রাবিতে প্রক্সি দিয়ে চান্স পাওয়া শিক্ষার্থী , চুক্তির পুরো টাকা না দেয়ায় আটকে চাঁদা দাবি - দৈনিকশিক্ষা

রাবিতে প্রক্সি দিয়ে চান্স পাওয়া শিক্ষার্থী , চুক্তির পুরো টাকা না দেয়ায় আটকে চাঁদা দাবি

রাবি প্রতিনিধি |

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি হতে আসা এক ভর্তিচ্ছুকে আটক করে তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবির উঠেছে ছাত্রলীগ নেতাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। পরে ভুক্তভোগীর মা প্রক্টর দপ্তরে একটি অভিযোগ দেন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে উদ্ধার করে নগরীর মতিহার থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য একটি জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে ৪ লাখ টাকায় চুক্তি করেন ভর্তিচ্ছু ওই শিক্ষার্থী। চুক্তির পুরো টাকা পরিশোধ না করায় চক্রের কয়েকজন সদস্য মিলে তাকে আটক করে চাঁদা দাবি করেন।

অভিযুক্তিরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রাজু আহমদে, লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী মহিবুল মমিন সনেট ও শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাকোয়ান সিদ্দিক ওরফে প্রাঙ্গণ। তাদের মধ্যে মহিবুল মমিন সনেটের বিরুদ্ধে এর আগেও ভর্তি বাণিজ্যের অভিযোগ উঠে। গত ৮ মার্চ নগরীর বোয়ালিয়া থানায় তার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়।

জালিয়াতি করে ভর্তি হতে আসা শিক্ষার্থীর নাম আহসান হাবীন। গত ২৯ মে অনুষ্ঠিত বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘স’ ইউনিটের তৃতীয় শিফটের পরীক্ষায় তার হয়ে অন্যজন পরীক্ষা দিলে তিনি উত্তীর্ণ হয়। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত পপুলেশনস সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগে ভর্তি হতে আসেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী আহসান হাবীব তার মাকে নিয়ে রাজশাহীতে আসেন গত বুধবার। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই শিক্ষার্থী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। রাজশাহীতে এসে গতকাল তিন লাখ ৪০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন। বাকি ৬০ হাজার টাকার জন্য গতকাল দুপুরে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের দিকে ডেকে নিয়ে যান ওই চক্রের সদস্যরা। কিন্তু তিনি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে সেখান থেকে তাকে শের-ই-বাংলা হলে নিয়ে এসে আটক রেখে তার বাবার কাছে ফোন দেয় তারা। পরে আরও ৩ লাখ টাকা দাবি করে।

আরও জানা যায়, ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর খোঁজ না পেয়ে তার মা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শরণাপন্ন হন। পরে প্রশাসন ওই শিক্ষার্থীর বাবার মাধ্যমে জানতে পারেন আহসান হাবীনকে শের-ই-বাংলা হলে আটক করে রাখা হয়েছে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে উদ্ধার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এক পর্যায়ে তিনি জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি হয়েছেন বলে স্বীকার করেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ওই ভর্তিচ্ছুকে নগরীর মতিহার থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।

আটক ভর্তিচ্ছু আহসান হাবীবের মা রেহেনা বেগম বলেন, গতকাল দুপুরে ছেলেকে ভর্তি করার উদ্দেশ্যে রাজশাহী আসেন। তার ছেলে তাকে বসিয়ে রেখে ভর্তি হতে যায়। কিন্তু বিকাল ৫টা বাজলেও ছেলে না আসলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেন। পরে সেখান থেকে আহসান হাবীবকে ফোন করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হলে আছেন বলে জানান তিনি। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার ছেলেকে উদ্ধার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। একপর্যায়ে তারা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।

রেহেনা বেগম আরও বলেন, ‘আমার ছেলে যদি অপরাধ করে, থাকে তাহলে তার শাস্তি হোক। কিন্তু যারা আমার ছেলেকে গুম করে আটকে রেখেছিল তাদেরও শাস্তি দিতে হবে।’

তবে এই ঘটনার সঙ্গে ‘জড়িত ন’ বলে দাবি করেছেন শের-ই- বাংলা হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ। তিনি বলেন, ‘সনেট ও প্রাঙ্গণ এ ঘটনার মূল হোতা। ওই শিক্ষার্থী জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি হয়েছেন। তাদের সঙ্গে চুক্তিতে কিছু টাকা বাকি থাকায় আমার পাশের রুমে নিয়ে আসে। ঘটনা জানার পরে আমি তাদের হল থেকে বের করে দেই। পরে প্রভোস্ট স্যার ফোন দিয়ে বলে তাদের ডেকে আনতে। যেহেতু আমি হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা এরপর তাদের ফোন দিয়ে প্রভোস্ট স্যারের মাধ্যমে ওই শিক্ষার্থীকে প্রশাসনের কাছে তুলে দেই। আমি এ ঘটনায় জড়িত নই।’

অপর দুই অভিযুক্ত মহিবুল মমিন সনেট ও শাকোয়ান সিদ্দিক ওরফে প্রাঙ্গণের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের জড়িত থাকার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন,‘আটকের ঘটনায় রাজু সম্পৃক্ত ছিল না। যেহেতু সে হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা, ঘটনা জানার পর সে ওই শিক্ষার্থীকে প্রশাসনের কাছে তুলে দিতে গিয়েছিল।’

মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি সন্দেহে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একজনকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। এ বিষয়ে একটি মামলা করা হবে। মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে’

এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, আটক শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি হয়েছেন বলে আমাদের কাছে স্বীকার করেছে। এ ঘটনায় তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে একটি মামলা করা হবে। মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে। তবে তাকে আটক করে কে বা কারা চাঁদা দাবি করেছে সেটা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার - dainik shiksha কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত - dainik shiksha উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে - dainik shiksha ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন - dainik shiksha সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের - dainik shiksha জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক - dainik shiksha মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0050461292266846