দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভিসিদের যোগ্যতা নেই বলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের করা মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ। বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় পদে থাকা সাবেক বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তার এ মন্তব্যকে ‘মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর, অগ্রহণযোগ্য ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত’ বলে মন্তব্য করেছেন ভিসিরা। এ মন্তব্যকে শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করার পায়তারা বলে আখ্যা দিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার দৈনিক শিক্ষাডটকমে পাঠানো এক সংবদ বিজ্ঞপ্তিতে মির্জা ফখরুলের দেয়া ওই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে এসব মন্তব্য করেছ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ।
পরিষদের সভাপতি ও ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রতিবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলরদের নিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যে অসৌজন্যমূলক, মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করেছেন তা বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ মনে করে, তার এই ধরণের মন্তব্য উদ্দেশ প্রণোদিত, বিদ্বেষপূর্ণ, অগ্রহণযোগ্য ও দুঃখজনক এবং শিক্ষাঙ্গন নিয়ে ধারাবাহিক অপপ্রচার, গুজব ও ষড়যন্ত্রেরই অংশ। বাংলাদেশের অগ্রসরমান শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মাধ্যমে নৈরাজ্যকর ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার পায়তারা বলে এটি প্রতীয়মান হচ্ছে।
উপাচার্যদের সংগঠনটি বলছে, এ ধরণের উদ্দেশ প্রণোদিত মন্তব্যে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সব সদস্য বিস্মিত ও মর্মাহত হয়েছেন ও তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। দেশের সামগ্রিক স্বার্থকে বিবেচনায় না এনে সংকীর্ণ ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে তিনি শিক্ষা নিয়ে যে মিথ্যাচার ও অপকৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করেছেন তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
জানা গেছে, গত ১৩ আগস্ট ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিতে এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশের যে একটা আত্মা থাকে, সেটাও নষ্ট করা হয়েছে। আমি মনে করি দেশের যতগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি আছেন কারও কোনো যোগ্যতা নেই।
বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ বলছে, এ ধরণের মন্তব্যের কোনো ভিত্তি ও গ্রহণযোগ্যতা নেই। এ ধরণের যুক্তিহীন ও বাস্তবতা বিবর্জিত মন্তব্যের মাধ্যমে প্রকারান্তরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অপমানিত করেছেন এবং এই বক্তব্যের মাধ্যমে তার পাকিস্তানপ্রীতির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও অধ্যাদেশের ধারা অনুসরণপূর্বক প্রথিতযশা ও মেধাবী শিক্ষাবিদদের মধ্য থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর নিয়োগ দেয়া করা হয় এবং এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। ভাইস-চ্যান্সেলরদের নেতৃত্বে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় যখন বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে গবেষণার পরিধি বেড়েছে এবং উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যুগান্তকারী অংশীদারীত্বের পরিচয় দিচ্ছে তখনই তার এই ধরণের অমূলক মন্তব্য রাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী ও সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের নীল নকশা বলে সচেতন মানুষ মনে করছে।
উপাচার্যরা আরো বলেন, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে বের হয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীরা যখন দেশের উন্নয়নে নিজেরদের জ্ঞান ও মেধাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রেখেছে। দেশের গন্ডি পেরিয়ে সারাবিশ্বে আমাদের শিক্ষার্থীরা যখন সবক্ষেত্রে তাদের মেধা, দক্ষতা ও উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিকাশে অবদান রেখে চলেছে, তখন তার দায়িত্ব জ্ঞানহীন এ মন্তব্য মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার করেছে ও মানুষ তা প্রত্যাখ্যান করেছে। বাংলাদেশের সুনাম ও গণতান্ত্রিকধারাকে ব্যাহত করতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয়ে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা, বিভ্রান্তি ও গুজব ছড়িয়ে যে অপশক্তি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে, এই বক্তব্য তার একটি বড় প্রমাণ। এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে দেশের সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করাই মির্জা ফখরুলের মূল লক্ষ্য। কিন্তু আমরা মনে করি এদেশের মানুষ এ ধরণের অযৌক্তিক, ব্যক্তি বিদ্বেষমূলক ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য কখনোই গ্রহণ করবে না, বরং এই অবান্তর বক্তব্যের মাধ্যমে তার হীন উদ্দেশ্য ও দেউলিয়াপনাই উন্মোচিত হয়েছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন অসঙ্গত, অযৌক্তিক ও হীন মন্তব্যের তীব্র নিন্দা ও জোর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ মনে করে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলরদের প্রতি মির্জা ফখরুল ইসলামের এরূপ ধৃষ্টতাপূর্ণ, অসত্য ও অবমাননাকর বক্তব্য প্রত্যাহার করে প্রকাশ্যে তার ক্ষমা চাওয়া উচিত। নতুবা তিনি ইতিহাসে কলঙ্কিত হয়ে থাকবেন।