রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার পদার্থবিজ্ঞান প্রথমপত্রের প্রশ্নে ভুলের ছড়াছড়ি। মোট ৮টি প্রশ্নের মধ্যে ৬টিতেই ভুল পাওয়া গেছে। এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের অনুষ্ঠিত পদার্থবিজ্ঞান প্রথমপত্রের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্টরা জানান, বোর্ডের পদার্থবিজ্ঞান প্রথমপত্রের লিখিত অংশের ৫ নম্বর উদ্দীপকে সিগমার মান ০.৫৭ দেওয়া আছে। কিন্তু বাস্তবে সিগমার মান ১ থেকে ০.৫ এর মধ্যেই হয়। অর্থাৎ উদ্দীপকের তথ্য বাস্তবসম্মত নয়। এছাড়া ৩ এর গ নম্বর প্রশ্নে কাজের পরিমাণ বের করতে বলা হলেও উচ্চতা দেওয়া হয়নি।
৪-এর ঘ নম্বর প্রশ্ন সংক্ষিপ্ত উত্তরের জন্য। যা ৪ নম্বরের জন্য নয়, মুখে-মুখেই করা যায়, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণও লাগে না। আর ৭ এর গ নম্বর সমাধানের ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ তথ্য নেই, কোনো মাধ্যমেই পানির বেগ নেই। ৮ এর ঘ নম্বর প্রশ্নে কেন্দ্রমুখী জানতে চাওয়া ঠিক হয়নি, লম্ব কি না সেটা জানতে চাইতে পারত, তথ্য সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আর ৬ এর ঘ এর সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই।
এদিকে একই প্রশ্নে দুই পরীক্ষা নেওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে অভিভাবকদের মধ্যে। অনেকেই পোস্ট দিয়েছেন ফেসবুকেও। ফেসবুকে পেজে একজন লিখেছেন, বেশি না ৮টার মধ্যে মাত্র ৬টা প্রশ্ন ভুল ছিল। সলভ দিয়ে দিলাম, অত না মিলিয়ে দ্বিতীয়পত্রের জন্য প্রস্তুতি নাও।
জানতে চাইলে রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আরিফুল ইসলাম বলেন, প্রথমে বলি প্রশ্নটা আমাদের তৈরি না। কারা প্রশ্ন করেছে পরীক্ষার পরে এটি খুঁজে বের করে করার চেষ্টা করব। আর পরীক্ষার্থীদের যে সুবিধা সেটা আমরা দেওয়ার চেষ্টা করব। ভুল হলে নম্বর দিয়ে দেওয়া হয়। তবে আপনার কাছে থেকে প্রথম শুনলাম এমন ভুল হয়েছে। আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখব।
মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড রাজশাহীর চেয়ারম্যান প্রফেসর কামরুল ইসলাম বলেন, আমি ঢাকায় আছি। প্রশ্ন যে বোর্ড তৈরি করে, সে বোর্ডে পরীক্ষা সেখানে হয় না। এটি আমাদের বোর্ডের প্রশ্ন নয়। অন্য বোর্ডের প্রশ্ন। এটি খুঁজে বের করা হবে কোন বোর্ড থেকে প্রশ্নটি এসেছে। তারপরে প্রশ্ন সেটারদের বের করা হবে এবং তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।
তিনি বলেন, বিষয়টি আমরা আন্তঃবোর্ডের সভায় তুলব। এটি খুবই দুঃখজনক ঘটনা। বারবার বলার পরও তারা এটি করে থাকে। পরবর্তী সময়ে এগুলো নিয়ে আমরা দেখা করব। এটি নিয়ে আলোচনা করে ফলাফলের বিষয়ে দেখা হবে। আমরা শিক্ষার্থীদের কথা সব সময় ভাবি। সুন্দর একটি ফল আসবে, এটিই আশা করছি।
এ বিষয়ে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ও শিক্ষাবিদ তানবিরুল আলম বলেন, আমাদের দেশে প্রশ্নপত্রে ভুল ক্রমেই বাড়ছে। এটি একটি ধরন হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবছরই কোনো না কোনো ভুল থাকছে। ভুল প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়ার নিঃসন্দেহে মারাত্মক ক্ষতি। দেশে প্রশ্ন প্রণয়নককারীদের আরও সচেতন হতে হবে। তা না হলে এমন ভুল চলতে থাকবে। এতে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হবে। অভিভাবকরাও হতাশায় ভুগবেন।