জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) রাতের আঁধারে গহীন জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রথম বর্ষের (৫১ ব্যাচ) শিক্ষার্থীদের র্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠেছে একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (৫০ ব্যাচ) শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে। সোমবার (২৯ মে) দিবাগত রাত ১টার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিডনী ফিল্ডের পেছনের জঙ্গলে এ ঘটনা ঘটে। এসময় খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করেন এবং প্রক্টরিয়াল টিমের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় ৫০ ব্যাচের এক শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের থেকে জানা যায়, রবিবার রাত ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিডনী ফিল্ড এলাকায় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ৫১ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের উপস্থিত থাকতে বলেন ৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।
নির্ধারিত সময়ে ৫১ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা সেখানে উপস্থিত হলেও ৫০ শিক্ষার্থীরা সেখানে আসেন রাত সাড়ে ১১টায়। পরে তারা ৫১ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সিডনী ফিল্ডের পেছনের জঙ্গলে গিয়ে নানা ধরনের মানসিক নির্যাতন করেন। এসময় তারা ৫১ ব্যাচের শিক্ষার্থীদেরকে 'মুরগি বানিয়ে', 'চেয়ার বানিয়ে' (র্যাগিংয়ের ধরন) বিভিন্ন কায়দায় শাস্তি দেন। এছাড়া এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের দিকে জুতা ছুঁড়ে মারেন।
এদিকে, খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের দুই সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত কয়েকজন সাংবাদিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এ সময় তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে ৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা দৌড়ে পালিয়ে যান। তবে আব্দুল্লাহ আল কাফি নামে দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা ধরে ফেলেন। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি র্যাগিংয়ের সঙ্গে জড়িত অন্য শিক্ষার্থীদের পরিচয় জানান।
অভিযুক্ত আব্দুল্লাহ আল কাফি বলেন, রাতে ডিপার্টমেন্টের জুনিয়রদের ডাকা হয়েছিল। আমরা ৫০ ব্যাচের ১০ থেকে ১২ জন ছিলাম। এর মধ্যে নূর ইসলাম, তানভীর ইসলাম, মো. আবদুস ছবুর, প্রিন্স কুমার রায়, আহমেদ ইজাজুল হাসান আরিফ, চিরঞ্জীত মণ্ডল, মো. রাসেল হোসাইন, মো. সিজান, খন্দকার মোয়াজ ইসলাম, মিঠুন রায় উপস্থিত ছিল। এসময় তারা ওদেরকে র্যাগ দেয়, তবে আমি দিইনি। আমি ভুল স্বীকার করছি, এরকম আর হবে না।
অভিযুক্তদের মধ্যে নূর ইসলাম, মো. আবদুস ছবুর, প্রিন্স কুমার রায় ও খন্দকার মোয়াজ ইসলাম মওলানা ভাসানী হল; তানভীর ইসলাম, আহমেদ ইজাজুল হাসান আরিফ ও চিরঞ্জিত মণ্ডল মীর মশাররফ হোসেন হল এবং মো. রাসেল হোসাইন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। মো. সিজানের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় পাওয়া যায়নি। এছাড়া আব্দুল্লাহ আল কাফি মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানতে চাইলে ভুক্তভোগী ৫১ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বলেন, রাত ৮টায় বড় ভাইয়েরা (৫০ ব্যাচ) সিডনি ফিল্ডে আমাদের ডেকেছে বলে ব্যাচের মেসেঞ্জার গ্রুপে জানানো হয়। ওই সময়ে আমরা সেখানে উপস্থিত হই। তবে ভাইয়েরা আসেন রাত ১১টায়। এরপর প্রায় দেড় ঘণ্টার মতো আমাদের র্যাগ দেওয়া হয়। আমাদেরকে বাবা-মা তুলে গালিগালাজ করেন। আর সিনিয়রদের সালাম না দেওয়ায় শাসান। এছাড়া একজনের গায়ে জুতা ছুঁড়ে মারেন, লাফাতে বলে এবং কয়েকজনকে মুরগি বানিয়ে শাস্তি দেন।
এ ঘটনার পর রাত পৌনে ২টার দিকে ভুক্তভোগীদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের অতিথি কক্ষে নিয়ে আসে প্রক্টরিয়াল টিম। এসময় ভুক্তভোগী ১২ শিক্ষার্থী র্যাগিংয়ের ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তি দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন। উপস্থিত প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ও ইন্সটিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) সহকারী অধ্যাপক এস এম এ মওদুদ আহমেদ বলেন, রাতে খবর পাই যে সিডনি ফিল্ড সংলগ্ন জঙ্গলে নবীন শিক্ষার্থীদের র্যাগিং দেওয়া হচ্ছে। প্রক্টর স্যারের নির্দেশে আমি ও সহকারী প্রক্টর মো. রনি হোসাইন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে ৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। তবে আব্দুল্লাহ আল কাফী নামে একজনকে ধরতে সক্ষম হই। কারা সেসময় সেখানে উপস্থিত ছিল সে তাদের নাম জানিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি ও আশ্বস্ত করেছি। তারা একটি অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।