ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তা ও বি সি এস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার সমিতির নেতা মাসুদা বেগমের আর্থিক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে গঠিত কমিটিকে প্রভাবিত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুরান ঢাকার আনন্দময়ী বালিকা বিদ্যালয়ের গভর্নিংবডির সভাপতি থাকাকালে মাসুদার বাসার গৃহশিক্ষককে একই স্কুলে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগদান এবং বাড়ীর কাজের লোককে অফিস সহকারি হিসেবে নিয়োগ দেয়াসহ অন্যান্য অনিয়মের অভিযোগ মাসুদার বিরুদ্ধে। ওই গৃহশিক্ষক স্কুলের কয়েকজন ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করলেও তার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। শিক্ষককে গ্রেপ্তার এবং মাসুদার পদত্যাগ দাবিতে উত্তেজিত অভিভাবকরা স্কুল ঘেরাও করলে মাসুদা তাদেরকে এই মর্মে শাসান যে তার কিছুই হবে না, কারণ তার [মাসুদার] চলাফেরা মন্ত্রী-সচিবদের সঙ্গে! তাছাড়া শিক্ষা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে শিক্ষা ক্যাডার সদস্যরা। তিনি সেই ক্যাডার সমিতির নির্বাচিত নেতা।
আট মাস আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়া হয় অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠাতে। তবে, অদ্যাবধি সেই তদন্ত শেষ হয়নি। মাসুদা বি সি এস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারি কলেজ শিক্ষক। প্রেষণে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডে কর্মরত। তদন্ত কমিটির দুই সদস্যও শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা। এ্কজন শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ও অপরজন সহকারি পরিচালক।
সমিতির চাপ আছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে কর্মকর্তারা অবশ্য দাবি করেন “কোনো চাপে নেই। নিরপেক্ষ তদন্ত হবে।”
অভিযোগ রয়েছে, তদন্ত কমিটির দুই সদস্যকে ডেকে সমিতির সাবেক একজন সহ-সভাপতি প্রার্থী এবং বর্তমানে অধিদপ্তরের পরিচালক এই মর্মে পরামর্শ দিয়েছেন যেন মাসুদাকে `save’ করা হয়।আর যৌন হয়রানিতে অভিযুক্ত শিক্ষক মো: জসিম উদ্দিন যে মাসুদারা বাসায় গৃহশিক্ষক ছিলেন সেকথা বলতে হবে “কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।”। আরো বলতে হবে, জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে।কিন্তু তাকে পুলিশে দেয়া হয়নি। প্রভাব খাটিয়ে স্কুলের সভাপতি পদে মাসুদার থাকার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।”
জানা যায়, শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতি নিয়ে সম্প্রতি মহাপরিচালক, উপ-পরিচালক ও পরিচালকদের সঙ্গে কথা বলার নাম করে সমিতির কয়েকজন নেতা ও ঢাকার বিভিন্ন কলেজ থেকে কয়েকডজন শিক্ষা ক্যাডার সদস্যকে জড়ো করেছেন মাসুদা। তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে একাধিকবার তদন্ত কমিটির সদস্যদের কক্ষে মহড়া দিয়েছে মাসুদা।
আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ স্কুলটি প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধেও। ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ ভুক্তভোগী অভিভাবকরা পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাসুদা ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনীত এইসব অভিযোগের প্রতিকার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আবেদন করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশ পাওয়ার পর শিক্ষা সচিব বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে। ২রা ফেব্রুয়ারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠি দেয়।
তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে নিশ্চিত করেছেন মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান।
সমিতির প্রভাব খাটানোর বিষয়ে জানতে চাইলে সমিতির সভাপতি ও কবি নজরুল সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ আ ই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার দৈনিকশিক্ষাকে বলেন, কারো ব্যক্তিগত কোনো অভিযোগের দায় সমিতি নেবে না। সমিতির পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটির কারো সঙ্গে কোনো কথা হয়নি। সুতরাং সমিতিকে দোষারোপ করা ঠিক হবে না।