‘নড়াইল জেলার লোহাগাড়া এলাকার চারটি বিকাশ নম্বর থেকে রাঙ্গনিয়ায় আমার বিকাশ নম্বরে ৮৭ হাজার ৪৬২ টাকা ক্যাশ আউট হয়। তবে দীর্ঘদিন আগের ঘটনা হওয়ায় লেনদেন সংক্রান্ত রেজিস্ট্রার আমার সংরক্ষণে নেই এবং টাকা গ্রহণকারীদের চেহারাও আমার স্মরণ নেই। পরবর্তীতে জানতে পারি, এ টাকাগুলো এসপি বাবুল আক্তার সাহেবের স্ত্রী মিতু হত্যাকাণ্ডের খুনিরা রিসিভ করেছে।’
মিতু হত্যা মামলার গতকাল আদালতে দেয়া সাক্ষ্যে এসব কথা বলেন রাঙ্গুনিয়ার রোয়াজারহাটের মাছ বাজারের উত্তর পাশের মসজিদ মার্কেটের রাঙ্গুনিয়া টেলিকমের স্বত্বাধিকারী মো. মহিউদ্দিন পারভেজ। চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিন তার সাক্ষ্য রেকর্ড করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী কেশব নাথ বলেন, সাক্ষ্য শেষে মো. মহিউদ্দিন পারভেজকে জেরা করেন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা। এ নিয়ে ১৩ জনের সাক্ষ্য শেষ হয়েছে। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
গতকালের সাক্ষ্যে মো. মহিউদ্দিন পারভেজ বলেন, আমি বিকাশের এজেন্ট এবং রাঙ্গুনিয়া, রাউজান ও কাপ্তাই এই তিন থানার বিকাশের ম্যানেজার। আমি ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে রোয়াজারহাটের মাছ বাজারের উত্তর পাশের মসজিদ মার্কেটে রাঙ্গুনিয়া টেলিকম নামের দোকান নিয়ে বিকাশ ব্যবসা শুরু করি। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ঐ বিকাশ এজেন্ট নম্বরটা দিয়া আমি বিকাশ ব্যবসা করি। এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু হত্যাকাণ্ডের মামলায় পিবিআইয়ের তদন্তকারী কর্মকর্তা আমাকে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসের লেনদেনের তথ্য উপস্থাপন করলে আমি দেখতে পায়, নড়াইল জেলার লোহাগাড়া থানার কাজী আল মামুন নামে রেজিস্ট্রেশন করা নম্বর থেকে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জুন আমার বিকাশ নম্বরে ২৪ হাজার ৪৬২ টাকা ক্যাশ আউট হয়। একই দিন ১টা ১০ মিনিটে একই ব্যক্তির নামে রেজিস্ট্রেশন করা বিকাশ নম্বর থেকে আমার বিকাশে ২৪ হাজার ৫০০ টাকা ক্যাশ আউট হয়। একই দিন সন্ধ্যা ৭টা ৪১ মিনিটে লোহাগাড়া থানার নাছির টেলিকমের বিকাশ থেকে আমার বিকাশে ১৮ হাজার ৫০০ টাকা ক্যাশ আউট হয় এবং একই বছরের ১৫ জুন রাত সাড়ে ১০টার সময় ঢাকার মোহাম্মদপুরের বছিলার এমএম এন্টারপ্রাইজের বিকাশ থেকে আমার বিকাশে ২০ হাজার টাকা ক্যাশ আউট হয়। এই ৪টি নম্বর থেকে আমার বিকাশ নম্বরে উল্লেখিত সময়ে সর্বমোট ৮৭ হাজার ৪৬২ টাকা ক্যাশ আউট হয়।
আদালত সূত্র জানায়, আলোচিত এ হত্যা মামলায় গত ১৩ মার্চ চার্জ গঠনের মাধ্যমে বিচারকাজ শুরু হয়। এর আগে গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর মিতুর স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারসহ সাত আসামির বিরুদ্ধে মহানগর হাকিম আদালতে ২০ পৃষ্ঠার চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক আবু জাফর মো. ওমর ফারুক। চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, ২০১৩ থেকে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বাবুল আক্তার কঙবাজারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেখানে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএনএইচসিআর কঙবাজার কার্যালয়ের কর্মী ও ভারতীয় নাগরিক গায়ত্রীর সঙ্গে পরিচয় হয় এবং তার সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। এ কারণে স্ত্রী মিতুর সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়। এর জেরে তাকে খুনের সিদ্ধান্ত নেন বাবুল। একপর্যায়ে খুনিদের ৩ লাখ টাকায় ভাড়া করে মিশন শেষ করেন। পরে পরিকল্পনা মতো এ হত্যাকাণ্ডকে জঙ্গিদের কাজ বলে প্রচারণা চালানো হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে গিয়ে বাসার অদূরে গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুনের শিকার হয় মাহমুদা খানম মিতু।