রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শের-ই-বাংলা ফজলুল হক হলের এক আবাসিক ছাত্রকে গেস্ট রুমের দরজা বন্ধ করে মারধরের অভিযোগ উঠেছে দুই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে।
এ নিয়ে বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) প্রক্টর অফিসে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই ভুক্তভোগী ছাত্র মো. নজরুল ইসলাম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী এবং শের-ই-বাংলা হল শাখা ছাত্রলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক। আগে পলিটিক্যাল ব্লকে থাকলেও তিনি এখন আবাসিকতা নিয়ে আলাদা ব্লকে থাকছেন।
অভিযুক্ত দুই ছাত্রলীগ নেতা হলেন- বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আলফাত সায়েম জেমস ও সৈয়দ আমীর হল ছাত্রলীগের ধর্ম বিষয়ক উপ-সম্পাদক আল-আমিন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার (১ আগস্ট) রাতে রিডিংরুমের পাশে উচ্চস্বরে কথা বলছিলেন আল-আমিন। এ সময় আমি তাকে আস্তে কথা বলতে বলি। এ নিয়ে তিনি আমার সঙ্গে তর্ক শুরু করেন এবং বলেন ‘তুই জানিস আমি তোর কি অবস্থা করতে পারি’। একপর্যায়ে তিনি বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন জেমসকে ডেকে আনেন। জেমস ও আল-আমিন আমাকে শের-ই-বাংলা হলের গেস্টরুমে নিয়ে দরজা বন্ধ করে এলোপাতাড়ি মারধর করে। আমি মাটিতে পড়ে যাই এবং আমার কান দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। আমি কানে শুনছিলাম না।
চরম নিরাপত্তা সংকটে ভুগছেন উল্লেখ করে নজরুল আরও বলেন, ওই রাতে আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই। পরদিন চিকিৎসক আমাকে জানান কানের শব্দ অনুভূতি সারিয়ে তুলতে বেশ সময় লাগবে এবং দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা করাতে হবে।
প্রক্টর অফিসে অভিযোগ দিয়ে সন্তোষজনক উত্তর পাননি উল্লেখ করে এ শিক্ষার্থী বলেন, আমি চরম নিরাপত্তা সংকটে ভুগছি। সিদ্ধান্ত নিয়েছি, স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অসম্পন্ন রেখেই ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যাবো।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত নেতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আলফাত সায়েম জেমস বলেন, ‘শের-ই বাংলা হলে আল-আমিন এবং নজরুলের মধ্যে একটা কথা কাটাকাটি বা ঝামেলা হয়। ওরা দুজনই হল ছাত্রলীগের পোস্টেড। তাদের মধ্যে যে ভুল বোঝাবুঝি হয়, আমি তা মীমাংসার চেষ্টা করি। পরবর্তীতে শের-ই-বাংলা হলের প্রাধ্যক্ষের উপস্থিতিতে বিষয়টি সমাধানও হয়।
মারধরের কথা অস্বীকার করে জেমস বলেন, মারধরের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। আমার নামে যে অভিযোগটি দেওয়া হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
এদিকে আরেক অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা আল-আমিনের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, শের-ই বাংলা হলে দুই শিক্ষার্থীর মধ্যে ঝামেলা হয়েছে শুনে জেমস সেখানে গিয়ে বিষয়টি সমাধান করেন। আমার জানামতে, হল প্রাধ্যক্ষও বিষয়টি সুরাহা করে দিয়েছেন। কিন্তু ঘটনার কয়েকদিন পর এভাবে অভিযোগ দেওয়ার পেছনে রাজনৈতিকভাবে কারও উসকানি থাকতে পারে।
শের-ই-বাংলা ফজলুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ ড. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ভুক্তভোগী নজরুল তো আমাকে কিছুই জানায়নি। এমনকি লিখিত কোনো অভিযোগও দেয়নি। আমি ঘটনাটি শোনার পর নিজ উদ্যোগে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করি। যেই ছেলেটি ঘটনাটি ঘটিয়েছে, তিনি আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন এবং লিখিত দিয়েছেন। এরপরও আমি ভুক্তভোগী নজরুলকে বলেছিলাম আমার সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু তিনি দেখা না করে প্রক্টরের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে শুনলাম। আমি আরেকটু খোঁজ নিয়ে ঘটনাটির সুষ্ঠু সমাধানের চেষ্টা করবো।
লিখিত অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, বিষয়টি হলের ভেতরে ঘটেছে, তাই আগে হল প্রশাসনের কাছে আবেদন করতে হবে। আমি সেই শিক্ষার্থীকে সেটি জানিয়ে দিয়েছি। আর তিনি নিরাপত্তাহীনতায় যদি ভোগেন, তাহলে থানায় জিডি করুক। আমি তাকে সহযোগিতা করবো।