রাজধানীর টিকাটুলীর শেরেবাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সদ্য সাবেক সভাপতি মো: রিয়াজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে আনীত দুর্নীতি ও হয়রানিসহ কোনো অভিযোগেরই প্রমাণ পায়নি তদন্ত কমিটি। তাকে সম্পূর্ণ নির্দোষ বলেছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের তদন্ত কমিটি। একইসঙ্গে সরকারি তদন্ত কাজে বাধা দেয়ায় প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র শিক্ষক হামিদা খাতুন, খণ্ডকালীন সিনিয়র শিক্ষক আকলিমা আক্তার ও সৈয়দা মেহনাজ নাইয়ারা, সহকারী শিক্ষক রাজিয়া সুলতানা, সিনিয়র শিক্ষক রেখা মন্ডল দীনা ও শরীরচর্চা শিক্ষক মো: সবুজ মিয়ার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকে সুপারিশ করেছে কমিটি।
মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড গঠিত তদন্ত কমিটি মঙ্গলবার তাদের প্রতিবেদন দাখিল করেন। কমিটির আহ্বায়ক ও বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মো: আবুল বাশার, সদস্য সচিব ও বোর্ডের উপ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (গোপনীয়) জাকির হোসেন এবং উপ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (সনদ) হেলাল উদ্দিন।
রিপোর্টের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, গভর্নিং বডির সদ্য সাবেক সভাপতি মো: রিয়াজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির কোনো প্রমাণক কমিটির কাছে উপস্থাপিত হয়নি। এছাড়া কলেজের ফান্ড লটুপাটেরও কোনো সত্যতা মেলেনি। তার সময়ে কলেজের ফান্ড বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়। বিষয়টি গভর্নিং বডির সদ্য সাবেক সভাপতিকে সম্পূর্ণভাবে সামাজিক, রাজনৈতিক, মানসিক ও পারিবারিকভাবে হেয় করার লক্ষ্যে স্বার্থান্বেষী কতিপয় শিক্ষক ও কোনো কুচক্রী মহলের চক্রান্তের বহি:প্রকাশ বলে তদন্ত দলের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মো: রিয়াজ উদ্দিন রাজধানীর টিকাটুলির শেরে বাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয় গভর্নিং বডির সভাপতি হিসেবে দায়িত্বপালনকালে কলেজের ফান্ড তছরুপ করেছেন বলে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও অধিদপ্তরে অভিযোগ দেয় কলেজের কিছু শিক্ষক। তিনি শিক্ষকদের যৌন হয়রানি করেছেন বলেও অভিযোগে দাবি করা হয়েছিলো। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে রিয়াজ গভর্নিং বডির সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি নেন। পরে বিষয়টি নিয়ে কিছু গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে রিয়াজকে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে শোকজের জবাব দিতে বলা হয়। তবে রিয়াজ বরাবরই এসব অস্বীকার করে আসছিলেন। অবশেষে তদন্ত রিপোর্টেও তাকে নির্দোষ পাওয়া গেলো।
এদিকে রিয়াজ উদ্দিনের পদত্যাগের পরে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটিকে) গভর্নিং বডির সভাপতির দায়িত্ব দেয় শিক্ষা বোর্ড। এর আগে রিয়াজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে ১৩ কোটি টাকার এফিডিআর আত্মসাৎ, যৌন হয়রানিসহ কয়েকটি অভিযোগ এনে স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদের কাছে লিখিত আবেদন করেন প্রতিষ্ঠানটির ছয়জন শিক্ষক।
শিক্ষা বোর্ডের তদন্ত কমিটি সরেজমিনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. তোফায়েল আহমেদ ভূইয়াসহ ১৮ জন শিক্ষকের লিখিত ও মৌখিক বক্তব্য গ্রহণ করেন।
শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের বিষয়ে বোর্ডের তদন্ত কমিটি তার পর্যবেক্ষণে বলেছে, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ বিষয়সহ স্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ততা রয়েছে এবং বিভিন্ন সময়ে প্রাক্তন সভাপতিদের মাধ্যমে শিক্ষকরা নিয়োগপ্রাপ্ত হন। রিয়াজ উদ্দিন বিধি সম্মতভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় উদ্যোগী হলে প্রতিষ্ঠানের কতিপয় শিক্ষক এবং স্থানীয় কিছু ব্যক্তির প্রতিহিংসার শিকার হন বলে তদন্ত দল মনে করে।
এদিকে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক হামিদা খাতুন, আকলিমা আক্তার, সৈয়দা মেহনাজ নাইয়ারা, রাজিয়া সুলতানা, রেখা মণ্ডল দীনা ও মোঃ সবুজ মিয়া তদন্ত কমিটির চাহিদামত নিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য দিতে বাধা দিয়েছেন বলে তদন্ত কমিটির কাছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ লিখিতভাবে জানিয়েছেন। তদন্ত কমিটি এ বাধা দেয়ার বিষয়টি সুস্পষ্টভাবেই সরকারি কাজে বাধার সামিল উল্লেখ করার পাশাপাশি তাদের নিয়োগ বিধিসম্মত হয়নি বলে প্রাথমিকভাবে তাদের কাছে মনে হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন। কমিটি তার সুপারিশে এ ছয়জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে অনুরোধ করেছে।
জানতে চাইলে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রিয়াজ উদ্দিন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘শুনেছি তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করেছে। কিন্তু আমি এখনও প্রতিবেদনের বিষয়ে কিছু শুনিনি।’