যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে যতক্ষণ পর্যন্ত বিচারের রায় না হবে, দোষী সাব্যস্ত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা জামায়াতকে দোষী বলতে পারবো না বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আজ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ল’রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন আইনমন্ত্রী।
নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতের সমাবেশের অনুমতির বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, সমাবেশের অনুমতি দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কেন তারা অনুমতি দিলো সেটার উত্তর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দিবে।
যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার বিষয় নিয়ে প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, জামায়াতকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচার করার জন্য আইন সংশোধন করার কথা আগে বলেছি। সেই প্রক্রিয়া এখনো চলমান। এই আইনটা কেবিনেটে কিছুদিনের মধ্যে যাবে।
তিনি আরও বলেন, বিচার করার পরে যতক্ষণ পর্যন্ত রায় না হয়, দোষী সাব্যস্ত না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত তো আমি বলতে পারবো না জামায়াত দোষী। বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হবে। আমরা এতদিন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যে বিচার করে এসেছি সেখান থেকে যে তথ্য-উপাত্ত পেয়েছি তাতে দেখা গেছে, যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামায়াতের বিচার করার যথেষ্ঠ তথ্য-উপাত্ত আছে। কিন্তু বিচার করার পরেই বলা যাবে তারা দোষী নাকি নির্দোষ। সেজন্য আমি মনে করি না এটা সাংঘর্ষিক।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ােকে প্রধানমন্ত্রীর মহানুভবতার কারণে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ উপবিধি ১-এ শর্ত অনুযায়ী সাজা স্থগিত রেখে মুক্তি দেয়া হয়েছে। যে শর্তগুলো দেয়া হয়েছে সেগুলো হলো- তিনি বাসায় থেকে চিকিৎসা নিবেন এবং বিদেশে যেতে পারবেন না।
তিনি যখনই গুরুতর অসুস্থ হয়েছেন তখনই এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। সুস্থ হয়ে আবার বাসায় ফিরে এসেছেন। এটাই প্রমাণ করে তিনি অসুস্থ এবং বাংলাদেশেই তার সুচিকিৎসা হওয়ার মতো ব্যবস্থা আছে। এর কোনো পরিবর্তন করার কথা আমি জানি না।
তিনি আরও বলেন, আমি এই গুজব শুনেছি যে খালেদা জিয়ার মুক্তির ফাইল নাকি আইন মন্ত্রণালয়ে চলে এসেছে। আমি স্পষ্টভাবে বলতে পারি- আমার মন্ত্রণালয়ে এরকম কোনো ফাইল আসে নাই। এবং আমি এটাও বলতে পারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও এরকম কোনো ফাইল উঠেছে আমি জানি না।
খালেদা জিয়ার সভা-সমাবেশে যাওয়ার কোন বাধা আছে কিনা এই বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, তিনি শর্তসাপেক্ষে মুক্ত আছেন। কি আবেদনের প্রেক্ষিতে তাকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। এটার পেছনে তো একটা ইতিহাস আছে। আবেদনটা হচ্ছে- তার ভাই আবেদন করেন- তার বোন খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। তার প্রেক্ষিতে তাকে যে দুর্নীতির মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে। সেই সাজা স্থগিত রেখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মহানুভবতার কারণে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ এর ১ ধারায় শর্তযুক্তভাবে সাজা স্থগিত রেখে মুক্তি দেয়া হয়। এখন তিনি যদি বলেন- সুস্থ তাহলে তাকে তার যে সাজা সেটা খাটার জন্য জেলখানায় যেতে হবে। তিনি যেই মুহূর্তে বলবেন সুস্থ-স্বাভাবিক সেই মুহূর্তে তার অসুস্থতার আবেদনটা আর থাকলো না। আর তিনি যে মুক্ত সেটার প্রমাণ হলো- তিনি যে এভার কেয়ার হাসপাতালে যান তাকে কিন্তু এখন সরকারের অনুমতি নিয়ে যেতে হয় না।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, সংবিধান অনুযায়ী খালেদা জিয়ার নির্বাচন করার কোন সুযোগ নেই। পাশাপাশি পলাতক তারেক রহমান একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি, তিনিও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে তিনি বলেন, সর্বোচ্চ আদালত অসাংবিধানিক ও অবৈধ ঘোষণা করায় সংবিধান থেকে কেয়ারটেকার সরকার বাতিল হয়ে যায়। সংসদে প্রতিনিধিত্ব আছে এমন রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে নির্বাচনকালীন ছোট সরকার গঠন হবে। আওয়ামী লীগ জনগণের কাছে যে অঙ্গীকার করেছিল, সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সে প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে।
মার্কিন ভিসা নীতির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে যখন আমার সাক্ষাৎ হয়েছে তখন তাকে আমি বলেছি- মার্কিন ভিসা নীতির কারণে অপমানিত হয়েছে বাংলাদেশ। সুষ্ঠুভাবে প্রয়োগ করলে আপত্তি নাই। কিন্তু শুধু একটা দলের জন্য ব্যবহার করলে আপত্তি আছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ল রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি আশুতোষ সরকার এবং সঞ্চালনা করেন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আহাম্মেদ সরোয়ার হোসেন ভূঁঞা।