রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রে যেভাবে ব্যবহার হবে পারমাণবিক জ্বালানি - দৈনিকশিক্ষা

রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রে যেভাবে ব্যবহার হবে পারমাণবিক জ্বালানি

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বাংলাদেশের পাবনা জেলার রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য 'ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল' বা ইউরেনিয়াম রাশিয়া থেকে রূপপুরে এসে পৌঁছেছে। নিউক্লিয়ার ফুয়েল বা পারমাণবিক জ্বালানি যাতে সতর্কতার সাথে এবং নির্বিঘ্নে পৌঁছাতে পারে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। প্রশ্ন হচ্ছে -পারমাণবিক জ্বালানি আসলে কেমন? এটি কতটা নিরাপদ এবং এর ব্যবস্থাপনা হয় কীভাবে?  

পারমাণবিক জ্বালানি কী?

পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি তেল, গ্যাস ও কয়লার মতো জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে ভিন্ন। এটি মূলত ইউরেনিয়াম- ২৩৫ এর সমৃদ্ধ ধাতব পদার্থ।খনির আকরিক থেকে নানা প্রক্রিয়া করে তৈরি করা হয় ইউরেনিয়ামের এই জ্বালানি। 

পারমাণবিক জ্বালানি শক্তির মূল উপাদান হলো এই ক্ষুদ্র আকৃতির ইউরেনিয়াম পেলেট। এ রকম কয়েকশ পেলেট একটি নিশ্ছিদ্র ধাতব টিউবে ঢোকানো থাকে।

এই ধাতব টিউবই ফুয়েল রড হিসেবে পরিচিত।অনেকগুলো ফুয়েল রড একসঙ্গে যুক্তকরে তৈরি হয় ফুয়েল অ্যাসেম্বলি।একটি ফুয়েল এসেম্বলি লম্বায় সাড়ে তিন থেকে সাড়ে চার মিটার পর্যন্ত হয়।

আর এ রকম ফুয়েল অ্যাসেম্বলি জ্বালানি হিসেবে রিঅ্যাক্টরে লোড করা হয়। বাংলাদেশে ১২শ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি চুল্লিতে এমন ১৬৩টিফুয়েল এসেম্বলি লোড করা হবে।

কীভাবে কাজ করে?

গ্যাস, কয়লা বা তেল যেভাবে পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় নিউক্লিয়ার ফুয়েল পোড়ানো হয় পারমাণবিক চুল্লিতে ফিশান বিক্রিয়ার মাধ্যমে যেখানে ইউরেনিয়ামের নিউক্লিয়াস বিভাজন ঘটে।এর ফলে প্রচুর তাপ শক্তি উৎপন্ন হয়।

এই তাপ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে পানিকে বাষ্পে পরিণত করে টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন করে। পারমাণবিক চুল্লিতে এটি একধরনের নিয়ন্ত্রিত চেইন রিয়্যাকশন।

ব্যবহৃত পারমাণবিক জ্বালানি থেকে আবার ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি পাওয়া যায় বিধায় অনেকে এই জ্বালানিকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি হিসেবেও অভিহিত করেন।

তেল গ্যাস বা কয়লার মতো পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি থেকে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর গ্যাস নির্গমনের কোনো সুযোগ নেই। এটিকে নির্ভরযোগ্য ও সাশ্রয়ী ও নির্মল বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রযুক্তি বলা হয়।

তবে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ঘটলে এর থেকে যে ক্ষতিকর তেজস্ক্রিয়তা ছড়াতে পারে সেটি প্রাণ প্রকৃতির জন্য দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির কারণ হয়। কারণ এই তেজস্ক্রিয়তা বছরের পর বছর ধরে ক্রিয়াশীল থাকে।

জ্বালানির ক্ষমতা কেমন?

নিউক্লিয়ার ফুয়েলের শক্তি অন্যান্য জ্বালানির তুলনায় অনেক গুণ বেশি। এই ক্ষুদ্র আকারের মাত্র সাড়ে চার গ্রাম ওজনের একটি ইউরেনিয়াম পেলেট যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে তার জন্য কয়লা লাগবে ৪শ কেজি , গ্যাস লাগবে ৩৬০ ঘনমিটার।

আর ডিজেলের মতো জ্বালানি পোড়াতে হবে সাড়ে তিনশ কেজি। অর্থাৎ এক কেজি নিউক্লিয়ার জ্বালানির সক্ষমতা ৬০ টন জ্বালানি তেল আর ১শ টন কয়লার সমান।

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা ভয় কাজ করে।তাই নিরাপত্তাই হলো পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সবচেয়ে আলোচিত এবং উদ্বেগের ইস্যু।

এ কারণে পারমাণবিক জ্বালানি এমনভাবে তৈরি,সংরক্ষণ, পরিবহন এবং ব্যবহার হয় যাতে এটি থেকে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে না পড়ে। 

এছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য স্থাপিত নিউক্লিয়ার রিয়্যাক্টরের বহু স্তর নিরাপত্তার প্রথম ধাপটি হলো ফুয়েল পেলেট। এই ফুয়েল পেলেট সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হয় ।

ফলে তেজস্ক্রিয়তা পেলেটের ভেতরেই আবদ্ধ থাকে। এছাড়া দ্বিতীয় ধাপে এই পেলেট জিরকোনিয়াম অ্যালয়ের তৈরি আস্তরণ দ্বারা মোড়ানো থাকে। কোনো কারণে তেজস্ক্রিয়তা ফুয়েল পেলেট থেকে বের হলেও আস্তরণ ভেদ করতে পারে না।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কীভাবে?

পারমাণবিক বিদু্ৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত নিউক্লিয়ার ফুয়েল থেকে তেজস্ক্রিয়তা ছড়ানোর ঝুঁকি থাকে। তাই বিশেষ পদ্ধতিতে এটি পরিবেশ ও মানুষের নাগালের বাইরে রাখতে হয়।

আন্তর্জাতিক গাইডলাইন অনুযায়ী প্রতিটি পারমানবিক চুল্লীতে ব্যবহৃত ফুয়েল রডগুলো নিরাপদে সংরক্ষণ করার নিশ্চয়তা দিতে হয়।

ইউরেনিয়াম জ্বালানির তেজস্ক্রিয়তা যাতে কোনো অবস্থাতেই পরিবেশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সে জন্য শুরু থেকেই বাংলাদেশ নিরাপত্তার দিকটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে বলেই দাবি করে আসছে।

বাংলাদেশ উচ্চমানের নিউক্লিয়ার বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করেছে। চুক্তি মোতাবেক উচ্চমানের নিউক্লিয়ার জ্বালানি বর্জ্য অর্থাৎ স্পেন্ট ফুয়েল বাংলাদেশ থেকে রাশিয়া ফিরিয়ে নেবে।

রুশ কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী দীর্ঘস্থায়ী নিরাপত্তার স্বার্থে স্পেন্ট ফুয়েল রি-প্রসেস করার পর চূড়ান্ত পর্যায়ে উচ্চমানের তেজস্ক্রিয় বর্জ্য জনমানবশূন্য এলাকায় মাটির৪০০ মিটার গভীরে পুতে ফেলা হয়।

বাংলাদেশে জ্বালানির দাম কত?

রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের একেকটি ইউনিটে ১৬৩ টি ফুয়েল অ্যাসেম্বলি লোড করা হবে। দুইটি চুল্লিতে ৩২৬টিফুয়েল অ্যাসেম্বলিতে থাকবে ৮০ টন ইউরেনিয়াম জ্বালানি।

চুক্তির আওতার মধ্যে প্রথম তিন বছরের জ্বালানি রাশিয়া থেকে আসবে। এরপর প্রতি ১৮ মাস পর পর এক তৃতীয়াংশ ফুয়েল অ্যাসেম্বলি বদলানো হবে।

এই জ্বালানির দাম নিয়ে বাংলাদেশ এবং রাশিয়ার পক্ষ থেকে কোনো হিসেব দেয়া হয় না। তবে গবেষকদের হিসেবে বর্তমানে একেকটি ফুয়েল অ্যাসেম্বলির দাম দেড় থেকে দুই মিলিয়ন ডলার।

সে হিসেবে বাজারদর অনুযায়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুর তিন বছর পর থেকে প্রতি দেড় বছরে নিউক্লিয়ার ফুয়েলের জন্য খরচ হতে পারে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা।

এদিকে সমালোচনা হলো বাংলাদেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েলের জন্য একমাত্র দেশ রাশিয়ার ওপরই নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে বর্তমান বিশ্ব রাজনীতি এবং জ্বালানি নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বহুমুখী উৎস থেকে নিউক্লিয়ার জ্বালানি সংগ্রহের সুযোগ রাখা দরকার।

সূত্র : বিবিসি বাংলা

যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার - dainik shiksha কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত - dainik shiksha উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে - dainik shiksha ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন - dainik shiksha সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের - dainik shiksha জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক - dainik shiksha মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036649703979492