতি নেশা, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে দুর্বল হওয়ায় তৃতীয় শ্রেণিতে গিয়ে ঝরে পড়ে।

ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের পেশা সম্পর্কে বলা হয়, দিনমজুর ও শ্রমিকদের সন্তানরা সবচেয়ে বেশি, ৪৭ শতাংশ ঝরে পড়ে। এরপর কৃষকদের সন্তান ১৭ শতাংশ, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ১৩ শতাংশ, অটো-সিএনজি-বাস-ট্রাকের চালক ৮ শতাংশ, কাঠমিস্ত্রি-রাজমিস্ত্রি ৪ শতাংশ, গৃহকর্মী ৩ শতাংশ এবং গার্মেন্টস শ্রমিকদের সন্তানদের ঝরে পড়ার হার ১ শতাংশ।

গবেষণা প্রতিবেদনে পরিস্থিতির উন্নয়নে ১৩টি সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থীর তথ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত ডাটাবেইস তৈরি, শ্রেণিকক্ষ সুসজ্জিত ও খেলাধুলার সামগ্রীর ব্যবস্থা করা, শিক্ষার্থীদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করা, স্কুল ফিডিংয়ের ব্যবস্থা করা, গণিত ও ইংরেজি বিষয়ে দক্ষ শিক্ষকের ব্যবস্থা করা, বিদ্যালয়ের সঙ্গে স্থানীয় মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়ানো, বাল্যবিবাহ রোধে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি, প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার জবাবদিহি নিশ্চিত করা।

অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে খাবার কর্মসূচি পর্যায়ক্রমে চালু করা হবে। স্কুলগুলোকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে গড়ে তুলতে হবে, যাতে বাচ্চারা আনন্দের সঙ্গে লেখাপড়া করতে পারে। শিক্ষার্থীদের সমাজের উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। তাদের যৌক্তিকভাবে শেখাতে হবে, যাতে সে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে পারে।

 

পুরনো পদ্ধতিতে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা - dainik shiksha পুরনো পদ্ধতিতে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা শিক্ষায় কী হলো তিন মাসে - dainik shiksha শিক্ষায় কী হলো তিন মাসে মাদরাসায় চলে যায় প্রাথমিকের ২৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ শিক্ষার্থী - dainik shiksha মাদরাসায় চলে যায় প্রাথমিকের ২৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ শিক্ষার্থী কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক অবশেষে কপাল খুললো পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তিতে বাদপড়াদের - dainik shiksha অবশেষে কপাল খুললো পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তিতে বাদপড়াদের শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ১৫তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ১৫তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে গণঅভ্যুত্থানে আহতদের তোপের মুখে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা - dainik shiksha গণঅভ্যুত্থানে আহতদের তোপের মুখে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা দপ্তরসহ সাবেক শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রীকে চালাতেন পিয়ন! - dainik shiksha দপ্তরসহ সাবেক শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রীকে চালাতেন পিয়ন! ৬১০ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীর শিক্ষা অধিদপ্তরে নিয়োগ চূড়ান্ত! - dainik shiksha ৬১০ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীর শিক্ষা অধিদপ্তরে নিয়োগ চূড়ান্ত! দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034871101379395