রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে একুশে ফেব্রুয়ারি প্রথম প্রহরে রাজশাহী কলেজের শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন
এবং বুকে শোকের প্রতীক কালোব্যাজ ধারণ করে ১ মিনিট নিরবতা পালনের মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী কর্মসূচি শুরু করেন বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকালে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড চত্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে নিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ১ মিনিট নিরবতা পালন করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. হাবিবুর রহমান।
পরে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট কবি অধ্যাপক রুহুল আমিন প্রামাণিক। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. আরিফুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বোর্ডের সচিব মো. হুমায়ূন কবীর, বিদ্যালয় পরিদর্শক মহা. জিয়াউল হক, উপ-বিদ্যালয় পরিদর্শক হোসনে আরা আরজু, তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা সুলতানা শামীমা আক্তার এবং কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মোহা. হুমায়ুন কবীর।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট কবি অধ্যাপক রুহুল আমিন প্রামাণিক বলেন, কেবলমাত্র ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষার প্রাপ্তি, স্বাধীনতা অর্জন এবং পরবর্তী সময়ে একুশের চেতনায় বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্থান লাভ করেছে। যা জাতি হিসেবে আমাদের বড় অর্জন ও গৌরবের।
বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. হাবিবুর রহমান বক্তব্যের শুরুতেই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ১৫ই আগস্ট কালোরাতে নিহত বঙ্গমাতা ও তাঁর পরিবারের সব শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদ ও তিন লক্ষ নির্যাতিত মা-বোনদের আত্মত্যাগসহ মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
তিনি বলেন, অমর একুশের অবিনাশী চেতনাই আমাদের যুগিয়েছে স্বাধিকার, মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে অফুরন্ত প্রেরণা ও অসীম সাহস।
উপস্থিত শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, যে চেতনা ও মূল্যবোধ নিয়ে ৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিলো সেই চেতনা ও মূল্যবোধ থেকে আবারও আমাদের অন্ধকার জগতে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। আমরা নিশ্চই অন্ধকার জগতে ফিরে যেতে চাই না। ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিকশিত বিজ্ঞানমনস্ক একটি আধুনিক প্রজন্মই পারে দেশি-বিদেশি এই ষড়যন্ত্রকে রুখে দিতে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ লক্ষ্যেই সাহসিকতার সঙ্গে নিরন্তর কাজ করে চলেছেন। আশা করি আমরা সকলেই এই প্রচেষ্টার সাথে দৃঢ়ভাবে সম্পৃক্ত থাকবো।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন প্রধান মূল্যায়ন অফিসার (চলতি দায়িত্ব) এস এম গোলাম আজম। এছাড়া বোর্ডের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা স্বতঃস্ফুর্তভাবে এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে অনুষ্ঠানকে সাফল্যমণ্ডিত করেন।
পরে বাদ আসর শিক্ষা বোর্ড মসজিদে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মিলাদ মাহ্ফিল ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া পরিচালনা করেন বোর্ড মসজিদের মুয়াজ্জিন হাফেজ মো. জিয়াউর রহমান।