দৈনিকশিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের দুপুরের খাবারে (মিড–ডে মিল) এবার দুধ, ডিম, রুটি দেওয়ার প্রস্তাব করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। প্রস্তাবে সপ্তাহে পাঁচ দিন শিক্ষার্থীদের মিড-ডে মিল দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তাতে দুই দিন ডিম-পাউরুটি, এক দিন দুধ-পাউরুটি, এক দিন শুধু বিস্কুট ও এক দিন মৌসুমি ফলের সঙ্গে অন্য খাবার দেওয়া হবে।
পরীক্ষামূলকভাবে ১৫০ উপজেলার ১৯ হাজার বিদ্যালয়ের ৩৫ লাখ শিক্ষার্থীকে বৈচিত্র্যময় খাবার দিতে এই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্প সফল হলে সারা দেশে এ কর্মসূচি চালু করা হবে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের মেয়াদ তিন বছর। পরে মেয়াদ বাড়ানো হবে।
এর আগে খিচুড়ি দেওয়ার পরিকল্পনা করে প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও সমালোচনার মুখে সেটা বাতিল করা হয়।
সরকারি স্কুল ফিডিং কর্মসূচি (প্রথম পর্যায়) শীর্ষক এই প্রস্তাবিত প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে দেবে ৪ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) অনুদান দেবে ৬৪ কোটি টাকা। এ–সংক্রান্ত প্রস্তাবটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। আগামী বৃহস্পতিবার এ প্রকল্পের ওপর আন্তমন্ত্রণালয় সভা ডেকেছে পরিকল্পনা কমিশন। শিশু শিক্ষার্থীদের মিড–ডে মিল দেওয়া সরকারের অগ্রাধিকারে থাকায় প্রকল্পটি দ্রুত অনুমোদন দেওয়া হতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে পরিকল্পনা কমিশন থেকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু বৈচিত্র্যময় খাবার দিলে হবে না। পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার নিশ্চিত করা না গেলে খিচুড়ির বদলে অন্য খাবার দিলেও সুফল পাওয়া যাবে না।
এর আগে ২০২১ সালে সারা দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ কোটি ৪৮ লাখ শিক্ষার্থীকে সপ্তাহে পাঁচ দিন খিচুড়ি ও এক দিন বিস্কুট খাওয়ানোর প্রস্তাব করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। তখন এ প্রস্তাব নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। একই বছর ১ জুন ‘প্রাইমারি স্কুল মিল’ শিরোনামের প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তোলা হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খিচুড়ি বিতরণের প্রস্তাব বাতিল করে দেন। সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বাস্তবসম্মত ও কার্যকর কোনো বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
স্কুলে শিক্ষার্থীদের বিকল্প খাবার কী দেওয়া যায়,তা নিয়ে একটি সমীক্ষা করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। তাতে শিক্ষার্থীরা দুধ, পাউরুটি, ডিমের ওপর জোর দেয়। প্রস্তাবিত প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের মেয়াদ তিন বছর। পরে মেয়াদ বাড়ানো হবে।
প্রকল্পের নথিপত্র থেকে দেখা যায়, এ প্রকল্পের আওতায় খাদ্যসামগ্রী কেনাকাটায় ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ১৮১ কোটি টাকা, যা মোট প্রকল্পের প্রায় ৮৮ ভাগ। এ ছাড়া ঠিকাদার নিয়োগ, গুদাম, পরিবহন, সার্ভিস চার্জ, খাদ্য বিতরণ ও প্যাকেট করার খরচ ধরা হয়েছে ২৮৩ কোটি টাকা। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকবেন ২১ হাজার কর্মী। তাঁদের সম্মানী ভাতা বাবদ ৪০ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া অ্যাপ্রোন ও রুমাল কেনাকাটায় খরচ ধরা হয়েছে ৩০ কোটি টাকা।
তবে কিসের ভিত্তিতে খাদ্যসামগ্রী কেনাকাটায় ৪ হাজার ১৮১ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হলো এবং কিসের ভিত্তিতে ১৫০ উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্ধারণ করা হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে পরিকল্পনা কমিশনের।
এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মিজানুর রহমান বলেন, সরকারি ক্রয়বিধিমালার আলোকে সবকিছু কেনাকাটা হবে। খাবার বিতরণ করবেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মী ও প্রকল্পে নিয়োগকৃত কর্মীরা। দারিদ্র্যপ্রবণ উপজেলাকে প্রথম দফায় অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।