রাজধানীতে বাড়ছে বিবাহ-বিচ্ছেদ বা তালাক। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩৬টি বিবাহ-বিচ্ছেদ বা তালাকের ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে নারীর কাছ থেকে তালাকের আবেদনই আসছে বেশি। ক্ষমতায়ন ও স্বাবলম্বী হওয়ার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বে তালাকের হার বাড়ছে বলে মনে করেন গবেষকেরা। তারা বলছেন, প্রচলিত আইনের কঠোর প্রয়োগ আর কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে তালাকের হার কমিয়ে আনা যেতে পারে।
এক, দু'বছর নয়, টানা ১৬ বছরের সংসার। হঠাৎ ভেঙে গেছে সে বন্ধন। রয়েছে শুধু স্মৃতি। মা হয়েও নেই প্রিয়তম দুই সন্তানকে দেখার বা কাছে পাওয়ার অধিকার।
গবেষণার তথ্য, রাজধানীতে প্রতি ৪০ মিনিটে একটি বিচ্ছেদ হচ্ছে। সে হিসেবে দিনে তালাক হয় ৩৬টি। আর প্রতি ১০টি আবেদনের ৭টিই আসছে নারীর কাছ থেকে। তালাক নোটিশের পর সমঝোতা ৫ শতাংশের নিচে।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে বিচ্ছেদের সংখ্যা ১২ হাজার ৫১৩টি, ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে বিচ্ছেদের সংখ্যা ১৪ হাজার ৬৬৯টি (২ হাজার ১৫৬টি বৃদ্ধি), ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে বিচ্ছেদের সংখ্যা ১৩ হাজার ২৮৮টি (১ হাজার ৩৮১টি বৃদ্ধি)।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেবে দেখা যায়, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে দেশে তালাকের হার আগের বছরের প্রায় দ্বিগুণ। আর শহরের তুলনায় তা গ্রামেই বেশি। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে বিচ্ছেদের হার ১.৪ শতাংশ, ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে ০.৭ শতাংশ।
২০২২ খ্রিষ্টাব্দ ঢাকার বাইরে বিবাহ বিচ্ছেদ চট্টগ্রামে ৫ হাজার ৯৭৬টি, রংপুরে ৭ হাজার ২১৫টি, ময়মনসিংহে ৬ হাজার ৩৯০টি।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ম্যান অ্যান্ড ম্যাসকিউলিনিটিজ স্টাডিজ-সিএমএমএসের তথ্য বিচ্ছেদের হার শিক্ষিত ও কর্মজীবী দম্পতিদের মধ্যে বেশি। এর কারণও খুঁজে পেয়েছেন তারা।
বিবাহ বিচ্ছেদের মূল কারণগুলোর মধ্য অন্যতম হলো- নারীর ক্ষমতায়নের সাথে পুরুষের খাপ খাওয়ানোর ব্যর্থতা, নারীর আত্মনির্ভরশীলতা ও সচেতনতা বৃদ্ধি, পারিবারিক নিপীড়ন-নির্যাতন, আইনি প্রক্রিয়ার সহজীকরণ, শারীরিক সম্পর্কে অপূর্ণতা, বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক, পারস্পরিক সমঝোতা তরির সময়ের অভাব, বিচ্ছেদ প্রসঙ্গে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির বদল, মাদকাসক্তি সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব, আইন বাস্তবায়ন ও কাউন্সেলিংয়ের অভাব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ বলেন, ক্ষমতায়ন ও স্বাবলম্বী হওয়ার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বে তালাকের হার বাড়ছে।
সমাজবিজ্ঞানী সাদেকা হালিম বলেন, অধিকার-আত্মমর্যাদা রক্ষা এবং দীর্ঘদিনের মানিয়ে চলার কষ্টকর পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে বিচ্ছেদে মুক্তি খুঁজছেন দম্পতিরা।
বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক সালমা আলী বলেন, প্রচলিত আইনের কঠোর প্রয়োগ আর থানা ও জেলা পর্যায়ে কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে বিচ্ছেদের হার কমানো যায়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও অনেক ক্ষেত্রে দাম্পত্য জীবনের সম্পর্কের ফাটল ধরাচ্ছে যা তালাক পর্যন্ত গড়ায় বলে মনে করেন গবেষকরা।