মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার কমিয়ে আনতে এবার জোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ ছাড়াও শিখনগতি বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষকদের দক্ষতা বাড়ানোর লক্ষ নিয়ে নতুন এক প্রকল্প গ্রহণ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এই প্রকল্পে মাধ্যমিক পর্যায়ের মোট ৩ লাখ ৬৭ হাজার ৮৯০ জন শিক্ষককের প্রশিক্ষণ, শিখন ঘাটতি পূরণ ও মাধ্যমিক পর্যায়ের ১০ হাজার ৩৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুইটি করে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হবে।
গতকাল মঙ্গলবার লার্নিং এক্সিলারেশন ইন সেকেন্ডারি এডুকেশন (লেইস) নামের এই প্রকল্পের উদ্বোধন শেষে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর। প্রকল্প ব্যয়ের ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে চলতি বছরের অক্টোবর থেকে ২০২৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত।
জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘লার্নিং এক্সিলারেশন ইন সেকেন্ডারি এডুকেশন’ প্রকল্পের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় প্রায় ৩ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশে শিক্ষাক্ষেত্রে রূপান্তরে সরকার বিগত দশকে ব্যাপক অগ্রগতি সাধন করেছে, যার ফলে শিক্ষায় লক্ষণীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে।
কিন্তু কোভিড-১৯ অতিমারি শিক্ষার চলমান উন্নয়নে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে, বিশেষত মাধ্যমিক শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে শিখন খাটতি সৃষ্টি হয়েছে।
এ সমস্যা নিরসনে ও নতুন শিক্ষাক্রমের চাহিদাপূরণে বাংলাদেশ সরকার বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় লার্নিং এক্সিলারেশন ইন সেকেন্ডারি এডুকেশন প্রজেক্টটি গ্রহণ করেছে।
এই প্রকল্প ৩টি মূল লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে বাস্তবায়িত হবে, মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের শিখন ত্বরান্বিত ও ধরে রাখার হার বৃদ্ধি, মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থার সহনক্ষমতা উন্নয়ন।
লেইস প্রকল্পের মাধ্যমে মাধ্যমিক পর্যায়ের মোট ৩ লাখ ৬৭ হাজার ৮৯০ জন শিক্ষককে (স্কুল: ২ লাখ ৭০ হাজার ৮১০ ও মাদরাসা ৯৭ হাজার) বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
এর মধ্যে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট ট্রেনিং, নতুন শিক্ষকদের জন্য বেসিক ট্রেইনিং, মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের জন্য (স্কুল ও মাদরাসা) লিডারশিপ ট্রেনিং, শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন, কাউন্সেলিং ও বুলিং প্রতিরোধ বিষয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, ব্লেন্ডেড লার্নিং বিষয়ে শিক্ষক প্রশিক্ষণ, লাইব্রেরিয়ানদের জন্য প্রশিক্ষণ, শিক্ষকদের জন্য আইসিটি বিষয়ক প্রশিক্ষণ, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ বিপর্যয়রোধের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে প্রশিক্ষণ ইত্যাদি।
মাধ্যমিক পর্যায়ের ১০ হাজার ৩৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (৬ হাজার ৯২৮টি স্কুল, ৩ হাজার ৪১২টি মাদরাসা) প্রতিটিতে ২টি করে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হবে।
সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে মোট ২৯ হাজার ৫৮৫টি প্রতিষ্ঠানে (স্কুল ১৮ হাজার ৮৯৪, স্কুল ও কলেজ ১৪ হাজার ২০টি এবং মাদরাসা ১২ হাজার ৯১টি) লাইব্রেরির অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে।
এ ছাড়াও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের ২৯ হাজার ৫৮৫টি প্রতিষ্ঠানে বই বিতরণ করা হবে।