দৈনিক শিক্ষাডটকম, বরিশাল : 'শেখের বেটি (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) মোগো কারেন্ট (বিদ্যুৎ) দিছে। বিভিন্ন ধরনের ভাতা দিছে। অ্যাহন এই অল্প একটু রাস্তা কইরা দিলেই মোরা খুশি!' মাত্র ছয়শ’ ফুট দৈর্ঘ্যের এ রাস্তাটির জন্য মোগো বাড়ির ছেলেমেয়েদের ভালো কোনো পরিবারে বিয়ে পর্যন্ত হচ্ছে না। প্রতিবার ভোট আসলেই চেয়ারম্যান ও মেম্বর প্রার্থীরা এই রাস্তা করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। জিতে গেলে তারা আর রাস্তার ধারে-কাছেও আসেন না।’
গতকাল সোমবার এই কথাগুলো বলছিলেন বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের পশ্চিম আস্কর গ্রামের গৃহবধূ বনলতা মণ্ডল।
এসময় একই এলাকার কৃষক বিশ্বনাথ মণ্ডল, প্রদীপ বিশ্বাস বলেন, উপজেলার পশ্চিম আস্কর ও দক্ষিণ নাঘিরপাড় গ্রামের শত শত বাসিন্দা ও ছেলে-মেয়েদের কাদা-পানি পেরিয়ে বিদ্যালয়ে যেতে হয় আলাদা পোশাক নিয়ে। বর্ষা মৌসুমে তাদের চলাচলের একমাত্র ভরসা নৌকা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাড়ি থেকে যে পোশাক পরে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের উদ্দেশে রওয়ানা হয়, তা কাদা-পানির কারণে পরার অযোগ্য হয়ে যায়। তাই সাথে নেওয়া লাগে আলাদা ড্রেস। সেগুলো পরেই ক্লাস করে ওইসব শিক্ষার্থীরা। এ যেন আলোর নিচে অন্ধকার! আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের পশ্চিম আস্কর ও দক্ষিণ নাঘিরপাড় গ্রামের সীমান্তবর্তী বিলমুখী মাত্র ৬০০ ফুট দৈর্ঘ্যের কাদা-পানির রাস্তার ঘটনা এটি।
সরেজমিন দেখা যায়, ওই রাস্তার জন্য শিক্ষার্থীদের যাতায়াত, কৃষিকাজ, কৃষিপণ্য পরিবহন, মুমূর্ষু রোগীদের চিকিৎসা সেবাসহ নানাবিধ ভোগান্তি পোহাতে হয় বাসিন্দাদের। গ্রামের বয়স্ক ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, শত বছর আগে তৎকালীন জমিদাররা প্রজাদের যাতায়াতের জন্য প্রায় তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ও ২৫ ফুট প্রস্থের হালোটের জমি বরাদ্দ দিয়েছেন। বর্তমানে ওই হালোটের জমি দখল করে নিয়েছেন স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি।
সরেজমিন আরো দেখা যায়, নাঘিরপাড় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী লিনা অধিকারী বই ও খাতার সাথে বাড়তি স্কুল ড্রেস নিয়ে স্কুলের উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছে। লিনা বলে, ‘আমার পরা পোশাক জল ও কাদায় ভিজে যায়। স্কুলে গিয়ে সঙ্গে নেওয়া ড্রেস পরে ক্লাস করবো।’
নাঘিরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী এনা মিস্ত্রী বলে, ‘রাস্তা না থাকার কারণে আমরা বর্ষা মৌসুমে স্কুলে যেতে পারি না।’
এ বিষয়ে বাগধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাবুল ভাট্টি বলেন, ‘আমার কাছে কেউ এই রাস্তার জন্য বলেননি। যেহেতু, আমি এখন জানতে পেরেছি, চলতি শুকনো মৌসুমে বোরো ধান কাঁটার পর জরুরিভিত্তিতে জনগুরুত্বপূর্ণ ওই রাস্তাটি নির্মাণ করবো।'