সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা প্রায়ই একেক প্রতিষ্ঠানের একেক রকমের হয়, যা জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। তাই সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের পরিসংখ্যান যাচাই-বাছাই ছাড়া প্রকাশ না করতে বেসরকারি সংগঠনগুলোকে চিঠি দিয়েছে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।
বিআরটিএর পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী স্বাক্ষরিত ১১ এপ্রিলের এই চিঠিতে বলা হয়েছে, রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পরিসংখ্যান তাৎক্ষণিক যাচাই-বাছাই করা হয়। এতে দেখা যায়, মার্চে ৩২২ দুর্ঘটনায় ৪৬০ জন নিহত এবং ১ হাজার ২৮ জন আহত হয়েছেন। শতভাগ সরেজমিন যাচাই হলে হতাহতের সংখ্যা আরও কমবে।
সংস্থাটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত মার্চ মাসে দেশে ৩৮৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৪১৫ জন। আহত হয়েছেন ৬৮৮ জন। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পরিসংখ্যান অনুযায়ী মার্চে ৪৮৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৬৪ জন নিহত এবং ১ হাজার ৯৭ জন আহত হয়েছেন। যাত্রীকল্যাণ সমিতির তথ্যানুযায়ী, ৪৮৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৩৮ জন নিহত এবং ১ হাজার ১৩৮ জন আহত হয়েছেন।
সংখ্যার এই তারতম্যের বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে গত ৬ এপ্রিল বেসরকারি চারটি সংগঠনকে প্রথম দফায় চিঠি দেয় বিআরটিএ। বিআরটিএর সঙ্গে যাচাই-বাছাই ছাড়া তথ্য প্রকাশ না করার নির্দেশনার বিষয়ে সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে জনসংখ্যা, যানবাহন ও সড়কের অনুপাতে দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা অনেক কম। অতিরঞ্জিত তথ্যে সড়ক নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়েছে। বিশ^ব্যাংকের অর্থায়নে দুর্ঘটনার ডাটা সেন্টার তৈরিতে প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এতে সব বিভ্রান্তি দূর হবে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ৬ এপ্রিল দুপুরে চিঠি দিয়ে বিকেল ৪টার মধ্যে ব্যাখ্যা চায় বিআরটিএ। সময় স্বল্পতার কারণে সমিতি ওই দিন ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। তবে ব্যাখ্যা তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল বুধবার চিঠি দিয়ে যাচাই-বাছাই ছাড়া পরিসংখ্যান প্রকাশ করতে নিষেধ করেছে বিআরটিএ।
তিনি আরও বলেন, সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়। আর বিআরটিএর হিসাবেই মার্চ মাসে ৩৮৭ দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ৪১৫ জনের। তারা কীসের ভিত্তিতে এই তথ্য প্রকাশ করেছে? বিআরটিএর জনবলের প্রতিটি দুর্ঘটনা লিপিবদ্ধ করার সক্ষমতা রয়েছে কি?
সংশ্লিষ্টরা জানান, পুলিশের পরিসংখ্যানের সঙ্গে বিআরটিএর তথ্যের ফারাক রয়েছে। বিআরটিএ জানিয়েছে, গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে ৬৩০ দুর্ঘটনায় ৬৩৬ জন নিহত হয়েছেন। পুলিশের হিসাবে, এই দুই মাসে ৫৫৭ দুর্ঘটনায় ৫৪২ জন নিহত হয়েছেন।
এর আগে গত ১৫ জানুয়ারি অংশীজন সভায় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী দাবি করেন, সড়কে প্রতিটি মৃত্যুর তথ্য পুলিশের তালিকায় আসে।