রমজানে একজন মুসলিমের সারা দিন - দৈনিকশিক্ষা

রমজানে একজন মুসলিমের সারা দিন

বিল্লাল হোসেন |

একজন মুসলিম তার দিন শুরু করবে ফজরের সালাতের আগে সাহরি গ্রহণের মাধ্যমে। উত্তম হচ্ছে যদি রাতের শেষ সময় পর্যন্ত বিলম্ব করে সাহরি গ্রহণ করা যায়। আজানের আগে তিনি ফজরের সালাতের জন্য প্রস্তুতি নেবেন। বাসা হতে ওজু করে আজানের আগেই মসজিদে যাবেন। মসজিদে প্রবেশ করে প্রথমে ‘তাহিয়্যাতুল মসজিদ’ দুই রাকাত সালাত আদায় করবেন। এরপর মুয়াজ্জিন আজান দেয়ার আগ পর্যন্ত বসে বসে দোয়া-দরুদ, কুরআন তিলাওয়াত বা জিকিরে মশগুল থাকবেন। আজান দিলে মুয়াজ্জিনের সঙ্গে সঙ্গে আজানের বাক্যগুলোর পুনরাবৃত্তি করবেন। আজান শেষ হওয়ার পর নবী (সা.) হতে বর্ণিত দোয়া পাঠ করবেন। এরপর ফজরের দুই রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করবেন। তারপর ফরজ সালাতে দাঁড়ানোর আগ পর্যন্ত যিকির, দোয়া ও কুরআন তিলাওয়াতে মনোনিবেশ করবেন। হাদিসে বর্ণিত আছে, ‘সালাতের জন্য অপেক্ষমাণ ব্যক্তি সালাতেই রয়েছেন’।

জামাতের সঙ্গে সালাত আদায় শেষে, সালাম ফেরানোর পর তিনি শরিয়ত নির্দেশিত দোয়া পাঠ করবেন। এরপর চাইলে সূর্যোদয় পর্যন্ত মসজিদে থেকে যিকির, কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদিতে ব্যস্ত থাকবেন। এটি করতে পারলে ভালো। ফজরের পর নবী (সা.) এভাবে আমল করতেন। এরপর সূর্যোদয়ের পর সূর্য কিছুটা ওপরে উঠলে এবং উদয়নের পর ১৫ মিনিটের মতো অতিক্রান্ত হলে তিনি চাইলে সালাতুদ দোহা তথা চাশ্‌তের নামাজ (সর্বনিম্ন দুই রাকাত) আদায় করবেন। এটি ভালো। আর চাইলে কিছুটা দেরি করে এই নামাজ পড়ার উত্তম সময়ে নামাজটি পড়তে পারেন। হাদিস অনুসারে উত্তম সময় হলো সূর্য আরো ওপরে ওঠলে এবং রোদের প্রখরতা বাড়লে। এই সময়ে নামাজটি পড়তে পারলে আরো ভালো।

এরপর কর্মস্থলে যাওয়ার প্রস্তুতিস্বরূপ কিছু সময় ঘুমাতে চাইলে এই ঘুমের দ্বারা ‘ইবাদত ও রিজিক অন্বেষণের নিমিত্তে শক্তি অর্জনের নিয়ত করবেন। যাতে আল্লাহ চাহেন  তো এ ঘুমের মাধ্যমে সওয়াব পেতে পারেন। ইসলামি শরিয়তে যেসব কথা ও কাজকে ঘুমের আদব হিসেবে নির্ধারণ করেছে সেগুলো পালনে যত্নবান হওয়া উচিত। এরপর তিনি তার কর্মস্থলে যাবেন। যোহরের নামাজের ওয়াক্ত নিকটে এলে যথাসম্ভব শিগগির, আজানের আগে অথবা আজানের পরপরই মসজিদে গিয়ে যোহরের নামাজ পড়বেন। নামাজ আদায় শেষে তার ডিউটির বাকি অংশ সম্পন্ন করবেন। ডিউটি শেষে তিনি বাসায় ফিরে আসবেন। আসরের সালাত আদায়ের পর একজন মানুষ তার নিজের ও পরিবারের প্রয়োজনীয় কাজ সমাপ্ত করবেন। মাগরিবের আজানের আগে তিনি ইফতারের জন্য প্রস্তুতি নেবেন। এই মুহূর্তগুলোকে তিনি যেকোনো ভালো কাজে ব্যয় করবেন। যেমন-কুরআন তিলাওয়াত করা, দোয়া করা, অথবা পরিবার ও সন্তানদের নিয়ে ভালো কোনো কথা আলোচনা করা। এ সময়ের সবচেয়ে ভালো কাজ হলো সাধ্যমতো রোজাদারদের ইফতার করানোতে অংশ নেয়া। হয়তো তাদের জন্য খাবার কিনে দেয়ার মাধ্যমে অথবা তা বিতরণ করার মাধ্যমে অথবা এর ব্যবস্থাপনা করার মাধ্যমে। এই আমলের মধ্যে অপরিসীম আনন্দ রয়েছে। এটা তিনিই জানেন যিনি নিজে এ আমল করেছেন।

ইফতারের পর তিনি জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায়ের উদ্দেশে মসজিদে যাবেন। এরপর মাগরিবের নামাজ আদায় করবেন। বাসায় ফিরে তিনি প্রয়োজন মাফিক খাদ্য গ্রহণ করবেন। অতিরিক্ত খাবেন না। এরপর এই সময়কে তার নিজের জন্য ও তার পরিবারের জন্য কল্যাণকর কোনো পন্থায় ব্যয় করবেন। যেমন- পাঠ্যপুস্তকের পড়াশোনা, কোনো সত্য ইসলামিক কাহিনীর বই পড়া, দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় হুকুম আহকামের কোনো বই পড়া, প্রতিযোগিতার বই পড়া, বৈধ কোনো আলাপ আলোচনায় থাকা অথবা অন্য যেকোনো আকর্ষণীয় কল্যাণকর কাজে ব্যয় করা।

এরপর এশার নামাজের জন্য প্রস্তুতি নেয়া এবং মসজিদের উদ্দেশে রওয়ানা হওয়া। মসজিদে গিয়ে কুরআন তিলাওয়াতে মশগুল হোন। অথবা মসজিদে কোনো আলোচনা অনুষ্ঠান থাকলে তা শুনুন। এরপর এশার নামাজ আদায় করুন। অতঃপর ইমামের পেছনে তারাবির নামাজ আদায় করুন। ইমাম নামাজ শেষ করার আগে আপনি নামাজ ছেড়ে চলে যাবেন না। হাদিসে বর্ণিত আছে ‘ইমাম নামাজ শেষ করা পর্যন্ত যে ব্যক্তি তার সঙ্গে নামায আদায় করবে তার জন্য পুরো রাত নামাজ পড়ার সওয়াব লিখে দেয়া হবে’। এবং অন্যান্য মুহাদ্দিসরা সংকলন করেছেন। আলবানী সালাতুত তারাবিহ অধ্যায়ে হাদিসটিকে সহিহ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। সালাতুত তারাবিহ’র পর আপনি আপনার নিজস্ব ব্যস্ততার সঙ্গে সামঞ্জস্যশীল প্রোগ্রাম তৈরি করে নেয়া যেতে পারে।

এক্ষেত্রে কিছু বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা দরকার। যেমন- সমস্ত হারাম থেকে এবং হারামের আহ্বায়ক বিষয়বস্তু থেকে বিরত থাকা। আপনার বাসার সদস্যদেরকে হারাম থেকে ও হারামের যাবতীয় উপকরণ থেকে কৌশলে বিরত রাখা। যেমন–তাদের জন্য বিশেষ কোনো প্রোগ্রাম তৈরি করুন। অথবা তাদের নিয়ে শরিয়ত অনুমোদিত স্থানে ঘুরতে বের হোন। অসৎসঙ্গ থেকে দূরে রাখুন। তাদের জন্য সৎ সাহচর্যের অনুসন্ধান করুন। কম ফজিলতপূর্ণ বিষয়ের পরিবর্তে বেশি ফজিলতপূর্ণ আমলে মশগুল হওয়া। আগে আগে বিছানায় যেতে চেষ্টা করুন। ইসলামি শরিয়ত যেসব কথা ও কাজকে ঘুমের আদব হিসেবে নির্ধারণ করেছে সেগুলো পালনে যত্নবান হোন। ঘুমের আগে যদি কিছু কুরআন তেলাওয়াত বা ভালো কোনো বইয়ের কিছু অংশ পড়তে পারেন তবে তা ভালো। বিশেষ করে আপনি যদি কুরআন থেকে আপনার দৈনন্দিন পাঠ্য। শেষ না-করে থাকেন তবে তা সম্পন্ন না করে ঘুমাবেন না। এরপর সাহরির আগে যথেষ্ট সময় নিয়ে ঘুম থেকে উঠুন। যাতে দোয়াতে ব্যস্ত হতে পারেন। কারণ, এই সময় ও রাতের শেষ তৃতীয়াংশ আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করে থাকেন। আল্লাহ এ সময়ে ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের প্রশংসা করেছেন। এ সময়ে দোয়াকারীদের দোয়া কবুলের এবং তওবাকারীদের তওবা কবুলের ওয়াদা করেছেন। তাই এই মহা সুযোগটি আপনার হাতছাড়া করা উচিত হবে না।

লেখক: শিক্ষক, পাঁচগাও আলহাজ ওয়াহেদ আলী দেওয়ান উচ্চ বিদ্যালয়, টঙ্গিবাড়ী 

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

সব প্রাথমিকে তারুণ্যের উৎসবে জুলাই-আগস্ট বিপ্লব নিয়ে কর্মসূচি - dainik shiksha সব প্রাথমিকে তারুণ্যের উৎসবে জুলাই-আগস্ট বিপ্লব নিয়ে কর্মসূচি ভর্তি হয়ে প্রতারিত হলে দায় নেবে না ইউজিসি - dainik shiksha ভর্তি হয়ে প্রতারিত হলে দায় নেবে না ইউজিসি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তি: কপাল খুললো ভুল চাহিদায় সুপারিশ পাওয়াদের - dainik shiksha পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তি: কপাল খুললো ভুল চাহিদায় সুপারিশ পাওয়াদের কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি আবেদন শেষ হচ্ছে কাল - dainik shiksha সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি আবেদন শেষ হচ্ছে কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসির ফরম পূরণ শুরু রোববার - dainik shiksha এসএসসির ফরম পূরণ শুরু রোববার অনার্স ২য় বর্ষে ফের ফরম পূরণের সুযোগ - dainik shiksha অনার্স ২য় বর্ষে ফের ফরম পূরণের সুযোগ আলামত ধ্বংস বিভাগ থেকে বের হতো প্রশ্ন, কর্মচারী আকরামের স্বীকারোক্তি - dainik shiksha আলামত ধ্বংস বিভাগ থেকে বের হতো প্রশ্ন, কর্মচারী আকরামের স্বীকারোক্তি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0072619915008545