যেভাবে ঈদ উদযাপন করতেন নবীজি - দৈনিকশিক্ষা

যেভাবে ঈদ উদযাপন করতেন নবীজি

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক: হযরত আনাস ইবন মালিক রা. বর্ণনা করেছেন, জাহেলিয়া যুগের অধিবাসীরা প্রতিবছর দুটি দিনে উৎসব করত। মহানবী সা. মদিনায় এসে বললেন, তোমাদের জন্য দুটি দিন ছিল, তোমরা ফুর্তি করতে। আল্লাহ এখন তোমাদের ওই দুটি দিনের বদলে আরও বেশি উত্তম দুটো দিন সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছেন–ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। (নাসায়ি: ২০২১, মিশকাত: ১৪৩৯)

ঈদ উৎসবটির সত্যিকার তাৎপর্য যদি বুঝতে হয়, তাহলে আমাদের দেখতে হবে নবীজি সা. এবং সাহাবিগণ কীভাবে ঈদ উদ্‌যাপন করেছেন। আসুন, আমরা দেখি নবীজি এবং সাহাবাদের জীবনে ঈদ কেমন ছিল।

নবীজি সা. এর ঈদ উদযাপন
হযরত ইবনে জারীর রা. বর্ণনা মতে, দ্বিতীয় হিজরিতে রসুল সা. প্রথম ঈদ পালন করেছেন।

ঈদের দিন সকাল বেলায় নবীঘর ও তার চার পাশে সবকয়টি জায়গায় ঈদ আনন্দের আমেজ পরিলক্ষিত হচ্ছিল। এ সব কিছুই হচ্ছিল প্রিয় নবী সা. এর চোখের সামনে। প্রত্যেকে ঈদ আনন্দে নিজ নিজ অনুভূতি ব্যক্ত করছিল। তারা সকলেই চাইত তাদের নিজ নিজ অনুষ্ঠান সম্পর্কে যাতে বিশ্বনবী সা. অবগত হন। প্রিয় নবী সা. এর ভালোবাসা ও সম্মানের খাতিরেই তারা এসব করতেন।
 
একজন বিশ্বাসী বান্দা যখন এক মাসের সিয়াম সাধনা পূর্ণ করেন, তখন আল্লাহ তাকে নিজের মেহমান হিসেবে নিমন্ত্রণ জানান।এই নিমন্ত্রণ গ্রহণ করা মুমিনের কর্তব্য স্রেফ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মাসজুড়ে সংযমের পুরস্কার এটি।
 
রোজার মাধ্যমে রোজাদার কিছুটা হলেও উপলব্ধি করতে পারে সারাবছর অনাহারে থাকা মানুষের কষ্ট। তাই দুঃখী মানুষের মুখে ঈদের দিন হাসি ফোটাতে এবং রোজাদারের রোজা রাখতে গিয়ে যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছে, তার ক্ষতিপূরণ হিসেবে বিত্তবানদের ওপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব করা হয়েছে। তাই ঈদগাহে যাওয়ার আগেই সদকাতুল ফিতর আদায় করে দেয়া মুস্তাহাব।
 
ঈদগাহে যাবার পূর্ব-প্রস্তুতি
 

ঈদের দিন গোসল করার মাধ্যমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জন করাকেও নবীজি সা. গুরুত্ব দিতেন। তিনি ঈদের দিন খুব ভোরে উঠে গোসল করতেন এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করতেন। রসুল সা. ঈদগাহে যাবার পূর্বে সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। 
 
হযরত ইবনে উমর রা. থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত, “তিনি ঈদুল ফিতরের দিনে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে গোসল করতেন।”(সুনান বায়হাকী: ৫৯২০)। 
 
উত্তম পোশাক পরিধান করা
 

সামর্থ্য অনুযায়ী ঈদের দিন উত্তম পোশাক পরিধান করা এবং বৈধ সাজগোছ গ্রহণ করা মুস্তাহাব। সাহাবায়ে কেরাম এমনটি করতেন। নাফে রহ. বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. দুই ঈদে উত্তম পোশাক পরতেন। (সুনানে কোবরা লিল বাইহাকি : ৬১৪৩)।
 
অতএব, ঈদের দিন সাধ্যানুযায়ী উত্তম পোশাক পরা মুস্তাহাব। তবে উত্তম পোশাক মানে নতুন পোশাক নয়; বরং নিজের সংগ্রহে থাকা সবচেয়ে ভালো পোশাক পরা।
 
তিনি ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহে যাবার পূর্বে ন্যুনতম  একটি খেজুর হলেও খেতে বলেছেন। যদি কোনো মুসলিম খেজুর না পায়, তাহলে সে অন্য কোনো কিছু, এমনকি পানি দিয়ে হলেও ইফতার করবে যাতে নীতিগতভাবে সুন্নাহ অনুসরণ করতে পারে; আর তা হল, ঈদুল ফিতরের সালাতের আগে ইফতার করা (কিছু খাওয়া বা পান করা)। আর তিনি ঈদুল আজহার দিন ঈদগাহ থেকে ফেরার আগ পর্যন্ত কিছু খেতেন না। এরপর তিনি তর জবেহ করা পশুর মাংস থেকে খেতেন।
 
হযরত আনাস ইবনু মালিক-রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন সকালবেলা খেজুর না খেয়ে বের হতেন না, আর তিনি তা বিজোড় সংখ্যায় খেতেন। (বুখারি: ৯৫৩)
 
ইবনু ক্বুদামাহ বলেছেন, ঈদুল ফিতরের দিন তাড়াতাড়ি খাবার খেয়ে ফেলা যে মুস্তাহাব, এ ব্যাপারে কোনো ভিন্নমত আমাদের জানা নেই। (যাদুল মায়াদ) ঈদুল ফিতরের দিনে সালাত আদায়ের আগেই খেয়ে ফেলার পেছনে হিক্‌মাহ হল কেউ যেন এটি না ভাবে যে সালাত আদায় করা পর্যন্ত না খেয়ে থাকা অপরিহার্য।
 
সাথে এটিও বলা হয়ে থাকে যে, (তাড়াতাড়ি খেয়ে ফেলার পেছনে হিক্‌মাহ হল) সাওম ওয়াজিব হওয়ার পর সাওম ভঙ্গ করা ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলার আদেশ পূর্ণাঙ্গরূপে অনুসরণের জন্য তৎপর হওয়া।

ঈদগাহে গমন
 

আর রাসুলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের সালাত আদায় করতে হেঁটে যেতেন এবং হেঁটেই ফিরে আসতেন। এ সম্পর্কে হযরত আলী রা. বলেন, সুন্নত হলো ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া। (সুনান আত-তিরমিজি ৫৩৩)
 
অন্যত্র হযরত ইবনু উমার বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের সালাত আদায় করতে হেঁটে যেতেন এবং হেঁটেই ফিরে আসতেন। (ইবনু মাজাহ :১২৯৫)
 
তিনি একপথে যেতেন এবং অন্য পথে বাড়ি ফিরতেন। আর যখন সালাতের উদ্দেশ্যে বের হতেন তখন তাকবির পাঠ করতেন। হযরত জাবির ইবনে আবদিল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিন রাস্তা পরিবর্তন করতেন। (বুখারি:৯৮৬)
 
ঈদের নামাজ আদায়
 

রসুল সা. ঈদগাহে ঈদের সালাতের আগে বা পরে আর কোনো সালাত আদায় করতেন না। রসুল সা. খুতবাহর আগে সালাত দিয়ে শুরু করতেন। (অর্থাৎ খুতবাহ পরে দিতেন)
 
তদ্রূপ রসুলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই রাকাআত সালাতের প্রথম রাকা'আতে তাকবিরে তাহরীমাসহ পরপর সাতটি তাকবির দিতেন। প্রতি দুই তাকবিরের মাঝে কিছু সময় বিরতি নিতেন। 
 
দুই তাকবিরের মাঝখানে বিশেষ কোনো দোয়া পড়েছেন বলে বর্ণনা পাওয়া যায় না। তবে এটি ইবনু মাসঊদ হতে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি আল্লাহর প্রশংসা করতেন, তাঁর সানা (প্রশংসার পুনরাবৃত্তি) পাঠ করতেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর সালাত (দোয়া) পাঠ করতেন।
 
রসুলুল্লাহ দুই ঈদের সালাতে প্রথম রাক'আতে ক্বিরা'আতের পূর্বে সাতবার তাকবীর দিতেন এবং অপর রাক'আতে ক্বিরা'আতের পূর্বে পাঁচবার তাকবির দিতেন। (তিরমিজি ৫৩৬)
 
ইমাম আত-তিরমিজি বলেছেন, আমি মুহাম্মাদকে- অর্থাৎ ইমাম আল বুখারি-কে এই হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বলেন: ‘এই বিষয়ে এর চেয়ে সহীহ আর কোনো বর্ণনা নেই।’ আর আমিও এই মত পোষণ করি।”(তিরমিযী, আল-ইলালুল কাবীর, ১/২৮৮)
 
হযরত আবদুল্লাহ ইবন আস-সা'ইব থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ‘ঈদের সালাতে উপস্থিত ছিলাম। তিনি সালাত আদায় শেষ করে বললেন, “আমরা এখন খুত্ববাহ প্রদান করছি, তাই যে চায় বসে খুতবাহ শুনতে পারে, আর যে চায় সে চলে যেতে পারে।”(আবু দাঊদ:১১৫৫)
 
আত্মীয় স্বজনদের খোঁজখবর নেয়া

 

ঈদের দিন রসুল সা. আত্মীয় স্বজনদের খোজ নিতেন এবং তাদের বাড়িতে যেতেন কুশলাদি বিনিময়ের জন্য। এই খুশির দিন বছরে দুবার আসে এবং এ সময় বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ-খবর নেওয়া ও তাদের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার বিশেষ সুযোগ তৈরি হয়। আত্মীয়তা রক্ষা করা ঈমানের অঙ্গ।
 
এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহু সা. বলেছেন, যে আখেরাতে বিশ্বাস করে, সে যেন আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখে। (সহিহ বুখারি ৬১৩৮)
 
তবে ঈদের আনন্দে যেন আল্লাহর দেওয়া ফরজ বিধান লঙ্ঘিত না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। তবেই ঈদ হয়ে উঠবে আসমানি আনন্দ উৎসব ও আধ্যাত্মিকতার মোহনা। এতে খুশি যেমন থাকবে, থাকবে আল্লাহর সন্তুষ্টিও।
 
লেখক: সাদিয়া আক্তার রুনি, শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 

পাঠ্যবইয়ের কাগজের বার্স্টিং ফ্যাক্টর কমানোর ধান্দায় মুদ্রাকররা - dainik shiksha পাঠ্যবইয়ের কাগজের বার্স্টিং ফ্যাক্টর কমানোর ধান্দায় মুদ্রাকররা বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ না পাওয়া শিক্ষকদের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ না পাওয়া শিক্ষকদের তথ্য আহ্বান কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহে ফের ই-রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha শিক্ষক শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহে ফের ই-রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ ববি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আল্টিমেটাম - dainik shiksha ববি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আল্টিমেটাম এসব কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাজ নয় - dainik shiksha এসব কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাজ নয় প্রাথমিকের দুই ফুটবল টুর্নামেন্টের নাম বদলে গেলো - dainik shiksha প্রাথমিকের দুই ফুটবল টুর্নামেন্টের নাম বদলে গেলো please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036478042602539