রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠনের পর থেকেই ক্যাম্পাস জুড়ে উত্তপ্ত অবস্থা বিরাজ করছে। নতুন কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারিকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কাঙ্ক্ষিত পদবঞ্চিত নেতারা। এদিকে আজকেই (২৪ অক্টোবর) ক্যাম্পাসে ঢুকবেন বলে ঘোষণা দিয়েছে নতুন কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারি। সংঘর্ষ এড়াতে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
গত শনিবার (২১ অক্টোবর) দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর পর মো. মোস্তাফিজুর রহমান বাবুকে সভাপতি ও আসাদুল্লা-হিল-গালিবকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩৯ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি প্রকাশ করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
কমিটি গঠনের পরদিনই নতুন প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন কাঙ্ক্ষিত পদ না পাওয়া শাহিনুল ইসলাম সরকার ডন, কাজী লিংকন, তাওহীদুল ইসলাম দূর্জয়সহ বেশ কয়েকজন নেতা। এদের মধ্যে সরকার ডন ও দূর্জয়কে নতুন কমিটির সহ-সভাপতি করা হয়েছে।
রবিবার (২২ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ্ হলে নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের কক্ষে ভাঙচুরও চালানো হয়। মারধর করা হয় সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী সন্দেহে এক কর্মীকে।
তবে কমিটি গঠনের দুই দিন পেরিয়ে গেলেও নতুন সভাপতি-সেক্রেটারির কোনো শোডাউন দেখা যায়নি। সদ্য দায়িত্ব পাওয়া সভাপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান বাবু ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব এখনও ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারেননি। নিজের কক্ষ ভাঙচুর করা হলেও মুখ খুলেননি তিনি। গণমাধ্যম কর্মীরা একাধিকবার তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।
এদিকে, রাবি ছাত্রলীগের নতুন সভাপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান বাবু ক্যাম্পাসে প্রবেশের বিষয়ে বলেন, ‘সাংগঠনিক সকল কাজ শেষ; আজ দুপুরের মধ্যে ক্যাম্পাসে ঢুকব।’
পদবঞ্চিত নেতাদের অবস্থান প্রসঙ্গে নতুন এই সভাপতি বলেন, ‘আমাদের অভিভাবক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ.এইচ.এম. খায়রুজ্জামান লিটন ভাইয়ের সম্মতিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক চমৎকার একটি কমিটি ঘোষণা করেছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই কমিটিকে স্বাগত জানিয়েছে। কতিপয় বিতর্কিত, পথভ্রষ্ট ছাত্রলীগের নেতা আমাদের নতুন কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে। তারা নবগঠিত কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার কে?’
তবে পদবঞ্চিত নেতা শাহিনুল ইসলাম সরকার ডন বলেছেন, ‘আমরা অবস্থান নিয়েছি, বিতর্কিত এই কমিটির সভাপতি-সেক্রেটারিকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেওয়া হবে না। এই কমিটিকে অবিলম্বে বিলুপ্ত ঘোষণা করে, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নতুন কমিটি প্রদান করতে হবে।’
ছাত্রলীগের দুই পক্ষের এমন মুখোমুখি অবস্থানের ফলে ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কাও করছেন কেউ কেউ। গতকাল (২৩ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বাড়তি পুলিশের উপস্থিতিও লক্ষ্য করা গেছে।
ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ‘ক্যাম্পাসে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। আমরাও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।’