মাস্টার্সে ছেলের সহপাঠী হচ্ছেন মা - দৈনিকশিক্ষা

মাস্টার্সে ছেলের সহপাঠী হচ্ছেন মা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

জুলিয়া আইরিন ১৯৯৪-৯৫ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষার পর তাঁর প্রথম সন্তান মো. মুকসেতুল ইসলাম ওরফে আলিফের জন্ম হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী-বন্ধু-পরিচিতজনেরা তখন জুলিয়াকে ‘আলিফের আম্মু’ বলে ডাকা শুরু করেন। জুলিয়া এখন তাঁর ছেলে আলিফের সঙ্গে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগে ‘প্রফেশনাল মাস্টার্স’ করতে যাচ্ছেন। মঙ্গলবার (১১ জুলাই) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন মানসুরা হোসাইন।

জুলিয়া আইরিন ও তাঁর ছেলে মো. মুকসেতুল ইসলাম ওরফে আলিফ। ছবি: সংগৃহীত

প্রতিবেদনে আরো জানা যায়, জুলিয়ার সঙ্গে গতকাল সোমবার বিকেলে কথা হয় প্রথম আলোর। তিনি বলেন, ‘যে ছেলেকে পেটে নিয়ে ক্যাম্পাসে ঘুরেছি, জন্মের পর যাকে নিয়ে ক্লাসে গেছি, এখন আবার তার সঙ্গে পড়তে যাব। একসময় ক্যাম্পাসে মায়ের হাত ধরে থাকত ছেলে। এখন ছেলের হাত ধরে থাকব আমি। ব্যাপারটি ভাবতেই ভালো লাগছে।’

খুলনার মেয়ে জুলিয়ার পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের ১০ দিনের মাথায়। বিয়ের পর জুলিয়া খুলনা থেকে ঢাকায় তাঁর স্বামী মো. মিজানুল ইসলামের বাড়িতে চলে আসেন। ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে। ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে ছেলের আলিফের জন্ম হয়।

জুলিয়া বলেন, অনার্স প্রথম বর্ষের ফাইনালের মৌখিক পরীক্ষার এক দিন পরই ছেলের জন্ম হয়। জন্মের পর ছেলেকে নিয়েই ক্লাসে যেতেন তিনি। অনার্সের পর মাস্টার্স করেন। মাস্টার্সের পরীক্ষার সময় তাঁর গর্ভে ছিল সাত মাসের মেয়ে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে মাস্টার্স শেষ করার পর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন এলএলবি করেন জুলিয়া। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আইন পেশায় যোগ দেন।

জুলিয়ার ছেলে আলিফ সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগ থেকে স্নাতক (সম্মান) করেছেন। তিনি একই বিভাগে নিয়মিত স্নাতকোত্তরে (মাস্টার্স) ভর্তি হননি। তিনি ও তাঁর মা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগে প্রফেশনাল মাস্টার্স করার জন্য পরীক্ষা দেন। পরীক্ষায় উভয়ই ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। এখন তাঁরা ভর্তির অপেক্ষায় আছেন। 

ভর্তি পরীক্ষার তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানিয়েছেন আলিফ। পোস্টটি মা জুলিয়া শেয়ার করে সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। মা-ছেলের পোস্ট ফেসবুকে শেয়ার হচ্ছে। অনেকেই তাঁদের শুভকামনা জানাচ্ছেন।

হাসতে হাসতে জুলিয়া বলেন, ‘কখনো সুযোগ হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আরেকটা মাস্টার্স করার ইচ্ছা ছিল আমার। তা ছাড়া নানা কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে আমার অংশ নেওয়া হয়নি। এ নিয়ে আমার মনে একটা আক্ষেপ ছিল। পরে ভাবলাম, ছেলের সঙ্গেই ভর্তি হব। তবে এত বছর পর ভর্তি পরীক্ষা দেওয়া নিয়ে একটু চিন্তিত ছিলাম। ছেলে নিজেই আমাকে ভর্তি পরীক্ষার জন্য পড়িয়েছে। ভর্তি পরীক্ষায় মা-ছেলে দুজনেরই হয়ে গেল। বলা যায়, আমার আরেকটি স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে।’

৪৭ বছর বয়সী জুলিয়া জানান, তাঁর ছেলে এখন নেপালে আছেন। দেশে ফেরার পর দুজনে ভর্তিপ্রক্রিয়া শেষ করবেন। প্রফেশনাল মাস্টার্সের ক্লাস হবে শুক্র ও শনিবার। এই বয়সে তাঁকে নতুন করে আবার পড়ালেখা শুরু করতে হবে, এটা ভেবে তিনি রোমাঞ্চিত। তবে তাঁর বিশ্বাস আছে, তিনি পারবেন।

শ্বশুর-শাশুড়িসহ যৌথ পরিবারে থাকেন জুলিয়া। তিনি বলেন, আগে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন, তখন সংসারসহ সবকিছুই সামাল দিতে হয়েছে। রাতে সবাই ঘুমিয়ে গেলে তখন তিনি পড়তে বসতেন। ফলে তাঁকে কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। তবে সেই যাত্রায় স্বামী-শ্বশুর-শাশুড়িসহ সবার সমর্থন পেয়েছেন তিনি। এবারও এই সমর্থন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী তিনি।

এখন সংসারের ব্যস্ততা কমেছে কি না, জানতে চাইলে জুলিয়া বলেন, ব্যস্ততা কমেছে, তা বলার উপায় নেই। স্বামী-সন্তান তো আছেই; বয়স্ক শ্বশুর-শাশুড়িকেও দেখভাল করতে হয় তাঁর। তা ছাড়া নিজের মা-বাবারও বয়স হয়েছে। তাঁদেরও দেখাশোনা-খোঁজখবর রাখতে হয়। তাই এখনো পড়াশোনার জন্য সময় বের করা নিয়ে কিছুটা চিন্তায় আছেন তিনি।

প্রফেশনাল মাস্টার্সের পরের পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে জুলিয়া বলেন, এই সার্টিফিকেট কাজে লাগিয়ে চাকরি বা অন্য কিছু করার ইচ্ছা নেই তাঁর। তবে এখানে বিভিন্ন কোর্সে মানবাধিকারসহ বিভিন্ন বিষয় পড়তে হবে, যা তাঁর আইন পেশায় কাজে লাগবে। আসলে ইচ্ছা পূরণের জন্যই তিনি প্রফেশনাল মাস্টার্সে ভর্তির জন্য পরীক্ষা দিয়েছেন।

জুলিয়ার মেয়ে তাসনিম বিনতে ইসলাম শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজিতে গ্রাফিক ডিজাইন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া বিভাগে অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ছেন। জুলিয়ার স্বামী মিজানুল রাজধানীর একটি স্কুলের ক্রীড়া বিভাগের প্রধানের পদে আছেন। জুলিয়া জানান, তাঁর স্বামী বলেছেন, পড়াশোনা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। কোনো না কোনোভাবে ব্যবস্থা হয়ে যাবে।

জুলিয়ার বড় বোন বিয়ের পর আর পড়াশোনা করেননি। বিষয়টি তাঁকে খুব পীড়া দিয়েছে জানিয়ে জুলিয়া বলেন, তিনি নিজে পড়াশোনা করতে ভালোবাসেন। তাই বিয়ের পরও নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে পড়াশোনাটা চালিয়ে গেছেন। জীবনে বাধাবিপত্তি আসবেই। তাই বলে থেমে থাকলে চলবে না। নিজের পথ নিজেকেই করে নিতে হবে।

যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার - dainik shiksha কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত - dainik shiksha উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে - dainik shiksha ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন - dainik shiksha সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের - dainik shiksha জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক - dainik shiksha মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.028723955154419