যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে মহান বিজয় দিবস উদযাপন করা হয়েছে। বিজয় দিবসের প্রথম প্রহর ১২ টা ১ মিনিটে রাজশাহী কলেজের শহীদ স্মৃতি সৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে কার্যক্রম শুরু হয়। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে নয়টায় রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড চত্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে একমিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
সকাল ১০ টায় শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিজয় দিবস উদযাপনের কমিটির আহ্বায়ক রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের উপ-পরিচালক (হিসাব ও নিরীক্ষা) মো. বাদশা হোসেন। আরও বক্তব্য দেন অফিসার্স কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি যথাক্রমে মো. মুঞ্জুর রহমান খান ও মোহা হুমায়ূন কবির। এতে প্রধান আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের রাজশাহী মহানগর ইউনিটের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মো. আব্দুল মান্নান।
প্রধান আলোচক মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের পর ছাত্রলীগসহ অন্যান্য প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬শে মার্চ মহান স্বাধীনতার চূড়ান্ত ঘোষণা দিলে আমরা স্থানীয়ভাবে রাজশাহীতে ইপিআর, পুলিশ ও ছাত্র-জনতা সমাবেতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলি। প্রতিরোধ যুদ্ধের একপর্যায়ে আমরা চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত পেরিয়ে মালদা চলে যাই।
সেখানে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আ আ ম মেসবাহুল হক (বাচ্চু ডা.) এর নেতৃত্বে আমরা সংগঠিত হয়ে তার নেতৃত্বে গৌড়ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিতে থাকি। এই ক্যাম্পে পরিদর্শনে আসেন রাজশাহীর গণমানুষের নেতা এ এইচ এম কামারুজ্জামান। তিনি মুক্তিকামী যুবকদের নিয়ে যুব ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করতে মালদায় সংগঠিত যুবকদের উদ্বুদ্ধ করেন। দীর্ঘ নয় মাস আমরা দখলদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে লড়াই করে এই দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনি। তিনি নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের সভাপতি রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, এই দিনটি আমাদের জন্য গর্বের, গৌরবের, আনন্দের ও প্রাপ্তির। তিনি দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের শক্ত হাতে প্রতিহত করে অর্জিত বিজয় সুনিশ্চিত করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এই বিজয়কে ধরে রাখার জন্য আমাদের স্ব স্ব কর্মস্থল থেকে স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করে যেতে হবে এবং দেশকে ভালবাসতে হবে। অন্ধকারের কালনাগিনীরা যে ফোনা তুলছে তাদেরকে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। তারা দন্তহীন কাপুরুষ। তিনি মুক্তিযুদ্ধে নিহত সব শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।
আলোচনা অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে রচনা প্রতিযোগিতা কমিটির আহ্বায়ক রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক মহা. জিয়াউল হকের সঞ্চালনায় ‘শেখ রাসেল দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। তিনটি ক্যাটাগরিতে নয়জন শিক্ষার্থীকে পুরস্কার হিসেবে বঙ্গবন্ধুর লেখা একসেট বই, সনদ ও প্রাইজমানি পুরস্কার হিসেবে দেয়া হয়। বিজয়ী শিক্ষার্থীরা এই ধরণের আয়োজন করার জন্য শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ জানান এবং ভবিষ্যতে আরও বেশি প্রতিযোগিতা করার কথা বলেন।
পরে বাদ আসর শিক্ষা বোর্ড জামে মসজিদে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া পরিচালনা করেন শিক্ষা বোর্ড জামে মসজিদের ইমাম আবুল হাশেম মো. রহমাতুল্লাহ।
আলোচনা সভার কার্যক্রম পরিচালনা করেন রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের প্রধান মূল্যায়ন অফিসার (চলতি দায়িত্ব) এস এম গোলাম আজম।